যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ৩ কিশোর হত্যা জিজ্ঞাসাবাদে মুখ খুলেছে ৮ কিশোর বন্দি

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তিন বন্দি কিশোরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আসামি যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের আট বন্দিকে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে পুলিশ। হত্যাকান্ডের ঘটনায় ওই কেন্দ্রের ভেতর তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আদালতের দেয়া ৪ দিনের এই জিজ্ঞাসাবাদ আদেশের আজ শেষ দিন। এদিকে আটক বন্দিদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে নির্যাতনের শিকার শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ১৫ বন্দি কিশোরকে আদালতে নেয়া হতে পারে। সেদিন কেন্দ্রের ভেতর আসলে কী ঘটেছিল এবং কীভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছিল সেই বিষয়ে বর্ণনা দেওয়ার জন্য তাদেরকে আদালতে নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে পুলিশের।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইনসপেক্টর মো. রোকিবুজ্জামান জানান, গত ২৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত আসামি ৮ বন্দি কিশোরকে চারদিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদেশ দেন। সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কেন্দ্রের ভেতর আলাদা কক্ষে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বলা হয়। এরই প্রেক্ষিতে গত ২৯ আগস্ট শনিবার থেকে কেন্দ্রের ভেতর গিয়ে মামলার আসামি ৮ বন্দিকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। কখনো একজনকে একাকি অথবা কয়েকজনকে এক সাথে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কিন্তু এই বন্দিরা অত্যন্ত ধুরন্ধর। তারা নিজেদের সম্পৃক্ততা নানা কৌশলে এড়িয়ে পুরো ঘটনা আটক কেন্দ্রের ৫ কর্মকর্তার ওপর চাপিয়ে দেয়া চালায়। কিন্তু পুলিশের কৌশলি জিজ্ঞাসাবাদে ও তথ্য প্রমাণাদি উপস্থাপনের প্রেক্ষিতে ওই বন্দি কিশোরেরা নিজেদের সম্পৃক্ততা কবুল করেছে। তাদের কাছ থেকে হত্যাকান্ডের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে ৮ বন্দির কাছ থেকে কী তথ্য পাওয়া গেছে তা প্রকাশ করতে অপরাগতা জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। তিনি আরও জানান, এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ১৫ ভিকটিম (নির্যাতিত বন্দিরা)। তারাও আদালতকে জানাবে সেদিন কী ঘটেছিল। এ কারণে ওই ১৫ ভিকটিমকে আদালতে হাজির করার প্রস্তুতি চলছে। তবে আসামি ৮ বন্দিকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া হবে না।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের আটক ৫ কর্মকর্তা সেদিন সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত যে ভিডিও ফুটেজ মুছে ফেলেছিলেন, তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে তার কিছুটা উদ্ধার করতে পেরেছে পুলিশ। ওই ফুটেজে ঘটনাস্থলে কর্মকর্তাদের উপস্থিতিসহ অনুগত বন্দিরা কীভাবে ১৫ বন্দি কিশোরের ওপর নির্যাতন চালিয়েছিল তার কিছুটা ধরা পড়েছে। পুলিশের কাছে রয়েছে আংশিক এই ফুটেজ। যা মামলায় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য হয়ে উঠেছে পুলিশের কাছে। সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের সময় ৮ বন্দিকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজের ব্যাপারে স্মরণ করে দেওয়ার পর তারা নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছে। উল্লেখ্য, তিন বন্দি কিশোর হত্যা মামলার আসামি যে ৮ বন্দিকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে তারা হচ্ছে-মোহাম্মদ আলী, খলিদুর রহমান তুহিন, মনোয়ার হোসেন রানা, ইমরান হোসেন, আনিসুজ্জামান আনিস, রিফাত আহমেদ, শিমুল পলাশ ও হুমাইদ হোসেন। প্রধান প্রহরী নুর ইসলামকে মারধরকে কেন্দ্র করে গত ১৩ আগস্ট যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ১৮ বন্দির ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয়। এ ঘটনায় ৩ বন্দি কিশোর নিহত ও ১৫ জন আহত হয়। বন্দি হত্যা মামলায় কেন্দ্রের ৫ কর্মকর্তা আটক হওয়ার পর বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। আদালতে আবেদন করলেও তাদের জামিন মেলেনি। এছাড়া একই মামলায় আসামি হয়েছে কেন্দ্রের ওই ৮ বন্দি।