গুরুতর আহত ইউএনও হাসপাতালে, ৩৭ জন দগ্ধ অথচ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মানিকগঞ্জে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দেশের যে কোনও বড় দুর্ঘটনা ঘটার পর দুঘর্টনাস্থলে বা হাসপাতালে হাজির হন সরকারের সংশ্লিষ্টরা। আহতদের হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে সঙ্গে সঙ্গে বা পরের দিন সকালেই হাসপাতালে হাজির হতে থাকেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট অন্যরাও। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লার বায়তুস সালাহ জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় ৩৭ জন পুড়ে যাবার ২৪ ঘণ্টা পরও আহতদের দেখতে হাসপাতালে আসতে পারেননি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। অথচ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রী দুই হাসপাতালেই আসবেন। এই ৩৭ জন চিকিৎসাধীন আছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে, সেখানে রাত পৌনে ১০ টা পর্যন্ত মারা গেছেন ২০ জন।
এমন কী তিনি রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইউএনও ওয়াহিদা খানমকেও দেখতে আসতে পারেননি। অথচ ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জের দূরত্ব মাত্র ৬৫ কিলোমিটার। যদিও গতকাল (৪ আগস্ট দিবাগত রাত) রাতে সোয়া ১২টায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয় তিনি আজ (৫ আগস্ট) ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সে ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওয়াহিদা খানম ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে চিকিৎসাধীনের দেখতে হাসপাতালে যাবেন। তবে রাতের বেলায় সাংবাদিকদের এ তথ্য দিয়ে জানানো হয়, কোন হাসপাতালে তিনি কখন যাবেন সেটা দিনের বেলাতে জানিয়ে দেওয়া হবে। এমনকী আজ সকাল ১১টাতেও একই তথ্য দেওয়া হয় সাংবাদিকদের।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী দুই হাসপাতালেই সাংবাদিকরা এ দুই দুর্ঘটনার পাশাপাশি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর জন্যও জড়ো হতে থাকেন। তারপর মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে আবার জানানো হয়, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী মানিকগঞ্জে দুইটি প্রোগ্রাম করছেন। শেষ করে ২টার আগে আসতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে না।’ দুপুর দুইটা ১২ মিনিটে জনসংযোগ বিভাগ থেকে তৃতীয়বারের মতো জানানো হয়, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই মুহূর্তে মানিকগঞ্জের দুইটি বড় প্রোগ্রামে অংশ নেওয়ায় ঢাকা ফিরতে বিকেল/সন্ধ্যা হয়ে যাবে। তাই মন্ত্রী মহোদয় জানিয়েছেন উনি আগামীকাল (৬ আগস্ট) সকাল ১১টায় নিউরো সায়েন্স ও হাসপাতালে ও বেলা ১২টায় বার্ন ইন্সটিটিউটে পরিদর্শনে যাবেন। ফলে আজকে আর তিনি কোন হাসপাতালে পরিদর্শনে যাবেন না। অনাকাঙ্ক্ষিত এই সিডিউল পরিবর্তনে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি।’
পরে জানা যায়, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক তার নিজ জেলা মানকিগঞ্জে শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সাটুরিয়ার বটতলায় একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সেখানে সাটুরিয়া ও বালিয়াটি বাজারের জন্য প্রায় ৮ কোটি টাকার তিনটি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করেন। সেখানে তিনি বলেন, দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভালো ছিল বিধায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোনও মানুষকে তাঁবুতে থাকতে হয়নি। বরং করোনা আক্রান্তদের হাসপাতালে রেখেই চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। আমাদের দেশের চেয়ে বহির্বিশ্বে করোনায় বেশি আক্রান্ত হওয়ায় তাদের তাঁবুতে রেখে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। পরে তিনি উপজেলা পরিষদে দুটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও মানবিক সহায়তার কর্মসূচির আওতায় অসহায় ১৫ পরিবারের মধ্যে এক বান্ডেল করে ঢেউটিন এবং ৩ হাজার টাকার করে চেক বিতরণ করেন। এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের মোবাইল ফোনে কল করলেও তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেন ঢাকায় ফিরতে পারলেন না জানতে চাইলে জনসংযোগ কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম জানান, উনি বৃহস্পতিবারেই মানিকগঞ্জে গিয়েছিলেন, আগেই ওই প্রোগ্রাম দেওয়া ছিল।