বিচারবর্হিভুত হত্যাকাণ্ড বন্ধের দাবি বিএনপির দুই এমপি’র

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দেশে বন্দুক যুদ্ধের নামে ক্রসফায়ারে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির দুইজন সংসদ সদস্য। তারা ওই সকল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যাকান্ডসহ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডেরর শিকার ব্যক্তির পরিবার যাতে সুবিচার পায় সে জন্য তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। একইসঙ্গে সরকারের বিরুদ্ধে সংবিধান লংঘনের অভিযোগ করা হয়। সোমবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনার সূত্রপাত করেন বিএনপির সংসদীয় দলের নেতা মো. হারুনুর রশিদ। তিনি তার নির্বাচনী এলাকা বিভিন্ন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, এসব হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সংবিধান লংঘন করা হচ্ছে। পরে আলোচনায় অংশ নেন একই দলের সদস্য ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা। তিনি সরকারের বিরুদ্ধে সংবিধান লংঘনের অভিযোগ করেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে হারুনুর রশীদ বলেন, গত বছর ২৮ এপ্রিল জাতীয় সংসদে এমপি হিসেবে শপথ নেয়ার মাত্র দুই দিন পর ৩০ এপ্রিল আমার নির্বাচনী এলাকায় প্রকাশ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়। একটি পেশাদারী প্রতিষ্ঠান বিকেল ৪টায় একজন সাধারণ নাগরিককে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। পুলিশি এজাহারে ওই ঘটনা থানা থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে ঘটেছে বলে দেখানো হয়। এজাহারে বলা হয়, পুলিশের উপর বেপরোয়া আক্রমণ চালানো হয়েছে। কিন্তু অস্ত্র দেখানো হয়েছে হাতে তৈরি অস্ত্র। সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ওই ঘটনায় দুইজন ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। তাদের একজন আমাদের এলাকায় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। আর তার বড় ভাই। অথচ ঘটনার দিন তারা সংসদে এসে সংসদ গ্যালারি থেকে আমাদের অধিবেশন দেখেছেন। সংসদে ঢুকতে হলে সবার অনুমতি নিতে হয়। এই সংসদের কাছে এ ধরনের ডকুমেন্টস আছে। তাদের নামে আমি পাস ইস্যু করেছিলাম। হারুনুর রশীদ বলেন, এই ধরনের পুলিশ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে মানুষকে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। তা নিয়ে নাটক বানাচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের এলাকার এক ছাত্রকে ঢাকার শেওড়াপাড়া থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে এলাকায় ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়। ঢাকা থেকে তুলে নেয়ার চারদিন পর তাকে ক্রসফায়ারে দেয়া হয়। তিনি আরো বলেন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের আজ বিচার হচ্ছে। আদালত তাদের পরিবারের মামলা গ্রহণ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে আরও প্রায় তিন হাজারের অধিক ব্যক্তি এমন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। তারা কি বিচার পাবে না?
তাদের পাশে রাষ্ট্র দাঁড়াবে না? তাদেরকে কি রাষ্ট্র এই অধিকার দিবে না? এরপর ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা সরকারের বিরুদ্ধে সংবিধান লংঘনের অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, এই সরকার ২০১৩ সালে একটি আইন করেছিল ‘হেফাজতে নির্যাতন মৃত্যু নিবারণ আইন’। ওই আইনে চমৎকার সব ধারা থাকা সত্ত্বেও সেই আইনে খুব বেশি মামলা হয়নি। অথচ এই সাত বছরে অসংখ্য মানুষ পুলিশ হেফাজতে মারা গেছে। কিন্তু তার মামলাগুলো কি হলো, কেন পরিবারগুলো মামলা করার সাহস পায় না, হলে কয়টি মামলা হয়, সেইসব মামলার কি অবস্থা, তার কিছুই আমরা জানি না। তিনি বলেন, সম্প্রতি একটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সকলেরই দৃষ্টি কেড়েছে। অথচ প্রতিদিনই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়। পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১৮ সালে ৪৬৬ জন, ২০১৯ সালে ৩৮৮ জন এবং ২০২০ সালে করোনাকালে প্রথম ছয় মাসে ১৫৮ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। অর্থাৎ প্রতিদিন একজনের বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। তিনি আরো বলেন, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে প্রচার করা হলেও এগুলোর একটিও কিন্তু বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কারণ আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে গত এক যুগে অর্থাৎ ১২ বছরে তিন হাজারের বেশী মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। অসংখ্য মানুষ গুম হয়েছেন। অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন বাংলাদেশ গুম বলে কোন শব্দ নাই। একই লাইন ধরে পুলিশের আইজি কিছুদিন আগে বলেছেন ক্রসফায়ার নামেও বলে কিছু নাই। এটি এনজিওগুলোর শব্দ। যে রাষ্ট্রে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করা হয়, সেখানে বিচার বিভাগ ও আইনের শাসন থাকে না বলে তিনি দাবি করেন।