কাঁচা মরিচের দাম চিন্তায় ফেলেছে ক্রেতাদের

0

মেহেরপুর প্রতিনিধি॥ ক্রমেই অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে মেহেরপুরের কাঁচা মরিচের বাজার। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে গাংনীতে খুচরা বাজারে মরিচের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ টাকা। বর্তমানে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা। তবে আড়তে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত মরিচ বিক্রি করছেন ১৭০ টাকা কেজি দরে। এতে মধ্যস্বত্বভোগী আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন। এদিকে দেশের বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ স্বাভাবিক এবং দাম নাগালের মধ্যে রাখতে বাজারে এলসি খুলে কাঁচা মরিচ আমদানি করা হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মধ্যস্বত্বভোগী আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি থাকলেও মরিচের ঝালে চোখ মুছতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৫০০ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচের চাষ করা হয়। অনুকূল আবহাওয়া আর ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরা মরিচ চাষের ওপর ঝুঁকে পড়েছে। আগামীতে আরও বেশী চাষ করার প্রস্তুতিও নিয়েছেন অনেকে। চলতি মৌসুমে চাষিরা তাদের উৎপাদিত মরিচ বিভিন্ন আড়তে কেজি প্রতি ১৭০-১৮০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। সেই মরিচ খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে ১৯০ টাকায়। খুচরা ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন হাট-বাজারে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন ২৪০-২৫০ টাকায়। গত শনিবার গাংনী ও সোমবার বামুন্দী আড়তে চাষিরা মরিচ বিক্রি করেন কেজি প্রতি ২১০ টাকায়। এলসি মরিচ আমদানির আভাস পেয়ে আড়তে চাষিদেরকে মরিচের দাম কেজি প্রতি দেওয়া হয় ১৮০ টাকা।
গাংনীর জোড়পুকুর গ্রামের মরিচ চাষি খোকন জানান, তিনি চলতি মৌসুমে ৫ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। গেলো বছর চাষ করেছিলেন আড়াই বিঘা জমিতে। মরিচের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি বেশ খুশি। তবে এলসি মরিচ বাজারে আসলে দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তার। সোমবার আড়তে মরিচ বিক্রি করে কেজি প্রতি ৩০ টাকা কম পেয়েছেন। এভাবে মরিচ বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠবে না বলেও জানান এই চাষি। একই কথা সাহারবাটি গ্রামের মরিচ চাষি হিটু মিয়ার।
গাংনীর কাচা বাজারের আড়তদার রিপন আলী জানান, প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন আড়ত থেকে ৫০ টনের বেশি কাঁচা মরিচ রাজধানী ঢাকা’সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রফতানি করা হয়। চাষিরা আড়তে মরিচ বিক্রি করছেন, ভালো দামও পাচ্ছেন। আড়তদাররাও বেশ লাভবান হচ্ছেন। তবে বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক এবং দাম নাগালের মধ্যে রাখতে এলসি কাঁচা মরিচ আমদানি করা হবে বলেও জানান তিনি। গাংনীর হ্যাপি নাইচ কাচাবাজারের সত্ত্বাধিকারী আব্দুস সামাদ জানান, এলসি মরিচ আমদানির সময় চাপে নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় আমদানি খরচ উঠাতে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। এতে বাজারে মরিচের দাম আগের মতোই থাকতে পারে। তবে খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বৃদ্ধি করে। এক্ষেত্রে বাজার মনিটরিং করা প্রয়োজন। গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেলিম শাহনেওয়াজ জানান, বাজারের দাম স্থীতিশীল রাখতে নিয়মিত মনিটরিং করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসারকে কে এম শাহাবুদ্দীন আহমেদ জানান, চাষিরা তাদের উৎপাদিত মরিচের ভালো দাম পাওয়ায় অনেকেই মরিচ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এলসি মরিচ বাজারে আসলে চাষিদের মাঝে কোনও প্রভাব পড়বে না। তবে গত বছরের তুলনায় এবার মরিচের আবাদ কম হওয়ায় চাহিদার তুলনায় সরবরাহও কম, দামও বেশি। শোলমারি গ্রামের চাষি আব্বাস আলি জানান, মরিচের আবাদ কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। কখনও কখনও গাছ মারা যায়। আবার অস্বাভাবিক একটু বৃষ্টি হলেই আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেজন্য আবাদের পরিমাণও কমে যায়। তেরঘরিয়া গ্রামের ভোক্তা আবুল কাসেম বলেন, মরিচ একটি নিত্য প্রয়োজনীয় দব্য। দাম বেশি হওয়ায় আমাদের জন্য প্রয়োজন মতো কিনে খাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য। সরকার যদি পাশ্ববর্তী দেশ থেকে মরিচ আমদানি করে তাহলে গরিব মানুষের জন্য খুব ভালো হয়।