যশোরে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বিপুলের কোটি কোটি টাকার সম্পদের উৎসের তদন্ত চায় ছাত্রলীগ

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুলের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন পৌর ও সদর উপজেলার ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ। গতকাল সোমবার দুপুরে প্রেসকাব যশোরে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলন থেকে বিপুলের হঠাৎ কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হওয়ার বিষয়টি তদন্তের দাবি জানান নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন যশোর সদর উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক এম এম রবিউল ইসলাম। এসময় বিপুলের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করাসহ মদ, জুয়া, ছাত্রলীগ নেতা হত্যাকান্ড, লটারির নামে প্রতারণা, ভবনের ফোর দখল, মেলায় অশ্লীল নৃত্য, মদ-জুয়া, মাদকের আসর বসানোসহ সুস্থ সংস্কৃতি ধ্বংস করে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়ার অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, পৌর ছাত্রলীগের আহবায়ক মেহেদী হাসান রনি, সদর উপজেলা শাখার যুগ্ম আহবায়ক মোমেন হোসেন, পৌর শাখার যুগ্ম আহবায়ক সালাউদ্দীন কবীর পিয়াস, এস এম জাবেদ উদ্দীন প্রমুখ। তবে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আনোয়ার হোসেন বিপুল। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করাসহ বহু অপকর্মের হোতা যশোরের রাজনীতিতে বয়কট হওয়া আনোয়ার হোসেন বিপুলের কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে এ সংবাদ সম্মেলন। গত ৩১ আগস্ট যশোর শহরের দড়াটানা ভৈরব চত্বরে যশোর সদর ও পৌর ছাত্রলীগের ব্যানার ব্যবহার করে বহু অপকর্মের হোতা আনোয়ার হোসেন বিপুল সংগঠনকে বিতর্কিত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিডিও কনফারেন্স ও শোকসভা অনুষ্ঠানে যশোর সদর ও পৌর ছাত্রলীগের আহবায়ক, যুগ্ম আহবায়কদের সাথে আলোচনা ছাড়াই শ্রমিক সদস্য (যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়ন) রেজওয়ান হোসেন মিথুনকে অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের নেতা পরিচয়ে সভাপতি করা হয়। যা সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য আনোয়ার হোসেন বিপুল করেছে। বিপুল প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে একজন সংসদ সদস্যকে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রকাশ ও প্রচার করেছে। যা উচ্চমাত্রার তোষামোদি ও নিন্দনীয় এবং সংগঠন বিরোধী ও সাংঘর্ষিক। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটি বিষয়টি অবহিত।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘আনোয়ার হোসেন বিপুল ছাত্রলীগের সাবেক হয়েও নিজের স্বার্থে ছাত্রলীগকে ব্যবহারের চেষ্টা করে যাচ্ছে। যখন বর্তমানরা তার এই হীন স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্য বুঝে তাকে বয়কট করেছে তখন সে নানাভাবে তাদেরকে হয়রানি করে যাচ্ছে। বর্তমানে সে কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে গেছে। ছাত্রলীগ পরিচয় ব্যবহার করে সে নানা অপকর্ম ও অবৈধ ব্যবসা করে এই অর্থ উপার্জন করেছে। এই অপকর্ম ঢাকতে হুমকি ধামকি দিয়ে শহরের গাড়ীখানা আওয়ামীলীগ অফিসের সামনে নদী বাংলা কাশেম টাওয়ারের কয়েকটি ফোর দখলে নিয়ে সে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ফাতেমা টেক সলিউশন নামে ব্যবসা করছে। তার এই ব্যবসার অন্তরালে কী হচ্ছে তা সাংবাদিকরা খোঁজ নিলে পরিস্কার হয়ে যাবেন।’ এসব বিষয়ে সষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবী ছাত্র রিয়াদ হত্যা মামলায় বিপুলসহ ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার নামে মামলা হয়। আমরা যতদূর জানি অন্যরা এই ঘটনায় কিছু না জানলেও বিপুলের সাথে থাকার কারণে তারা ফেঁসে যায়। অথচ সচতুর বিপুল কৌশলে চার্জশিট থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করলেও অন্যরা এখনও ওই মিথ্যা অপবাদে ঝুলছে।’ সংবাদ সম্মেলনে তার সঙ্গীদের সকল অবৈধ ব্যবসার মদদদাতা উল্লেখ করে বলা হয়, ‘লটারির নামে প্রতারণা, সাগরদাঁড়িতে মধু মেলায় অশ্লীল নৃত্য, জুয়া, মাদকের আসর বসানোসহ সুস্থ সংস্কৃতি ধ্বংস করে বিপুল লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।’ আনোয়ার হোসেন বিপুলকে ছাত্রলীগ নিয়ে না খেলতে সতর্ক করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যশোর ছাত্রলীগ এটা আর বরদাস্ত করবে না। নেতৃবৃন্দ আনোয়ার হোসেন বিপুলের কর্মকান্ড তদন্ত করে তাকে আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান। এদিকে এসব অভিযোগের বিষয়ে আনোয়ার হোসেন বিপুল বলেন, ‘যে ভবনে অফিস সে ভবনটি আমার মামার। অফিসের ভাড়া দেওয়া হয়। যা ওরা জানে না। ওরা মিথ্যা প্রচার করছে। রিয়াদ হত্যাকান্ডের বিষয়ে সিআইডি তদন্ত করে এই চার্জশিট দিয়েছে।’ প্রসঙ্গত, গত রোববার দুপুরে আনোয়ার হোসেন বিপুল প্রেসকাব যশোরে যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের বিরুদ্ধে হত্যা পরিকল্পনার অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেন।