যশোর বাঘারপাড়া উপজেলার চেয়ারম্যান কাজলসহ ৪ জন হবিগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত, আহত তিন

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম কাজলসহ ৪ জন। এ সময় আরও ৩ জন আহত হন। গতকাল সোমবার বিকেলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার নয়াপাড়া নামক স্থানে ট্রাক ও পাজেরো জিপের মুখোমুখি সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে এক নারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে স্থানীয় সাংবাদিকরা নিশ্চিত করেছেন।
শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ওসি তৌফিকুল আলম জানান, বিকেল তিনটার দিকে সিলেট থেকে ঢাকাগামী একটি পাজেরো জিপ (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-২০১৫) নয়াপাড়া এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে জিপে থাকা ২ জন পুরুষ ঘটনাস্থলেই মারা যান। মাধবপুর ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আহত ৩ জনকে উদ্ধার করে মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দু’জনকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত ৪ জনের মধ্যে ৩ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হচ্ছেন-যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জামদিয়া ইউনিয়নের করিমপুর গ্রামের ইউছুফ আলীর ছেলে নাজমুল ইসলাম কাজল, একই গ্রামের আরিফুল ইসলাম ও রাজধানী ঢাকার তালতলা এলাকার সুমন মিয়ার মেয়ে আঁখি (২০)। তবে নিহত অপর একজনের পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেনি সাংবাদিক ও পুলিশ। আহত ৩ জনের মধ্যে জিপে থাকা মাগরিফাত মিম ওরফে নওরিনও ঢাকার তালতলার বাসিন্দা।
ঘটনার পর ঢাকা সিলেট মহাসড়কের দু পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে মাধবপুর ফায়ার সার্ভিসের একদল কর্মী ট্রাকের নিচে ঢুকে পড়া পাজেরো জিপ কেটে হতাহতদের উদ্ধার করেন। শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ লাশগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের হবিগঞ্জ প্রতিনিধি চৌধুরী মো. ফরিয়াদ বলেন, হতাহতরা এখন হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে আছেন। নিহতদের ময়নাতদন্তের প্রস্তুতি চলছে। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখছে হাইওয়ে পুলিশ।
এদিকে মর্মান্তিক এ সড়ক দুর্ঘটনার খবর গতকাল সন্ধ্যার কিছু আগে বাঘারপাড়া এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এসময় মানুষ ঘটনার কারণ ও সত্যতা নিশ্চিতে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করতে থাকেন। তবে কী কারণে উপজেলা চেয়ারম্যান কাজল হবিগঞ্জে গিয়েছিলেন এবং কারা ওই গাড়িতে ছিলেন তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি। তবে ঘনিষ্ঠ কয়েকজন রাজনীতিক বলেছেন, তিনি একাধারে জনপ্রতিনিধি ও প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদারও ছিলেন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় মেগা প্রকল্পের কাজের সাথে যুক্ত আছে তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এসব কাজের তদারকি ও দেখভালের জন্য প্রায়ই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে চলতে হতো তাকে। এসব বিষয়ে জানতে তার পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও কেউ ফোন রিসিভ করেননি।
নাজমুল ইসলাম কাজল বাঘারপাড়া আওয়ামী লীগের একজন জনপ্রিয় ও বলিষ্ঠ নেতা ছিলেন। তিনি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জামদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। বিগত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে ভোট করার জন্য মনোনয়ন সংগ্রহ করেন। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। যে কারণে ক্ষুদ্ধ হয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে তিনি জনগণের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেন। বিশেষ করে রাজনীতির প্রতিহিংসার চরিত্রের মানসিকতা থেকে তিনি নিজেকে দূরে রাখতেন। দলমত নির্বিশেষে প্রতিটি লোকই তার কাছে আশ্রয় পেতেন। যে কারণে আওয়ামী লীগের রাজনীতির বাইরেও তার জনপ্রিয়তা ছিল উল্লেখ করার মতো। এদিকে নাজমুল ইসলাম কাজলের অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন বাঘারপাড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু তাহের সিদ্দিকী।