দৃষ্টান্তমূলক বিচারই কাম্য

0

চুরির অপবাদে নারী নির্যাতনের কয়েকটি ঘটনা অতি সম্প্রতি সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গোটা সমাজকে নাড়া দিয়েছে। পুলিশ একজন চেয়ারম্যানের বেআইনি কান্ড হতবাক করেছে একটি ঘটনায় এক ইউপি চেয়ারম্যানকে আটক করেছে। তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের বড় নেতা। সমাজে এখনো অনেক মানুষ রয়েছে, যাদের আইনের প্রতি নূন্যতম শ্রদ্ধাবোধও নেই। ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য করার মতা না থাকায় এরা সহজেই যেকোনো অপরাধ করতে পারে। সভ্যতা থেকে দূরে থাকা এসব মানুষ অতি সহজেই জঘন্য ও নিষ্ঠুর আচরণ করতে পারে। প্রায়ই দেশের বিভিন্ন জায়গায় এদের বর্বরতার শিকার হয় নারী, শিশু ও দুর্বলরা। এরই ধারাবাহিকতায় এবার কক্সবাজারের চকরিয়ায় ঘটেছে মর্মান্তিক ঘটনা। চেয়ারম্যানের চরম নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছেন এক মা ও তাঁর দুই মেয়ে। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গত সপ্তাহের শুক্রবার গরু চুরির অভিযোগ তুলে কিছু দুর্বৃত্ত ওই মা ও তাঁর দুই মেয়েকে কোমরে দড়ি বেঁধে রাস্তায় ঘোরায় এবং মারধর করে। পরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নেওয়া হলে সেখানেও তাঁদের মারধর করা হয়। নিজ হাতে মারধর করার অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধেও। সব শেষে ওই মা-মেয়েসহ পাঁচজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। গত শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জঘন্য এই ঘটনা প্রকাশ পেলে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই ঘটনায় তীব্র ােভ ও নিন্দা প্রকাশ করে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায়। পুলিশ চেয়ারম্যানসহ কয়েকজনকে আটক করেছে ?
চুরির অভিযোগ তুলে অতীতে অনেক নারী ও শিশুকে বর্বর নির্যাতন করা হয়েছে; এমনকি হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এমন ঘটনায় অপরাধীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া গেলে অপরাধের ব্যাপকতা কমে আসতে পারে। আমরা আশান্বিত কক্সবাজারের এই ঘটনায় প্রশাসন দ্রুত পৃথক দুটি তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে। গত রবিবার কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির প্রধান করা হয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (উপসচিব) শ্রাবন্তী রায়কে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন চকরিয়ার এসি ল্যান্ড মো. তানভীর হোসেন ও উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা সঞ্জয় চক্রবর্তী। অন্যদিকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে চকরিয়া সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার কাজী মো. মতিউল ইসলামকে নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক রাজীব কুমার দেব। এই নির্দেশ পাওয়ার পরই সরেজমিন তদন্ত শুরু করেছেন পুলিশ কর্মকর্তা। একই বিষয়ে হাইকোর্ট বলেছেন, তদন্ত যথাযথ না হলে হস্তপে করা হবে। আমরা উচ্চ আদালতের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত ও সম্মান জানাই।
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, নারী নির্যাতনের এই জঘন্য ঘটনার শুরু দুপুরে। আর নির্যাতিতাদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয় বিকেল ৫টায়। পুলিশ প্রথমে তাঁদের স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাঁদের গ্রেফতার দেখানো হয়। তাঁদের আদালতে তোলা হলে আদালত তিন নারীর জামিন মঞ্জুর করেন। এই নারীদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যাসত্য নির্ণয়ের দায়িত্ব কার? এভাবে নারীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করার মতা কারো আছে কি? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, দুই নারীকে কোমরে রশি বেঁধে প্রকাশ্যে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ সময় এক চৌকিদার এক নারীকে বারবার স্পর্শ করছে। সেই চৌকিদারকে কেন আইনের আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরিা। আমরা চাই, দ্রুততম সময়ে তদন্ত শেষ করা হোক। প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারে শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।