চিকিৎসকদের অবহেলায় আস্থা হারাচ্ছে মানুষ : যশোরে করোনার বিস্তার ঘটলেও হাসপাতালের বেড খালি থাকছে

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে করোনার বিস্তার ঘটলেও আক্রান্তরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে না। ফলে, তাদের জন্যে বরাদ্দকৃত বেশিরভাগ বেডে খালি থাকছে। চিকিৎসকদের অবহেলার কারণে সরকারি হাসপাতালের প্রতি আস্থা হারিয়ে তারা নিজ বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী যশোরে মহামারী করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত যশোরে মোট ৩ হাজার ৩১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। সেপ্টেম্বর মাসের দু’দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৭২ জন। গত আগস্টে এ জেলায় ১ হাজার ৪শ ৮৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত হয়ে ১২ জন মারা যান এ মাসে এর আগে এমানুসারে জুলাইতে ১ হাজার ১শ ৮৭ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ১৬ জন এ মাসে মারা গেছেন। অনুরূপভাবে জুনে আক্রান্ত হয়েছেন ৪শ ৯৫ জন। মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। মে-মাসে ৪৭ জন ও এপ্রিলে ৫৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। গত ১০ মার্চ থেকে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা গণনা শুরু হয় যশোর সিভিল সার্জন অফিসে। তবে ,মার্চে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল না। ১৩ এপ্রিল একজন আক্রান্তের মধ্য দিয়ে শুরু হয় কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা গণনা। ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩শ ৩১জন। প্রাপ্ত তথ্য মতে মৃত্যের সংখ্যা বাড়ছে। এ পর্যন্ত ৪৭জন কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। কোভিড-১৯ সন্দেহে মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনের। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ২৮ জন। হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন আছেন ১ হাজার ২শ ৫৩ জন। ২ হাজার ১১জন সুস্থ হয়েছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনুপাতে চিকিৎসা সেবায় যশোর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ কিংবা করোনা প্রতিরোধে গঠিত কমিটির তৎপরতা ও সক্ষমতা নিয়ে সচেতন মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ যশোরে যেভাবে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, সেভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্যে হাসপাতালে বেড নেই। সীমিত সংখ্যক বেড নিয়ে করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করা হচ্ছে।
যশোর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, যশোরে কোভিড-১৯ সংক্রমনে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য মোট ১শ ৬৫টি বেড রয়েছে। এ ভেতরে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের জন্যে ৪০টি বেড। এর মধ্যে ৩০টি বেডে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে কোভিড-১৯ হাসপাতাল ডিডিএল-এ। ওই বেড স্থানান্তর করার মধ্য দিয়ে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে কোভিড-১৯ ওয়ার্ড চালু করা হবে দ্রুত সময়ে। জেলা সদরের বাইরে উপজেলা পর্যায়ে রয়েছে আরো ১শ ১৫টি বেড। অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০টি বেড রয়েছে। বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে ২৫টি বেড। ১৯টি বেড রয়েছে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। অনুরূপ ঝিকরগাছা ও কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০টি করে ৪০টি বেড, মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৯টি এবং শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে ১২টি বেড। অধিকাংশ বেড খালি থাকছে রোগীর অভাবে। অসুস্থ্য রোগীদের সাথে স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের যোগাযোগের অভাব রয়েছে। যে কারণে রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে না। মারাত্মক অসুস্থ না হলে নিজ উদ্যোগে হাসপাতালে আসছেন না তারা। হোম আইসোলেশনে থাকার নিয়ম থাকায় আক্রান্তদের বেশিরভাগ নিজ গৃহে হোম আইসোলেশনে অবস্থান করছেন। আর সেখানে সুস্থ হওয়ার কারণে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিজেদের সফলতার কৃতিত্ব নিচ্ছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তারা। এ নিয়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণে আক্রান্তদের মধ্যে যথেষ্ঠ অসন্তোষ রয়েছে। অধিক সংখ্যক লোক কোভিড-১৯ সংক্রমনে আক্রান্ত হওয়া, হাসপাতালে চিকিৎসার অভাব ও সক্ষমতা নিয়ে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কমিটির সদস্য সচিব ডাঃ শেখ আবু শাহীনের সাথে বিস্তারিত আলাপ হয়। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে স্বাস্থ্য বিভাগের সক্ষমতা রয়েছে। হাসপাতালে যথেষ্ঠ বেড রয়েছে। অনেক বেড খালি থাকছে রোগী না থাকার কারণে। এ ক্ষেত্রে হোম আইসোলেশনে চিকিৎসা নেয়ার নিয়ম থাকায় হাসপাতালে না এসে বেশিরভাগ লোক নিজ বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় আক্রান্তের হার আরো বাড়লে ভবিষ্যতে কি করবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে ডাঃ শেখ আবু শাহীন বলেন, এ মুহুর্তে বলা যাচ্ছে না কি করা যাবে। তবে অবস্থার প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।