মনিরামপুরে নিহত চুমকির পরিবার থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে #তদন্ত কর্মকর্তাকে ডেকে ভৎর্সনা প্রতিমন্ত্রীর

0

স্টাফ রিপোর্টার,মনিরামপুর (যশোর)॥ মনিরামপুর পৌর শহরে শিশু সন্তানের সামনে স্বামীর হাতে নিহত গৃহবধূ চুমকি চন্দ্রের পরিবারের কাছ থেকে সাদাকাগজে স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নাজমুল সাকিবের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার রাতে মনিরামপুর প্রেস কাবে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যের কাছে এ অভিযোগ করেন নিহত গৃহবধূ চুমকির বাবা-মা, একমাত্র শিশু সন্তান নেহাসহ পরিবারের লোকজন। এ সময় প্রতিমন্ত্রী তাৎক্ষণিক ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নাজমুল সাকিবকে ডেকে নিয়ে ভৎর্সনা করেন। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে মনিরামপুর প্রেস কাবে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করছিলেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্র্য্য এমপি। অনুষ্ঠান চলাকালীন নিহত গৃহবধূ চুমকির একমাত্র শিশু সন্তান নেহাকে সাথে নিয়ে তার বাবা তরুণ চন্দ্র, মা মঙ্গলা রানী চন্দ্র, ভাই অমিত চন্দ্র, কাকা তপু চন্দ্র, বিকাশ চন্দ্র, প্রকাশ চন্দ্রসহ পরিবারের লোকজন অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হয়ে তাদের মেয়ে(চুমকি)হত্যার বিচার চেয়ে প্রতিমন্ত্রীর পা জড়িয়ে ধরেন।
চুমকির ভাই অমিত চন্দ্রসহ পরিবারের লোকজন প্রতিমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কাজী নাজমুল সাকিব তার কয়েকজন সহকর্মী পুলিশ সদস্যকে সাথে নিয়ে তাদের বাড়িতে গিয়ে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় অমিত সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন। এক পর্যায়ে এসআই সাকিব ওই সাদা কাগজের ওপরে ‘চুমকির মরদেহ গ্রহণ’ লিখে নিচে অমিতের স্বাক্ষর নেন। এছাড়াও পরিবারের লোকজনের অভিযোগ অমিত প্রথমে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে অসম্মতি জ্ঞাপন করলে এসআই সাকিব ও সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যরা পরিবারের সাথে খারাপ আচরণ করেন। অভিযোগ শুনে প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য তাৎক্ষণিক থানার পুলিশের পরিদর্শক (সার্বিক) রফিকুল ইসলাম ও এসআই নাজমুল সাকিবকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানস্থলে ডেকে আনেন। সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়ার ঘটনা জানতে চাইলে এসআই সাকিব সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিমন্ত্রী তাকে ভৎর্সনা করেন। তবে নিহত গৃহবধূ চুমকির পরিবারের সাথে খারাপ আচরণের অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই নাজমুল সাকিব জানান, সুরতহাল রিপোর্টের পর মরদেহ গ্রহণের জন্য একটি কাগজে স্বাক্ষর আনতে তিনি কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে সাথে নিয়ে তাদের বাড়িতে যান। সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করায় ’‘মরদেহ গ্রহণ’ লিখে অমিতের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেয়া হয়। প্রতিমন্ত্রী এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ ওসিকে নির্দেশনা দেন কোন পক্ষপাতিত্ব না করে নিরপেক্ষভাবে মামলার তদন্তকাজ সম্পন্ন করে চুমকি হত্যায় প্রকৃত দোষিদের আইনের কাঠগড়ায় তোলার। উল্লেখ্য, পৌর শহরের ব্যবসায়ী তরুণ চন্দ্রের একমাত্র মেয়ে চুমকি চন্দ্রকে হাকোবা এলাকার ট্রাক চালক কৃঞ্চ দত্তের ছেলে মৃত্যুঞ্জয় দত্ত ভালবেসে ২০১১ সালে বিয়ে করেন। ২০১৬ সালে তাদের একমাত্র মেয়ে সন্তান নেহার জন্ম হয়। এরই মধ্যে মৃত্যুঞ্জয় মাদকাসক্ত হয়ে ওঠে। চুমকির বাবা জানান, মৃত্যুঞ্জয় নেশা করে বাড়িতে এসে স্ত্রীর সাথে অহেতুক ঝগড়া করতো। এ নিয়ে তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। রবিবার রাতে মৃত্যুঞ্জয়ের সাথে চুমকির ঝগড়া হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিল তাদের একমাত্র শিশু সন্তান নেহা দত্ত। সন্তানের সামনে মৃত্যুঞ্জয় চুমকিকে মারধরের পর মুখে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। আর মায়ের হত্যাকান্ডের পুরো ঘটনা শিশু নেহা পুলিশসহ সবার সমানে বর্ণনা করে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা তরুণ চন্দ্র মামলা করলে পুলিশ স্বামী মৃত্যুঞ্জয়কে আটক করে।