ওপারে হটস্পট এপারে উদ্বেগ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দেশে করোনার সংক্রমণে কার্যকরী কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রতিদিনই শনাক্তের পাল্লা ভারী হচ্ছে। লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। দেশে ইতিমধ্যে তিন লাখের উপরে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারতে একদিনে নতুন করোনা শনাক্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ভারতই বিশ্বের প্রথম দেশ, যেখানে একদিনে এতো রোগীর খোঁজ মিললো। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে সংক্রমণ দিন দিন বাড়ছেই। বিশ্বে এখন করোনার হটস্পট ভারত। ভারতের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে বাংলাদেশের। আর এজন্যই দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বেশ চিন্তিত। তাদের মতে, দেশটিতে যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই কারণে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। পরামর্শ দিয়ে তারা বলেন, সীমান্তে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে পালন করতে হবে। ভালোভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। দেশটি থেকে কেউ এলে নিতে হবে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে। একদিনে ভারতে নতুন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজারের বেশি, যা বিশ্বের প্রথম। শনাক্তও ৩৬ লাখের বেশি। এর কোনো প্রভাব বাংলাদেশে দেখছেন কিনা জানতে চাইলে-বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া) সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক মানবজমিনকে বলেন, করোনা সংক্রমণ এখন বিশ্বব্যাপী। যা মহামারিরূপ ধারণ করেছে। ভারতের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। দেশটিতে যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ার সম্ভাবনা বেশি। এই কারণে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। আমরা করোনার সংক্রমণ কার্যকর নিয়ন্ত্রণে আনতে পারিনি। তাই প্রভাব পড়বেই। তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখতে হবে। লোকজনকে যাতায়াতে নিরুৎসাহিত করতে হবে। বর্তমান সংক্রমণ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তার জন্য কৌশল তৈরি করতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সঠিকভাবে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, বর্তমান স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করতে হবে। আইনের কঠোরভাবে সঠিক প্রয়োগ করতে হবে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ কোনো বিচ্ছিন্ন দেশ নয়। আমরা গ্লোবাল ভিলিজে বাস করি। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আমরা ঝুঁকিতে থাকবো বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এ প্রসঙ্গে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং সংস্থাটির উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন বলেন, ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ। তার সঙ্গে রয়েছে আমাদের দীর্ঘ ল্যান্ড সীমান্ত। সুতরাং ভারতে সংক্রমণের প্রভাব এখানেও পড়বে। তিনি বলেন, সীমান্ত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যদিও এখন ইনফরমাল আসা যাওয়া হচ্ছে। কঠোর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নিতে হবে। তিনি বলেন, রোগীকে আইসোলেশন করতে হবে। এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, সরকারের উদ্যোগে করতে হবে আইসোলেশন ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন। এক্ষেত্রে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করতে হবে। কমিউনিটি ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করার পরামর্শ তার। কমিউনিটির স্বেচ্ছাসেবকদের সক্রিয় করে করোনায় নিয়ন্ত্রণে কাজে লাগাতে হবে। এজন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
উল্লেখ্য, গতকাল একদিনে ভারতে নতুন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ভারতই বিশ্বের প্রথম দেশ, যেখানে একদিনে ৮০ হাজার নতুন সংক্রমণের খোঁজ মিললো। গত এক সপ্তাহে তার আগের সপ্তাহের তুলনায় আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। এটা উদ্বেগজনক হিসেবে দেখছে ভারত। দেশটিতে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছে সোয়া ৩৬ লাখের কিছু বেশি। আর মৃত্যু হয়েছে ৬৪ হাজারের উপরে। বিশ্বে করোনা রোগী শনাক্তের সংখ্যার দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত। ভারতের চেয়ে দুই লাখ ব্যবধানে দ্বিতীয় অবস্থানে ব্রাজিল এবং ৬১ লাখ রোগী নিয়ে প্রথম অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।