যশোরে মদ পানে তিন জনের মৃত্যুর ঘটনায় ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট শিগগিরই

0

মীর মঈন হোসেন মুসা ॥ যশোরে আলোচিত ভেজাল ও বিষাক্ত মদ পানে তিন জনের মৃত্যুর ঘটনায় আদালতে চার্জশিট দাখিলের প্রক্রিয়া চলছে। জানা গেছে, ১৫ জন অভিন্ন আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে আলাদা তিনটি চার্জশিট দাখিল করতে পারে পুলিশ। ইতোমধ্যে মদ পানে শহরতলীর খন্দকার শাহিন হোসেনের ময়নাতদন্তের রিপোর্টও পুলিশের হাতে এসে পৌঁছেছে। অ্যালকোহলজনিত বিষক্রিয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক উল্লেখ করেছেন।
এপ্রিলের শেষের দিকে যশোরে একের পর এক ভেজাল ও বিষাক্ত মদ পানে মাদকসেবীদের মৃত্যু হতে থাকে। এভাবে শুধুমাত্র যশোর শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১৮ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ফলে এনিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হলে টনক নড়ে পুলিশ প্রশাসনের। আর যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে কয়েকজন শহরের মাড়–য়া মন্দির সংলগ্ন পতিতালয়ের সামনের অবৈধ মদের দোকান থেকে মদ সেবন করেছিলেন। এই মদের দোকানগুলো পরিচালনা করে থাকেন আলোচিত মাদক ব্যবসায়ী মাহমুদুল হাসান ওরফে হাসান। তার তিন জন কর্মচারীও মদ পানে মারা যান। পত্রপত্রিকায় ব্যাপক লেখালেখি হলে পুলিশ মাদক ব্যবসায়ী হাসানহ কয়েকজনকে আটক করে। আটক হাসান পরে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। ওই জবানবন্দি থেকে প্রকাশ পায়, যশোরের দুটি পতিতাপল্লীর সামনের অবৈধ মদের দোকাগুলো ও এম কে রোডস্থ সুইপার কলোনিতে অন্তত ৪০ জন মদের ব্যবসার সাথে জড়িত। তবে হাসান জবানবন্দিতে একথাও বলেন যে, মদের সংকটের কারণে পতিতাপল্লীর সামনের কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী রেক্টিফাইড অবৈধভাবে সংগ্রহ করে ভেজাল মদ তৈরি করেছিলেন। ওই ভেজাল মদ পানে কয়েকজনের মৃত্যু হয়। অপরদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করে। সংস্থার খুলনাস্থ অতিরিক্ত পরিচালক আবুল হোসেন নিজেই অন্যদের সাথে ঘটনার তদন্ত করেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এই টিম শেখহাটির চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী তপন কুমার হালদারকে আটক করলে তিনি স্বীকার করেন যে, তিনি মদের সংকটের কারণে রেক্টিফাইড স্পিরিট সংগ্রহ করে ভেজাল মদ তৈরি করেছিলেন। ওই মদ পানে খন্দকার শাহিন হোসেনসহ কয়েকজন পরে মারা গেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে শহরের বেজপাড়া বিকে রোডের একটি হোমিওপ্যাথি ওষুধের দোকানে অভিযান চালিয়ে সেই সময় সংস্থাটি অবৈধভাবে রাখা ১ লিটার রেক্টিফাইড স্পিরিট উদ্ধার করে। সেখান থেকে আটক করা হয় দুজনকে। এ ঘটনায় আটক তিন জনের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলাও করা হয়।
এদিকে ভেজাল ও বিষাক্ত মদ পানে যশোরে ১৮ জনের মৃত্যু হলেও এ সংক্রান্তে কোতয়ালি থানায় মামলা হয়েছে তিনটি। সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা মান্দারতলার আলোচিত মাদক ব্যবসায়ী ফজলুর রহমান চুক্কির মদের বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর ঘটনায় তার স্ত্রী মামলা করেন। এছাড়া শহরতলীর শেখহাটি কালীতলা কাজীপাড়ার মৃত্যুর ঘটনায় তার ভাই খন্দকার সুজন হোসেন ও শহরের ঘোপের মুন্নার মৃত্যুর ঘটনায় তার স্ত্রী আলাদা দুটি মামলা করেন। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ভেজাল মদ পানে ফজলুর রহমান চুক্কি, খন্দকার শাহিন হোসেন ও মুন্নার মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হতে পারে শিগগির। ১৫ জন অভিন্ন আসামিকে অভিযুক্ত করে আলাদা তিনটি চার্জশিট দাখিল করা হতে পারে।
আসামিরা হচ্ছেন,শহরের হরিনাথদত্ত লেনের আনোয়ার হোসেনের ছেলে মাদক ব্যবসায়ী মাহমুদুল হাসান ওরফে হাসান, বেজপাড়ার আব্দুল জলিলের ছেলে সাহেদ হোসেন সাজু ও আমির হোসেন বাবু, হাটখোলা রোডের মহিউদ্দিন শেখের ছেলে খোকন, লোন অফিসপাড়ার উমেশচন্দ্র লেনের মৃত কাওসার শেখের ছেলে আবুল শেখ, ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের জাফর খাঁ’র ছেলে চান খাঁ, সদর উপজেলার সীতারামপুরের নরেন পালের ছেলে পিন্টু, শহরের হাটখোলা রোডের গোলাম বিশ্বাসের ছেলে আবু বক্কর রতন, সদর উপজেলার বাহাদুরপুরের দ্বীন আলীর ছেলে আব্দুর রাজ্জাক, ভোলা জেলার হানিফ শেখের ছেলে মহসীন শেখ শুভ, যশোর শহরের কাঠেরপুল এলাকার মৃত বিষেদ চন্দ্রের ছেলে কৃষ্ণ ওরফে ফারুক, রেল রোডের মৃত দাউদ রহমানের ছেলে আনিচুর রহমান পিকুল, শেখহাটির নিমাই হালদারের ছেলে তপন কুমার হালদার, বেজপাড়ার বাশিরাম ঘটকের ছেলে কাজল কুমার ঘটক ও বিশ্বজিৎ কুমার ঘটক। যোগাযোগ করা হলে মদপানে খন্দকার শাহিন হোসেনের মৃত্যুজনিত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতয়ালি থানা পুলিশের এসআই হারুন অর রশিদ জানান, ভিকটিমের লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সম্প্রতি পেয়েছেন। ওই ময়নাতদন্তের রিপোর্টে অ্যালকোহলজনিত বিষক্রিয়ায় খন্দকার শাহিন হোসেনের মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক। তিনি বলেন, মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই এ মামলার চার্জশিট তিনি আদালতে দাখিল করবেন। মদ পানে ফজলুর রহমান চুক্কির মৃত্যুজনিত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই শরিফুল ইসলাম জানান, তারও মামলার তদন্ত কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। চুক্কির ময়নাতদন্তের হাতে রিপোর্ট হাতে পেলে তিনি চার্জশিট দাখিলের প্রক্রিয়া শুরু করবেন। অপরদিকে মদপানে মুন্নার মৃত্যুজনিত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই কাইয়ুম মুন্সী জানান, মামলার তদন্ত কাজ চলছে। তবে তিনি এখনো পর্যন্ত মুন্নার লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাননি।