সাতক্ষীরা পৌরসভার ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি

0

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি॥ জলাবদ্ধতায় ভুগছে সাতক্ষীরা পৌরসভার বেশির ভাগ এলাকার মানুষ। পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা না থাকায় অল্প বৃষ্টিতে ডুবে থাকছে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়িসহ ফসলী জমি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পৌর কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রভাবশালীদের অবৈধ নেটপাটার মৎস্য ঘের- এই দুই কারণেই সাতক্ষীরা পৌরবাসী জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে সৃষ্ট অতিবৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হওয়া পৌরসভার অনেক এলাকার অবস্থা এখনো ভয়াবহ। সাতক্ষীরাবাসীর জন্য জলবদ্ধতা এখন অভিশাপ।
স্থানীয়রা জানান, সাতক্ষীরার পৌরসভার মুনজিতপুর, রথখোলা, পূর্ব রাজার বাগান, ঢালী পাড়া, কুলিন পাড়া, বদ্দিপুর কলোনি, গদাইবিল, পুরাতন সাতক্ষীরা সরদারবাড়ি, মাদ্রাসা পাড়া, দাসপাড়া, ঋষিপাড়া, সরকারপাড়া, উত্তর কাটিয়া, কামালনগর, পলাশপোল, রসুলপুর, মধুমোল্লারডাঙ্গি, মেহেদিবাগসহ শহরের অধিকাংশ এলাকা গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে পানিতে তলিয়ে গেছে। সাতক্ষীরা শহরের বদ্দীপুর জনকল্যাণ সমিতির সভাপতি লুৎফর রহমান জানান, পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে এ সব এলাকার ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ। অনেকের বাড়ির উঠানে হাঁটু সমান পানি জমে গেছে। রাস্তার উপর ২/৩ ফুট পানি জমে জনসাধারণের চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। বাড়ি থেকে কাজের সন্ধানে পুরুষেরা পানি ঠেলে বের হলেও নারীরা বের হতে পারছেন না। লুৎফর রহমান জানান, তলিয়ে আছে গেছে এসব এলাকার শত শত বিঘা ফসলি জমি, মৎস্যঘের ও রাস্তাঘাট। জলাবদ্ধ এসব এলাকা বর্তমানে নিরাপদ খাবার পানি সংকটের পাশাপাশি স্যানিটেশন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে পানিতে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। শুরু হয়েছে পরিবেশ দূষণ। বদ্দীপুর জনকল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন ও রবিউল ইসলাম, আব্দুর রহমানসহ নাগরিক সমাজের অনেকেই অপরিকল্পিত বেঁড়িবাধ দিয়ে মৎস্য ঘের, পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়া, নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে যাওয়া ও সংযোগ খালগুলো যথাযথভাবে খনন না করা, খালের মধ্যে নেটপাটা দিয়ে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টিসহ বর্ষার পানি নদীতে না পড়তে পারাকেই দায়ী করেছেন। পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের বদ্দীপুর মোড়ে বদ্দীপুর এলাকার স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যর্থ হওয়ায় এবং ত্রাণ দেওয়া নিয়ে মিথ্যাচারের প্রতিবাদে পৌর মেয়র ও স্থানীয় কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ঝাটা মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেছে এলাকাবাসী।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান মাসুম বলেন, বদ্দীপুর এলাকা বছরের প্রায় ৬ মাস পানিতে তলিয়ে থাকে। প্রতিবারই ভোটের আগ মুহূর্তে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। কিন্তু নির্বাচিত হলে পানি নিষ্কাশনসহ এলাকাবাসীর উন্নয়নে কোন কাজ করেন না। প্রতি বছরই তাদের পানিতে ডুবতে হয়। এ বিষয়ে জনপ্রতিনিধিসহ সরকারি কর্মকর্তাদের অবগত করলে তারা পরিদর্শনেই সীমাবন্ধ রাখেন।
তিনি বলেন, গত কয়েকদিন আগে পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতী, সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর সেলিমসহ পৌর কর্তৃপক্ষ বদ্দীপুর এলাকা পরিদর্শনে আসেন। সে সময় তারা মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে দুটি ট্রলি বরাদ্দ দেন। যাতে স্থানীয়রা ফ্রি যাতায়াত করতে পারবেন। অথচ এই ট্রলি দুটি সকালে একবার আসে এরপর আর তাদের খুঁজে পাওয়া যায়না। দ্রুত পানি নিষ্কাশনে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আগামীতে আরো কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা বলে ঘোষণা দেন তারা। এদিকে সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতী বলেন, আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যাতে খুব দ্রুত পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা করা হচ্ছে। মেয়র বলেন, বেতনা নদী খনন করা হলে সাতক্ষীরা শহরের স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হবে।