আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলির বড় চালান আটক বেনাপোলে, গ্রেফতার ৩

0

মীর মঈন হোসেন মুসা ॥ যশোরের বেনাপোল সীমান্ত থেকে গত শুক্রবার দিবাগত রাতে বিদেশি নতুন ১১টি পিস্তল, ২২টি ম্যাগজিন ও ৫০ রাউন্ড গুলিসহ তিন অস্ত্র চোরাকারবারীকে আটক করেছে বিজিবি। এ সময় ওই চোরাকারবারীদের কাছ থেকে ১৪ কেজি গাঁজাও উদ্ধার করা হয়। ভারত থেকে নিয়ে আসা অস্ত্র ও মাদকের চালানটি বেনাপোলে কুখ্যাত মাদক স¤্রাট বাদশা মল্লিকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিলো। যশোর ব্যাটালিয়নের (৪৯ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. সেলিম রেজা পিএসসি এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
বিকেলে যশোরের ঝুমঝুমপুরস্থ ৪৯ বিজিবি’র সদর দফতরে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে বলা হয়, তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিলো ভারত থেকে চোরাকারবারীরা অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য নিয়ে আসছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে বেনাপোলের রঘুনাথপুর বিওপিতে কর্মরত হাবিলদার সিগন্যাল মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে একটি টহল দল গত শুক্রবার দিবাগত রাতে বিশেষ অভিযান পরিচালনার জন্য অবস্থান নেয়। অভিযান চলকালে রাত সাড়ে তিনটার দিকে টহল দলের সদস্যরা দেখতে পান যে, মেইন পিলার ২১/৬ এস হতে প্রায় ৮শ’ গজ বাংলাদেশ অভ্যন্তরে ২ নম্বর ঘিবা নামক স্থানে অজ্ঞাতনামা ৩ ব্যক্তি বস্তা মাথায় নিয়ে দেশে ঢুকছে। এ সময় বিজিবি সদস্যরা তাদের চ্যালেঞ্জ করলে তারা দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে এক পর্যায়ে বিজিবি সদস্যরা ধাওয়া করে দুজনকে বস্তাসহ আটক করতে সক্ষম হন। আটক চোরাকারবারীরা হচ্ছেন-বেনাপোলের সর্বাঙ্গহুদা গ্রামের মৃত সবেদ আলীর ছেলে আলমগীর হোসেন (৪০) ও মো. শহিদ বিশ্বাসের ছেলে মো. আনারুল ইসলাম (৩৫)। পরে তল্লাশি করে তাদের কাছে থাকা একটি ব্যাগ থেকে বিদেশি নতুন ১১ টি অবৈধ পিস্তল (৭.৬৫), ২২টি ম্যাগজিন ও ৫০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এছাড়া তাদের বস্তা থেকে ৭ পোটলায় থাকা ১৪ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। ব্রিফিংয়ে বলা হয়, পিস্তলের গায়ে কেএফ লেখা আছে। কিন্তু এই অস্ত্র কোন দেশের তৈরি তা লেখা নেই। তবে মামলা হলে তদন্তে তা উদঘাটিত হতে পারে।
৪৯ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. সেলিম রেজা পিএসসি বলেন, আটক চোরাকারবারীদ্বয় জিজ্ঞাসাবাদে তাদের জানান যে, তাদের আরও একজন সঙ্গী আছে। ফলে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তারা মো. সাজজুল (৩০) নামে ওই চোরাকারবারীকে আটক করেন। সাজজুল বেনাপোলের ঘিবা গ্রামের এজুবার মিয়ার ছেলে। তিনি জানান, আটক ৩ চোরাকারকারবারীকে জিজ্ঞাসাবাদে কোথা থেকে কীভাবে অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য এলো এবং বাংলাদেশে কার কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিলো তাও জানা গেছে। চোরাকারবারীরা তাদের জানিয়েছেন, ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বনগাঁ থানার ভিড়া এলাকার চোরাকারবারী কোরবান আলী (৩৫) ও লাল্টু মিয়ার (৩২) কাছ থেকে অস্ত্র ও মাদকের চালানটি নিয়ে আসা হয়েছে। তাদেরকে অস্ত্র ও মাদকের এই চালান বেনাপোলের মাদক স¤্রাট বাদশা মল্লিকের (৫০) কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিলো। বাদশা মল্লিক বেনাপোলের নারায়ণপুর রঘুনাথপুর গ্রামের মৃত কেরামত মল্লিকের ছেলে। বিজিবি অধিনায়ক জানান, তারা এ ঘটনায় বেনাপোল পোর্ট থানায় মামলা করবেন। তবে ঘটনার সাথে যদি আরও কারো সম্পৃক্ততা থাকে তাহলে পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসবে। এটা পুলিশের তদন্তের বিষয়। তিনি বলেন, কোন নাশকতামূলক কর্মকা-ের জন্য অপরাধীরা এই অস্ত্রের চালান নিয়ে আসছিলো বলে তারা মনে করছেন। উল্লেখ্য, ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থাকা বেনাপোলের কুখ্যাত মাদক স¤্রাট বাদশা মল্লিক দীর্ঘদিন ধরে মাদক ও অস্ত্রের কারবারের সাথে জড়িত। উদ্ধার হওয়া অবৈধ অস্ত্রের এই বড় চালান এর অন্যতম প্রমাণ।