পুরনো দলের সহজে নিবন্ধনের সুযোগ থাকছে না

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য বিদ্যমান তিনটি শর্তের প্রথম দুটি বাদ দেওয়ার পে মত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন, যাতে পুরনো দলের সহজে নিবন্ধন পাওয়ার সুযোগ শেষ হবে। দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে অতীতের যে কোনো সময়ে একজন সংসদ সদস্য, যে কোনো জাতীয় নির্বাচনে ৫ শতাংশ ভোট প্রাপ্তি এবং কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা কমিটি-সমর্থকের দলিল দাখিল- এই তিনটি শর্তের যে কোনো একটি পূরণ করতে হত। প্রথম দুটি শর্ত বাদ পড়লে সবাইকে নতুন দল হিসেবেই কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা কমিটির দলিল দিয়ে নিবন্ধন পেতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন প্রথা চালুর পর বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীসহ তিনটি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। নতুন নিয়ম হলে এই দলগুলোর ফের নিবন্ধন পেতে নতুন দল হিসেবেই তাদের কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা কমিটির দলিল দাখিল করতে হবে।
এর পাশাপাশি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোরসব স্তরে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে আরও বছর দশেক সময় দেওয়ার পে নির্বাচন কমিশন। এই দুটি বিষয় নিয়ে বিদ্যমান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) সংশোধনী আনা হচ্ছে। স্বতন্ত্র ‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনের’ খসড়া নিয়ে আলোচনার মধ্যে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন। ভেতরে-বাইরে ‘সমালোচনা ও বিতর্কের’ মধ্যে প্রস্তাবিত আইনের খসড়া বুধবার অনুমোদন করেছে কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। এখন কমিশন সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজন করে আইন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে। সেখানে ভেটিং শেষে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন সাপেে তা সংসদে উপস্থাপন করা হবে। সংসদের সম্মতি পেলে তা আইনে রূপ পাবে।
১৯৭২ সালের আরপিও সংশোধন করে নবম সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ২০০৮ সালে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এই এক যুগে দল নিবন্ধনে তিনটি শর্ত আরোপ করা হয়। এরমধ্যে একটি পূরণ করেই নিবন্ধন পেয়েছে সংশ্লিষ্ট দলগুলো। পাশাপাশি নিবন্ধিত দলগুলোকে প্রতিপালনীয় কিছু শর্তের মধ্যে সব স্তরের কমিটিতে ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্ব রাখতে ২০২০ সাল ল্যমাত্রা দেওয়া হয়। এ প্রতিশ্রুতি না রাখলে দলের নিবন্ধন বাতিলের মতাও রাখা হয়েছে কমিশনের কাছে। এরই মধ্যে শেষ হচ্ছে আরপিও এর বেঁধে দেওয়া সময়। নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা আরপিও থেকে একটি চ্যাপ্টার নিয়ে নিবন্ধন আইনের একটা প্রস্তাবনা রাখছি। এটা আলাদা আইন হবে কি না তা সরকারের বিষয় ও সংসদ তা বিবেচনা করবে। কিন্তু আলাদা আইন না হলে বিদ্যমান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) সংশোধনী আনতে হবে।” তিনি জানান, ২০২০ সালের মধ্যে যে বাধ্যবাধকতা ছিল তা হয় বাদ দিতে হবে, না হয় সময় বাড়াতে হবে। সেেেত্র সময় দেওয়ার পে কমিশন। “অধিকাংশ দলই ২০২০ সালের মধ্যে প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি। বিশেষ করে সব স্তরে ৩৩% নারী রাখার কথা বলা হয়েছে। এখন কি দলগুলোর নিবন্ধন বাতিল করে দেব আমরা? দলগুলোও আমাদের মতামত দিয়েছে সময় বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। গত এক যুগে তারা পূরণ করতে পারেনি। আমরা চাই আরও ৫ থেকে ১০ বছর সময় দেওয়া যেতে পারে।” আগে ১২ বছর ছিল, এখন ছয় বছর হবে কি না বা পাঁচ বছর নাকি ১০ বছর (২০২৫/২০৩০ সাল)- কতদিন সময় দিয়ে ল্যমাত্রা ঠিক করা হবে, তা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে। দল নিবন্ধনে তিনটি শর্তের মধ্যে ১ ও ২ নম্বর শর্তের এখন প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন। বিদ্যমান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, কমিশনের তিনটি শর্তের মধ্যে একটি পূরণ হলে একটি দল নিবন্ধনের যোগ্য বিবেচিত হয়।
১. দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কোনো জাতীয় নির্বাচনে দলটির অন্তত একজন যদি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২. যে কোনো একটি জাতীয় নির্বাচনে দলের প্রার্থী যদি অংশ নেওয়া আসনগুলোতে বাক্সে পড়া মোট ভোটের ৫ শতাংশ পায়।
৩. যদি দলটির একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপে এক তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি থাকে এবং অন্তত ১০০ উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় কমপে ২০০ ভোটারের সমর্থন থাকে।
নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, “নিবন্ধিত দলগুলো নবম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচন করেছে। এক যুগ আগে ২০০৮ সালে নিবন্ধন পেতে ১ ও ২ নম্বর শর্ত কাজে লেগেছে। কোনো একজন সংসদ সদস্য বা ভোটে অংশ নেওয়ার বিষয়টি আগে প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু এখন নিবন্ধিত দল ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেওয়ারই সুযোগ নেই, ভোটে অংশ না নিলে ৫% ভোট পাবে কীভাবে? সেেেত্র দুটি শর্তের প্রয়োজন নেই। তৃতীয় শর্তটি বহাল রাখা হবে।” তিনি জানান, আগামীতে কেন্দ্রীয়, জেলা ও থানার কমিটি-সমর্থক তালিকা সংক্রান্ত শর্তটি পূরণ করেই নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা যাবে। নতুনদের জন্য এ বিধানই প্রযোজ্য। আইন সংস্কারকে নিয়ে ইসির ভেতরে-বাইরে সমালোচনা চলছে। কয়েকটি দলও আইন না করার দাবি জানিয়েছে। একজন নির্বাচন কমিশনারও ইতোমধ্যে দুই দফা নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন। সবশেষ টিআইবি বলেছে, নতুন আইনের যৌক্তিকতা কোথায়, তা পরিষ্কার নয়। “নির্বাচন কমিশন নামটিকে আর কলঙ্কিত না করে ইতোমধ্যে জনসাধারণের মাঝে তাদের প্রতি যে আস্থার সংকটের সৃষ্টি হয়েছে, তা উপলব্ধি করে বর্তমান সিইসি ও চার নির্বাচন কমিশনারের স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ানো উচিত।” কমিশনের এমন সমালোচনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, “সমালোচনা যারা করার করতে পারে; আমরা আমাদের কাজ করব। আইন আমরা করি না, আমরা প্রস্তাব করছি। সংসদই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।” তিনি জানান, নোট অব ডিসেন্ট দেওয়ার এখনও সময় হয়নি। দ্বিমত পোষণ করা যায়। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নোট অব ডিসেন্ট দেওয়ার মানে হয় না।