ডিসেম্বরে যশোর পৌরসভার নির্বাচন হচ্ছে না

0

আকরামুজ্জামান ॥ মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও নির্বাচন কমিশন ঘোষিত আগামী ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হচ্ছে না যশোর পৌরসভার নির্বাচন। সম্প্রতি পৌর এলাকার সীমানা বৃদ্ধির পর এলাকা নির্ধারণ ও নতুন ভোটার তালিকা প্রস্তুত করতে বছরাধিকাল লেগে যেতে পারে বলে ধারণা নির্বাচন অফিসের। তবে কবে নাগাদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। যশোর পৌরসভার বর্তমান পরিষদের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। নিয়ম অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। গত ২৩ আগস্ট এক সভায় নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বর মাসে সারাদেশের আড়াইশ’ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতি গ্রহনের নির্দেশনা দেন। ওই তালিকায় যশোর পৌরসভার নামও রয়েছে। কিন্তু আগস্ট মাসের প্রথম দিকে যশোর শহরতলীর কয়েকটি ইউনিয়নযুক্ত করে বাড়ানো হয় যশোর পৌরসভার আয়তন। সীমানা বাড়ানোর সিদ্ধান্তের উপর আপত্তি না থাকায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে গেজেট প্রকাশ করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে যশোর পৌরসভার বর্তমান ১৪.৭২ বর্গ কিলোমিটারের সাথে যোগ হচ্ছে আরও ৭ বর্গ কিলোমিটার হয়েছে। নতুন সীমানায় পৌরসভা যুক্ত হয়েছে পুরো উপশহর ইউনিয়ন। পাশাপাশি চাঁচড়া এলাকা এবং রামনগর, ফতেপুর, নওয়াপাড়া ও আরবপুর ইউনিয়নের কিছু এলাকা।
ওই গেজেট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে ২৪ আগস্ট যশোর পৌরসভার সীমানা বাড়িয়ে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের অভিপ্রায় ব্যক্ত করে প্রথম একটি গেজেট প্রকাশ হয়। স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯ অনুযায়ী স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এই গেজেট প্রকাশ করে। এ বিষয়ে কোন আপত্তি থাকলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের লিখিতভাবে জানানো ও শুনানিতে অংশ নিতে বলা হয়। এসব প্রক্রিয়া শেষে যশোর জেলা প্রশাসক সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ আকারে পাঠান। সেখানে উল্লেখ করা হয় এ বিষয়ে কারোর আপত্তি না থাকায় চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করতে কোনো সমস্যা নেই। আর সেই সুপারিশের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় যশোর পৌরসভার সীমানা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করেছে। তবে নতুন অন্তর্ভুক্ত হওয়া এলাকার সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের দাবি তারা লিখিতভাবে আপত্তি জানানোর পর তা শুনানি ও নিষ্পত্তি হওয়ার পরও গেজেটে তা উল্লেখ করা হয়নি।
ইসি সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর ২৩৪টি পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করে ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহন করা হয়। এবারও ওই তালিকা ধরে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। মাঠপর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে ইসি সচিবালয়। ইতোমধ্যে পৌরসভার বর্তমান পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ, প্রথম সভার তারিখ ও জনপ্রতিনিধিদের শপথগ্রহণের তারিখ সংগ্রহ করে কমিশনে পাঠাচ্ছেন বিভিন্ন জেলার নির্বাচন কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জেলা থেকে ইসি সচিবালয় এই তথ্য সংগ্রহ করেছে। সেই হিসেবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সুপ্রাচীন পৌরসভা যশোরের নির্বাচনও ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে নির্ধারিত সময়ে ডিসেম্বরে যশোর পৌরসভার নির্বাচন যে অনুষ্ঠিত হচ্ছেনা তা অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জেলা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হুমায়ূন কবীর বলেন, যশোর পৌরসভার সীমান বৃদ্ধির গেজেট প্রকাশ হওয়ায় ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজন নিয়ে অনেকটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সীমানা বৃদ্ধির বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয়। আর এটি পুরোটাই নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে রয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন একজন লোক নিয়োগ করে বর্ধিত অংশ কোন কোন ওয়ার্ডের ভেতর অন্তর্ভুক্ত হবে তা নির্ধারণ করবেন। এরপর আমাদের উদ্যোগে ভোটার তালিকা তৈরি করে তা পূনর্বিন্যাস করা হবে। তবে নির্বাচন কমিশন এসব প্রক্রিয়া শুরু করবে তা নিয়ে ওয়াকিবহাল নয় এই নির্বাচন কর্মকর্তা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পৌরসভার নির্বাচনের বিষয়টি এখন কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত। ফলে কবে নাগাদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তা বলা মুশকিল। কারণ এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অনেক সময় লাগবে। সেটি এক বছর না দুই বছর তা বলা যাবেনা। কারণ কাজগুলো অনেক জটিল। সমাধান করতে সময় লাগবে। এদিকে গেজেটে সীমানা বৃদ্ধির ওপর আপত্তি না থাকার বিষয়টি উল্লেখ থাকায় এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নতুন অন্তর্ভূক্ত হওয়া ইউনিয়নগুলোর চেয়ারম্যানরা। তাদের দাবি এ বিষয়ে আপত্তি ও শুনানি হওয়া সত্ত্বেও গেজেটে তা উল্লেখ করা হয়নি। এটিকে কোনো মহলের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন তারা। এ বিষয়ে যশোর সদর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানান। তিনি বলেন, পৌরসভার সীমানা বৃদ্ধি নিয়ে ২০১৯ সালে ২৪ আগস্ট যশোর পৌরসভার সীমানা বাড়িয়ে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের অভিপ্রায় ব্যক্ত করে প্রথম একটি গেজেট প্রকাশ হয়। এ সময় সীমানা বৃদ্ধি নিয়ে কারোর আপত্তি আছে কীনা সে বিষয়ে জানানোর জন্য নির্দিষ্ট সময় বেধে দেয়া হয়। ওই সময়ের মধ্যে আমিসহ যশোর সদরের চারটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপত্তি জানান। সে সময় সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক মো. শফিউল আরিফ শুনানিতে অংশ নিয়ে আমাদের আবেদন খারিজ করে দেন। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এসব বিষয় উল্লেখ না করেই কোনো শুনানি বা আপত্তি জানানো হয়নি মর্মে এক তরফা গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। ব্রিটিশ শাসিত অবিভক্ত ভারতে গোড়াপত্তন হয় যশোর পৌরসভার। ১৮৬৪ সালে যশোর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই অর্থে যশোর শহর দেড়শ বছরের বেশি প্রাচীণ। কিন্তু দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানেও কখনও যশোর পৌরসভার আয়তন বাড়েনি। এই প্রথম সীমানা বাড়িয়ে বিস্তৃত হচ্ছে পৌর শহরের আয়তন। যশোর পৌর এলাকার বর্তমান আয়তন সাড়ে ১৪ বর্গ কিলোমিটারের একটু বেশি। তবে এবার বেড়েছে এর আয়তন। শহর সংলগ্ন ৬টি ইউনিয়নের ৭ বর্গ কিলোমিটারের কিছু বেশি অংশ পৌর এলাকায় যুক্ত করা হয়েছে।