যশোরে পেঁয়াজের বাজারে কৃত্রিম সংকট চার দিনেই কেজিতে বাড়লো ১৫ টাকা

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন ॥ গত বছরের মত হঠাৎ করে আবারো পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। মাত্র চার দিনের ব্যবধানে যশোর বড়বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজে বেড়েছে ১৫ টাকা, আর ভারতীয় পেঁয়াজে ৫ টাকা। আমদানিকারকরা বলছেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে পেয়াঁজের দাম বেড়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিমত, এই সুযোগে মজুতদাররা দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। অবশ্য বাণিজ্য সচিব বলেছেন তারা এবার খুব সতর্ক আছেন।
গতকাল সোমবার বড়বাজারে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আর ভারতীয় আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা। মাত্র চার দিন আগেও এই বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৪৫ টাকা আর ভারতীয় পেঁয়াজ ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানিকারক সাতক্ষীরার আবু জাফর গতকাল সোমবার এ প্রতিবেদককে বলেন, সম্প্রতি ভারতে বন্যার কারণে পেঁয়াজের সংকট দেখা দিয়েছিল, সে কারণে স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছিল। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে, দাম কমতে শুরু করেছে।
এদিকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বাড়তি হওয়ায় দেশের বাজারে এর অশুভ প্রভাব পড়েছে। মজুতদাররা হাট-বাজারে পাইকারি দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে বাধ্য হয়ে বাড়তি দাম দিয়ে খুচরা ব্যবসায়ী এবং ভোক্তারা পেঁয়াজ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। বড়বাজার এইচএমএম রোডের পাইকারি ব্যবসায়ী ‘নিউ মদিনা ভাণ্ডার’ এর স্বত্বাধিকারী শেখ জিয়া বলেন, তিনি গতকাল সোমবার তার আড়তে দেশি পেঁয়াজ পাইকারি মানভেদে ৪৬ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। ভারতীয় আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন ৩৫ টাকা। বড়বাজার হাটখোলা রোডের ‘নোয়াখালী ভান্ডার’ এর স্বত্বাধিকারী আলমগীর কবির বলেন, হঠাৎ করেই পাইকারি ব্যবসায়ীরা হাটবাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। পেঁয়াজের যথেষ্ট মজুদ আছে। এক শ্রেণির অসাধু মজুতদাররা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন। এদিকে,বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দীন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘আমরা পেঁয়াজের মূল্যবৃিদ্ধর বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন, এবার গতবারের মত পরিস্থিতি সৃষ্টির কোনো শঙ্কা নেই, এবার আমরা খুব সতর্ক।’
উল্লেখ্য, গত বছর এই সেপ্টেম্বর মাসেই দেশের বাজারে পেঁয়াজের সংকট সৃষ্টি হয়েছিল। সে সময় ভারতে অতিবৃষ্টির ফলে পেঁয়াজের ফলন নষ্ট হয়। সে দেশের সরকার পেঁয়াজ আমদানিতে অনুৎসাহিত করার জন্য রফতানি মূল্য বৃদ্ধি করে। প্রতি টন পেঁয়াজের রফতানি মূল্য ৩০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে এক লাফে ৮৫০ ডলারে উন্নীত করে। এর পরই ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। সে সময় সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে যশোর বড়বাজারে দেশি পেঁয়াজ খুচরা বিক্রি হচ্ছিল ৪৫ টাকা কেজি দরে। মাত্র দু মাসের মাথায় ২০ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে যশোর বড়বাজারে পেঁয়াজের সর্বোচ্চ মূল্য ওঠে ২২০ টাকা কেজিতে। অবশ্য দেশের অন্যান্য স্থানে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। এবারও এই সেপ্টেম্বরে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধিতে জনমনে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, গতবারের মত এবারও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির সুযোগটা কাজে লাগাতে চাচ্ছে সিন্ডিকেট। এখনই সরকারের কঠোর হাতে মজুতদারদের দমন করতে হবে। নতুবা দেরি হয়ে গেলে পেঁয়াজের বাজার সিন্ডিকেটের হাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে, যশোর কৃষি বিপণন অধিদফতরের জেলা মার্কেটিং অফিসার সুজাত হোসেন খান গতকাল সোমবার লোকসমাজাকে জানান, ‘বাজারে ইচ্ছেমত কেউ পেঁয়াজের দাম বাড়াতে পারবে না। আড়তদার ও খুচরা দোকানিদের ক্রয় মূল্যের রশিদ দেখাতে হবে, অনিয়ম পেলেই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা আজকালের মধ্যে যশোরের বিভিন্ন বাজারে অভিযানে নামবো।’