খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলে কেওড়ার বাম্পার ফলন

0

কপিলমুনি (খুলনা) সংবাদদাতা ॥ খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলে কেওড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। কেওড়া দ্রুত বর্ধনশীল একটি গাছ। এর গড় উচ্চতা ২০ মিটার। এ গাছের পাতা চিকন, ফল আকারে ছোট ও গোলাকার। কেওড়া সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান বৃ। সুন্দরবনে নদী ও খালের তীর এবং চরে এ গাছ বেশি জন্মায়। এর কাঠ দিয়ে ঘরের বেড়া, দরজা, জানালা তৈরি ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর পাতা সুন্দরবনের তৃণভোজী প্রাণির প্রধান খাদ্য। ফলে এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ ও ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। কেওড়া গাছ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ও য়তিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে থাকে। বর্তমানে উপকূলীয় এলাকার চরভরাটি জমিতে ব্যাপক হারে কেওড়া গাছ লাগানো হচ্ছে। তবে বাণিজ্যিকভাবে কেওড়া চাষ সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার অর্থনীতির জন্য অপার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করছেন অনেকেই। কেওড়া চাষ এ অঞ্চলের দারিদ্র্য বিমোচনের অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে বলেও অনেকেই মনে করেন। চলতি মৌসুমে সুন্দরবনসহ উপকূলীয় অঞ্চলে কেওড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে ফলে ভরে গেছে প্রতিটি গাছ। কেওড়া গাছ মূলতো সুন্দরবনকেন্দ্রিক বৃ হলেও লবণ সহিষ্ণু হওয়ায় উপকূলীয় খুলনা, বাগেরহাট, সাতীরাসহ সুন্দরবন সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকার নদীর চরভরাটি জমিতে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে অন্যান্য প্রজাতির গাছের সাথে কেওড়া গাছের চারা লাগানো হয়।
সুন্দরবন সংলগ্ন পাইকগাছা উপজেলার শিবসা, ভদ্রা, মিনহাজ, কড়ুলিয়া নদী ও কপোতা নদের চরভরাটি জমিতে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে প্রচুর পরিমাণে কেওড়া গাছের চারা রোপন করা হয়েছে। এছাড়া এলাকার বিভিন্ন স্লুইসগেটের ধারে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো বড় বড় কেওড়া গাছ রয়েছে। কেওড়া বর্ধনশীল হওয়ায় গাছে দ্রুত ফল ধরে। ফাল্গুনে ফুল ফোটে, চৈত্র-বৈশাখে ফল ধরে, আর আষাঢ়-শ্রাবণ ও ভাদ্র-আশ্বিন মাস পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এক একটা গাছে প্রচুর পরিমাণে ফল ধরে। এতো বেশি ফল ধরে যে, ফলের জন্য গাছের পাতা দেখা যায় না। এ সময় এলাকার হাট-বাজারগুলোতে কেওড়া ফল কিনতে পাওয়া যায়। প্রতিকেজি কেওড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। উপকূলীয় অঞ্চলে প্রচুর চরভরাটি জমি রয়েছে। জোয়ার-ভাটা হয় এমন জমিতে যদি বাণিজ্যিকভাবে কেওড়া চাষ করা হয় তাহলে একদিকে বাঁধ ও পরিবেশ এবং বন্যপ্রাণি সংরণ করার পাশাপাশি এর কাঠ জ্বালানি ও ফল বাজারে বিক্রি করে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। এমনকি কেওড়া বাগানে মধু উৎপাদন করেও প্রচুর টাকা আয় করা সম্ভব। কেওড়া চাষে তেমন কোন পরিচর্যা লাগে না এবং লবণ সহিষ্ণু হওয়ায় এর উৎপাদন খরচও অনেক কম। এ জন্য অধিকহারে কেওড়া চাষ করার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনসহ উপকূলীয় অঞ্চলের অর্থনীতি গতিশীল করা সম্ভব বলে অনেকে মনে করেন।