কী ঘটেছিল ওই মসজিদে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নারায়ণগঞ্জের মসজিদে কেন কীভাবে ছয়টি এসির বিস্ফোরণ ঘটল, সে বিষয়ে তাৎণিকভাবে সুনির্দিষ্ট করে কেউ কিছু বলতে পারেননি। তবে মসজিদে গ্যাসের লাইনের লিকেজ থেকে বের হওয়া গ্যাস জমে এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। শুক্রবার রাতে এশার নামাজ চলার মধ্যেই মসজিদের নিচতলায় দেড় টনের এসিগুলো বিস্ফোরিত হয়ে অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের অন্তত ৩০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর ফায়ার সার্ভিসের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, “মসজিদের ফোরের নিচ দিয়ে একটি গ্যাসের লাইন গেছে। সেই লাইন থেকে গ্যাস লিক হয়ে বদ্ধ মসজিদের ভেতরে জমা হয়। এসি থাকায় পুরো মসজিদ বন্ধ ছিল। লিক হওয়া গ্যাস বের হতে পারেনি। তাছাড়া এসিতেও গ্যাস থাকে। “সুইচ অন বা অফ করার সময় কোথাও বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট হয়েছে। গ্যাস উপরের দিকে থাকায় এসিগুলো বিস্ফোরিত হয় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।” এরপরেও ঘটনা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন। গ্যাস যে ফোর থেকে লিক হচ্ছে তার বড় প্রমাণ আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের দেওয়া পানির মধ্যে ফোরে গ্যাস বুদবুদ করছে।”তার সঙ্গে একমত জানিয়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন, “ফায়ার ব্রিগেডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং ঘটনাস্থল দেখে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে, গ্যাসের কারণেই এই বিস্ফোরণ ঘটেছে।
“তারপরেও আমরা সব বিষয় মাথায় রেখে সিআইডি ক্রাইম সিনের সদস্যদের ডেকেছি। তারা আলামত সংগহ করছে। পাশাপাশি পুলিশ তদন্ত করে দেখছে এর পেছনে অন্য কোনো কারণ বা ঘটনা আছে কি না।” তিনি বলেন, তিতাস গ্যাস কর্তৃপ গ্যাসের লাইন বন্ধসহ প্রয়োজনীয় কাজ করেছে। মসজিদের বিদ্যুৎ লাইনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বাড়তি পুলিশ প্রহরা বসানো হয়েছে। বিস্ফোরণের ধাক্কায় মসজিদের সবগুলো জানালার কাচ উড়ে গেছে, কোনো কোনো জানালা ফ্রেমসহ উপড়ে গেছে দেয়াল থেকে। প্রার্থনারত মানুষগুলো দগ্ধ হয়ে সেখানে কী অবস্থা হয়েছিল, তার কিছুটা বিবরণ উঠে এসেছে প্রত্যদর্শীদের বয়ানে। মসজিদের পাশেই রিকশা গ্যারেজের মালিক রতন মিয়া বলেন, বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনে ছুটে এসে দেখেন মসজিদের ভেতর থেকে লোকজন হুড়োহুড়ি করে বের হচ্ছেন। “অনেকের শরীরে আগুন জ্বলছে। অনেকের শরীর আগুনে ঝলসে গেছে। তারা শরীরের আগুন নেভাতে মসজিদের সামনের সড়কের ময়লা পানিতে হামাগুঁড়ি দিচ্ছেন। এদিকে বিস্ফোরণে বিদ্যুতের ভয়ে উপস্থিত লোকজন তাদের সামনে যেতে ভয় পাচ্ছিলেন। পরে বিদ্যুৎ বন্ধ করা হলে আশপাশের লোকজন তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।” বিস্ফোরণের খবর শুনে ছুটে আসা মোশারফ হোসেন রনি বলেন, এই মসজিদটি এলাকায় চামারবাড়ি মসজিদ নামে পরিচিত। “আমাদের ব্ল্যাড ডোনেশন গ্রুপের কিছু ছেলে আমাকে ফোন করে জানায়, মসজিদে এসি বিস্ফোরিত হয়েছে। অনেক মানুষ দগ্ধ হয়েছে। তাড়াতড়ি ৮-১০টি রিকশা পাঠানোর জন্য বললে আমরা রিকশা পাঠাই। পরে আমরা ঘটনাস্থলে এসে দেখি বিস্ফোরণে মসজিদের এসি জ্বলে গেছে। দগ্ধদের প্রথমে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়।”