যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ৩ বন্দি হত্যা মামলা: সেদিনের পৈশাচিক নির্যাতনের ভয়াবহ বর্ণনা দিলো আরও তিন বন্দি কিশোর

0

মীর মঈন হোসেন মুসা ॥ প্রধান নিরাপত্তা প্রহরী নুর ইসলামকে মারধরের ঘটনায় জড়িত যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের বন্দিদের কাছে জরিমানা হিসেবে ৫ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন উপ-তত্ত্বাবধায়ক (সাময়িক বরখাস্ত) মাসুম বিল্লাহ। নইলে সকলকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়েছিল। এর পরপরই কর্মকর্তারা বাছাই করে ১৮ বন্দিকে অফিস কক্ষে ডেকে এনে নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন চালান। মুখ ও হাত বেঁধে অনুগত বন্দিদের দিয়ে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। তাছাড়া দুজন কর্মকর্তা নিজেরাও ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে তাদের পেটান। নির্যাতনের শিকার আরও ৩ বন্দির আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে সেদিনের সেই পৈশাচিক নির্যাতনের এমনই ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। গতকাল সোমবার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুদ্দীন হোসেনের আদালতে তারা সাক্ষী হিসেবে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। গতকাল দ্বিতীয় দিনে যারা আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে তারা হচ্ছে-গোপালগঞ্জের মকসেদপুর উপজেলার উজানী গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে পলাশ, নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বালশা গ্রামের মিলনের ছেলে পলাশ ও ভারতের কুচবিহার জেলা সদরের (দক্ষিণাঞ্চল) ৪১ নম্বর রোডের মৃত বিল্লাল খানের ছেলে নাঈম খান।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, নির্যাতনের শিকার ওই ৩ বন্দির জবানবন্দি থেকে জানা যায়, চুল কাটাকে কেন্দ্র করে প্রধান নিরাপত্তা প্রহরীর সাথে লালমনিরহাটের হৃদয় নামে এক বন্দির গোলাযোগ হয়। এর জের ধরে গত ৩ আগস্ট তারা কয়েকজন মিলে প্রধান নিরাপত্তা প্রহরীকে মারধর করেছিল। পুলিশ সদস্যরা সেদিন এ ঘটনা মীমাংসা করে দেন। কিন্তু শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্মকর্তারা (বন্দিদের ভাষায় স্যারেরা) জড়িত বন্দিদের সাজা দেওয়ার জন্য ১৮ জনকে বাছাই করেন। গত ১৩ আগস্ট ওই ১৮ জনকে অফিস কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের মারধরের জন্য অনুগত কয়েকজন বন্দি কিশোরকে এর আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। অনুগত এই বন্দি কিশোররা হচ্ছে-হুমাইদ, মোহাম্মদ আলী, রিফাত, মনোয়ার, পলাশ (আসামি পলাশ), আনিস, তুহিন প্রমুখ। এ সময় উপ-তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহ প্রধান নিরাপত্তা প্রহরীকে মারধরের জন্য জড়িত বন্দি কিশোরদেরকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে বলে জানিয়েছিলেন। নইতো তাদেরকে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকিও দেন তিনি। এরপর জানালার গ্রিলের ভেতর দিয়ে দুই হাত বের করে বেঁধে, মুখ বেঁধে ১৮ বন্দিকে মারধর করা হয়। কর্মকর্তাদের মধ্যে মাসুম বিল্লাহ ও ফিজিক্যাল ইনসট্রাক্টর একেএম শাহানুর আলম ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে তাদের পেটান। তাদের অনুগত বন্দিরা ক্রিকেটের স্ট্যাম্প, কাঠের চলা, গাছের ডাল, সুপারি গাছের বাটাম, এসএস পাইপ ইত্যাদি দিয়ে ইচ্ছেমতো পেটায়। নির্যাতনের ফলে কয়েকজন জ্ঞান হারিয়েও ফেলেছিল। সুস্থ হওয়ার পর বন্দিরা জানতে পারে তাদের মধ্যে ৩ জন মারা গেছে। উল্লেখ্য, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ৩ বন্দি কিশোর হত্যা মামলায় গত ৬ সেপ্টেম্বর রোববার থেকে নির্যাতিত বন্দিদের আদালতে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি গ্রহণ শুরু হয়েছে। প্রথমদিন ৩ জন এবং সোমবার দ্বিতীয়দিন আরও তিনজনের জবানবন্দি গ্রহণ করা হলো আদালতে। বাকি ৯ জন বন্দি এভাবে পর্যায়ক্রমে আদালতে জবানবন্দি প্রদান করবে বলে সূত্র জানিয়েছে। গত ১৩ আগস্ট যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের বন্দিদের ওপর নির্যাতনে ৩ জন নিহত ও ১৫ জন আহত হয়।