যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূ ঝর্না বেগমকে হত্যার দায়ে নিহতের স্বামী লাল্টুকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেছেন আদালত। একই সাথে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার যশেরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল-১ এর বিচারক (জেলা জজ) টি এম মুসা এই রায় প্রদান করেন। ঝর্না বেগম হত্যাকান্ডের ১১ বছর পর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হলো।
যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত লাল্টু শার্শা উপজেলার সম্বন্ধকাঠি গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে। আসামি পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা ইস্যুর আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের পিপি অ্যাড. মো. আসাদুজ্জামান।
মামলা সূত্রে জানা যায়, নিহত ঝর্না বেগম সদর উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের মাহিদিয়া দক্ষিণপাড়ার মৃত হাতেম আলী গাজীর মেয়ে। হত্যাকান্ডের প্রায় ৯ বছর আগে সহকারী নির্মাণ শ্রমিক লাল্টুর সাথে তার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের পর পিতামাতার প্ররোচনায় লাল্টু স্ত্রী ঝর্না বেগমের কাছে ১ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে আসছিলেন। যৌতুক না দেওয়ায় এ জন্য তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন চালানো হতো। এরই মধ্যে ঝর্না বেগমের সাকিব নামে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু তার ওপর নির্যাতন বন্ধ না হওয়ায় বোনের সুখের কথা চিন্তা করে হত্যাকান্ডের ১ বছর আগে ঝর্না বেগমের ভাই আলমগীর হোসেন মাহিদিয়া দক্ষিণপাড়ায় তাদের ৫ কাঠা জমিতে বোন ও ভগ্নিপতির টিনের একটি বাড়ি বানিয়ে দেন। সেই থেকে তারা সেখানে বসবাস করতেন। তবে সেখানে মাঝে মধ্যে বেড়াতে আসতেন লাল্টুর পিতা আতিয়ার রহমান ও মা রিজিয়া বেগম। যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় তারা ঝর্না বেগমের সাথে ঝগড়া করতেন। ২০০৯ সালের ২৮ জুন বিকেলে লাল্টুর পিতা আতিয়ার রহমান ও মা স্ত্রী রিজিয়া বেগম যশোরে ছেলের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। রাতে লাল্টু ও তার পিতামাতা ঝর্না বেগমের সাথে ঝগড়া করেন। পরদিন ২৯ জুন ভোরে আতিয়ার রহমান ও রিজিয়া বেগম নাতি সাকিবকে নিয়ে চলে যান। এরপর সকাল সাতটার দিকে লোকমুখে আলমগীর হোসেন খবর পান যে, তার বোন ঘরের আড়ার সাথে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এ খবর পেয়ে তিনিসহ পরিবারের লোকজন সেখানে ছুটে যান। তারা সেখানে গিয়ে দেখেন লাশ খাটের ওপর রয়েছে। কিন্তু তার গলায় রশি দেওয়ার কোন চিহ্ন না দেখতে পেয়ে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে এ সময় লাল্টু কৌশলে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে ঝর্না বেগমের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যায়। একই বছরের ৬ নভেম্বর পুলিশ ঝর্না বেগমের ভাই আতিয়ার রহমানকে ফোন করে জানান যে, তার বোনকে মাথায় পেরেক ঢুকিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে চিকিৎসক একথা উল্লেখ করেছেন। ফলে আলমগীর হোসেন এ ঘটনায় লাল্টু এবং তার পিতা আতিয়ার রহমান ও রিজিয়া বেগমকে আসামি করে ওইদিন কোতয়ালি থানায় একটি মামলা করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (সংশোধনী/০৩) এর ১১ (ক)/৩০ ধারায় যৌতুকের দাবিতে মারপিট করে হত্যার অভিযোগে এ মামলা করা হয়। পরে তদন্ত শেষে পুলিশ একমাত্র লাল্টুকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। চার্জশিটে অপর দুই আসামি আতিয়ার রহমান ও রিজিয়া বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ না পাওয়ায় আদালতে তাদের অব্যহতির আবেদন জানানো হয়। এই মামলায় আসামি লাল্টুর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাঁর রায়ে তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন।