বৃদ্ধ গীতা দাসের ঠিকানা

0

শিপলু জামান, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) সংবাদদাতা ॥ জায়গাটি অন্যের, তবে ঘরটি নিজের। যতœ করে খড়ি-কাটি আর ব্যানারের কাপড় দিয়ে সাজিয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে ঘর মালিক গীতা দাস (৬৫) এর সব মালামাল। একপাশে রয়েছে একটি মাটির চুলা, যেখানে তিনি রান্না করেন। খাওয়া শেষে রাত হলেই পাশে একটি টিনের চালার নিচে নিশ্চিন্ত মনে ঘুমিয়ে পড়েন। সবসময় মানুষ দেখলেই নিজেকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন, কথাও বলেন খুব কম।
স্থানীয়রা বলছেন, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে নলডাঙ্গা বাজারের দণি প্রান্তে একটি রাইস মিলের সামনে এভাবে বসতি গড়ে তুলেছেন গীতা দাস। গত সাত বছর যাবত তিনি এখানে থেকে সবার সাথে মিশে চলেন। সবধরনের বুদ্ধি আছে তার, কখনও এলোমেলো চলতে দেখা যায়নি। মানুষের সাহায্যই জীবন চলে তার। ছেলের সংসারে ফিরতে চান না তিনি। ছেলে-মেয়েরা মাঝে মধ্যে মাকে দেখতে আসেন। তাদের দাবি, মায়ের মাথার সমস্যা দেখা দিয়েছে, তিনি বাড়ি যেতে চান না। গীতা দাস ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের মৃত ঠাকুর দাসের স্ত্রী। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। ছেলে নারায়ন দাস (৪২) রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। আর মেয়ে কল্পনা দাস (৪৫)। অনেক আগে বিয়ে হয়েছে তার। চার শতক জমির ওপর তাদের টিনের চালার ঘর। এখানেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করেন নারায়ন দাস। তিনি (নারায়ন দাস) জানান, ৩৯ বছর হয়েছে তার বাবা মারা গেছেন। মা গীতা দাসই কঠোর পরিশ্রম করে তাদের বড় করে তুলেছেন। তাদের কোনো জায়গা জমি ছিল না। অন্যের জমিতে ঘর বেঁধে বসবাস করতেন। বর্তমানে ৪ শতক জমি কিনে সেখানে টিনের ঘর করে বাস করছেন। সংসারে অভাব রয়েছে, তবে আগের মতো না খেয়ে কাটাতে হয় না।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা বাজারের একাধিক বাসিন্দা জানান, প্রায় ৭ বছর আগে বৃদ্ধ গীতা দাস তাদের বাজারে বসতি গড়ে তুলেছেন। বাজারের দণি প্রান্তে একটি রাইস মিলের সামনের ফাঁকা অংশে তিনি খড়ি-কাটি দিয়ে ছোট ঘর বানিয়েছেন। যে ঘরের মধ্যে শোবার কোনো জায়গা নেই। আছে একটি চুলা, আর বৃদ্ধার কাপড় থেকে শুরু করে নানা মালামাল। তারা জানান, গীতা দাস সারাদিন বাজারের দোকানগুলোতে মানুষের কাছে সাহায্য চান, বিকেল হলেই ঘরে ফিরে আসেন। এরপর রান্না শুরু করেন। রাতে খাবার খেয়ে রাইস মিলের চালার নিচে ঘুমিয়ে পড়েন। আর ঘরটির দরজা সুন্দর করে বন্ধ করে রাখেন। রাতের খাবার খেয়ে যেটুকু থাকে সেটুকুই সকালে খান। দুপুরে কোথায় খান তার ঠিক নেই। এভাবে তিনি বেঁচে আছেন। রাইস মিলের মালিক মাসুদ আলী জানান, বৃদ্ধ গীতা দাস খুব কথা কম বলেন। অনেকে তাকে পাগলী বলে জানলেও কখনও তাকে পাগলামি করতে দেখা যায়নি। তার সবকিছুই ঠিক আছে, একজন যেভাবে সংসার গুছিয়ে রেখে চলেন সেভাবেই তিনি করেন। তার সন্তানরা মাঝে মধ্যে দেখা করতে আসেন। তারপরও কোথায় যেন একটা সমস্যা রয়ে গেছে। যেটা কেউ বুঝতে পারছেন না, বৃদ্ধাও কাউকে বুঝতে দেন না। তবে তার চিকিৎসা প্রয়োজন। দীর্ঘদিন এই অবস্থায় থাকায় শরীর ভেঙে গেছে। তার মাথার কোনো সমস্যা থাকতে পারে। চিকিৎসা করালে হয়তো ভাল হয়ে যাবেন।