করোনা থেকে মুক্তি মিলছে যন্ত্রণা থেকে নয়

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনা মুক্ত হয়েও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছেন না আক্রান্ত অনেকেই। আক্রান্তদের শরীরে দীর্ঘমেয়াদি কিছু প্রভাব রেখে যাচ্ছে করোনা। বয়স্কদের অনেকেই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগসহ নানা ধরনের জটিলতায় ভুগছেন। জজ কোর্টের আইনজীবী আফসানা জেরিন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মিরপুরের ভাড়া বাসায় থাকেন। একই পরিবারের পাঁচ সদস্য পর্যায়ক্রমে করোনা আক্রান্ত হন। করোনার প্রভাব বিস্তারের শুরুর দিকে তার বাবা প্রথমে আক্রান্ত হন। পরবর্তীতে তিনি মারা যান।
করোনার থাবায় পুরো পরিবার যেন লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। সকলেই এখন ভালো হলেও বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা বয়ে বেড়াচ্ছেন। ৪০ বছর বয়স্কা আফসানা জেরিন এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি।
জেরিন বলেন, আমাদের বাসার সবাই করোনায় আক্রান্ত হয়েছি। গত ৪ঠা জুন বাবা মারা গেছেন করোনায়। পরবর্তীতে আমরা চার সদস্য একজন করে পর্যায়ক্রমে আক্রান্ত হই। করোনা নেগেটিভ হলেও এখন পর্যন্ত শরীর অনেক দুর্বল লাগে। একটু বাসার বাইরে গেলে, সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা করলে বা হাঁটলে খুবই দুর্বল লাগে। বেশিক্ষণ এক স্থানে বসে থাকতে পারি না। মনে হয় যে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। দম নিতে কষ্ট হয়। ঘুমের খুব সমস্যা হচ্ছে। ঠিকমতো ঘুম হচ্ছে না। এ ছাড়া কানে সমস্যা হচ্ছে। ঠিকভাবে শুনতে পাই না। করোনার সময় যেমন প্রচণ্ড মাথা ব্যথা ছিল এখনো আছে। মনে হয় মাথার মাঝখানে খুব ব্যথা করে। চুলে হাত দিতে পারি না। প্রচুর চুল পড়ছে। আমার মা’ও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি যদিও ১৮ বছর ধরে অসুস্থ। এখন প্রায়শই উনার শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। কোথাও খুব বেশি যাতায়াত করতে পারেন না। বাসায় থাকেন। ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় করোনার সময়ের থেকে করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পরে শারীরিক সমস্যা বেশি দেখা দেয়। করোনার সময় প্রচুর খেতে পারতাম। কিন্তু এখন মুখে তেতো ভাব মনে হয়। অরুচি লাগে।
ফাইজা তাহসিন রাজধানীর একটি স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। স্কুল বন্ধ হওয়াতে বেশিরভাগ সময় বাসায় থাকে। দেড় মাস আগে করোনা আক্রান্ত হয়। ফাইজা বলে, গতকাল থেকে মনে হয় নতুন করে শরীরটা খুব খারাপ লাগছে। জ্বর জ্বর লাগে। অস্থিরতা। হঠাৎ শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। যদিও চিকিৎসক জানিয়েছে আমার শরীরে ভাইরাসের পরিমাণ কম ছিল। যেটাকে মাইনর অ্যাটাক বলা যায়। তারপরেও সুস্থ হতে ১৮ দিন সময় লেগেছে। সংবাদকর্মী কামরুল হাসান বলেন, দ্বিতীয় টেস্টে করোনা নেগেটিভ আসার পর আমার যেটা মনে হয়েছে মূলত অনেক বেশি দুর্বলতা। তার সঙ্গে চোখে কম দেখা। হাড়ের গিঁটে ব্যথা। হাঁটাচলা করতে খুব বেশি কষ্ট হয়। তাছাড়া খাবারের প্রতি অরুচি অনেকদিন ছিল। মেমোরি লস হয়েছিল। এছাড়া, আমার মেজাজ প্রচণ্ড খিটখিটে হয়ে গেছে। আমার পরিবারের অন্য সদস্যরাও আক্রান্ত হয়েছেন। এক্ষেত্রে ছোটদের দুর্বলতাটাও খুব বেশি।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মঈনুল হাসান বলেন, গত ৮ই মে আমি করোনা আক্রান্ত হই। পরবর্তীতে ২২শে মে দ্বিতীয় এবং জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের দুটো পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল আসে। করোনা পরবর্তী সমস্যাগুলোর মুখোমুখি ইতিমধ্যে হয়েছি। এবং এখনো ফেস করছি। আমার শারীরিক দুর্বলতা এখনো রয়ে গেছে। খুব বেশি চলাফেরা বা হাঁটাচলা বেশি হলে অল্পতেই হাঁপিয়ে যাই। সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করলেও একই সমস্যা দেখা দেয়। তখন আমার পেটে একটু সমস্যা হয়েছিল। সেই সমস্যাটা এখনো পুরোপুরি ভালো হয়নি। সেটা এখনো রয়ে গেছে কিছুটা। বিশেষ করে দুর্বলতাটা অনেকেই ফেস করছে। আমিও করছি। অনেক সময় কোথাও বসে আছি বা দাঁড়িয়ে। তখন মনে হয় মাথাটা খুব ঘুরছে। বা চারপাশের সবকিছু দুলছে এমন মনে হয়। আক্রান্ত হওয়ার পর প্রায় এক মাস আমার ঘুমের খুব সমস্যা হয়েছে। বিছানায় যেতাম রাত ১২টা থেকে ১টায় কিন্তু ঘুমাতাম ফজরের নামাজ পড়ে। শুয়ে থাকতাম কিন্তু ঘুম হতো না।
করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা রোমিও বলেন, করোনা নেগেটিভ হওয়ার পরে আমার যে জটিলতাটা ছিল এখনো আছে সেটা হচ্ছে শ্বাসকষ্টের সমস্যা। নিঃশ্বাসে প্রায়শই সমস্যা উপলব্ধি করছি। জানি না এটা ঠিক কতদিন থাকবে। এ ছাড়া আমি আগে যে পরিমাণ হাঁটতে পারতাম সেটা এখন আর পারি না। অল্প একটু হাঁটলে অনেক বেশি হাঁপিয়ে যাচ্ছি। তৃতীয় যে সমস্যাটা হচ্ছে তা হলো আগে যেটা মুখস্থ করতে বা মনে রাখতে পারতাম সেটা এখন কম পারছি। ১৯শে জুন পজেটিভ হওয়ার ২১ দিন পরে নেগেটিভ আসে। ঈদের পাঁচদিন আগে এবং পাঁচদিন পর মোট দশদিন শ্বাসকষ্ট নিয়মিত হয়েছিল। এবং সেটা শুরু হয় বিকাল চারটা থেকে রাত ৮টা অথবা ৯টা পর্যন্ত।