কোনো অভিযানই তাদের দমাতে পারেনি, যশোরে নিষিদ্ধ পলিথিন বিক্রি !

0

শেখ আব্দুলাহ হুসাইন ॥ যশোরে একের পর এক অভিযান চালানো হলেও পরিবেশ দূষণকারী নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভোক্তাদের চাহিদার কারণে এ ব্যবসা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের দাবি নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে, তবে সবার আগে মানুষের মধ্যে সচেতনতা দরকার। যশোর বড়বাজার পাইকারি মার্কেটে সর্বশেষ ২৭ আগস্ট ২০২০ তারিখে নিষিদ্ধ পলিথিন বিক্রির বিরুদ্ধে প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে। জেলা পরিবেশ অধিদফতরের উদ্যোগে আদালতের বিচারক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজি আতিকুর রহমান এদিন নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন জব্দ ও জরিমানা করেন। একই সাথে পরবর্তীতে পলিথিন ব্যবহারের ব্যাপারে সতর্ক করা হয় এবং পরিবেশবান্ধব কাগজের ব্যাগ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে জনস্বার্থে লিফলেট বিতরণ করা হয়। এর আগে অসংখ্যবার যশোর বড়বাজার পাইকারি মার্কেটে নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন বিক্রির অপরাধে জব্দ, বিনষ্ট ও জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় পরিবেশদূষণকারী পলিথিনের ব্যবসা বন্ধ করেননি। সূত্র জানায়, এসব পাইকারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটা ধারণা জন্মেছে ভ্রাম্যমাণ আদালতে যে অংকের জরিমানা বা মালামাল জব্দ করা হয় তা আবার ব্যবসা করে অল্প কয়েকদিনেই পুষিয়ে নেওয়া যায়। এ কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা এ ব্যবসা বন্ধ করেন না।
যশোর বড়বাজারে হাতেগোনা কয়েকজন নিষিদ্ধ পলিথিনের পাইকারি ব্যবসা পরিচালনা করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বড়বাজার আলুপট্টির লিটন স্টোরের স্বত্বাধিকারী লিটন সাহা, বড়বাজার গোহাটা রোডের মা শীতলা ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী প্রদীপ পাল, বড়বাজার গোহাটা রোডের কমল স্টোরের স্বত্বাধিকারী কমল পাল ও বড়বাজার গোহাটা রোডের বিপুল স্টোরের স্বত্বাধিকারী বিপুল পাল। এছাড়াও আরও ছোট ছোট বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা এ অবৈধ ব্যবসার সাথে যুক্ত। গতকাল শনিবার যশোর বড়বাজারের পলিথিন ব্যাগের অন্যতম বড় পাইকারি ব্যবসায়ী লিটন স্টোরের স্বত্বাধিকারী লিটন সাহা এ প্রতিবেদককে জানান, ‘ঢাকা থেকে চালান আসা বন্ধ হলে আমরাও এ ব্যবসা বন্ধ করে দেব।’ তিনি আরও বলেন, ‘নিষিদ্ধ ঘোষিত জেনেও ভোক্তাদের চাহিদার কারণে আমরা পলিথিন ব্যাগ বিক্রি করছি।’ গত বৃহস্পতিবার যশোর জেলা পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কামরুজ্জামান সরকার এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘বাজারে এ ধরনের অবৈধ ব্যবসার বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, এবং আরও চলবে। তাছাড়া আমরা জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য লিফলেটও বিতরণ করছি।’ শনিবার যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান লোকসমাজকে বলেন,‘ নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন ব্যাগের বিক্রির বিরুদ্ধে আমরা হাল ছাড়িনি। আমরা এর একটা সমাধান করে ছাড়বো। আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অব্যাহত থাকবে।’ তিনি আর বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হলো পরিবেশ দূষণের বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা থাকা দরকার।’ উল্লেখ্য,পলিথিনের শপিং ব্যাগ ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক নিয়ে এর আগে যশোর সরকারি এম এম কলেজের ভূগোল বিভাগের প্রধান প্রফেসর মো. আব্দুল কাদের রবিবার লোকসমাজকে বলেছিলেন, প্রাকৃতিকভাবে স্বাভাবিক বস্তু প্রকৃতির নিয়মে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে মিশে যায়। কিন্তু পলিথিন এমন একটা পদার্থ যা মাটি এবং পানি কোন কিছুর সাথেই মেশে না। এটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তাছাড়া পলিথিন পচনযোগ্য না। যেমন পাট স্বাভাবিকভাবে এক সময় মাটির সাথে মিশে যায়। কিন্তু সিনথেটিক (কৃত্রিম) জিনিসগুলো মাটির সাথে না মিশলে জীববৈচিত্র নষ্ট হয়ে যায়। মাটির যে মাইক্রোঅরগানিজমগুলো, (উদ্ভিজ্জাণু) তাদের জীবন ধারণে সমস্যা হয়। ফলে কৃষির ক্ষতি হয়, মাটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট হারায় এবং মানবস্বাস্থের জন্যও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।