তৃণমূলে অঙ্গসংগঠনের কমিটি গঠনে বিএনপি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥পুরোদমে সাংগঠনিক রাজনীতি শুরুর অপেক্ষায় বিএনপি। করোনাকালে দলটি ভার্চুয়ালেই সাংগঠনিক রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে অবশ্য স্থায়ী কমিটির সভা প্রায় প্রতি শনিবারই ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দিবসভিত্তিক নানা আলোচনাও হচ্ছে এ মাধ্যমে। দলটি কোনো কমিটিতে হাত দিচ্ছে না। আপাতত কাউন্সিলেরও কোনো চিন্তাভাবনা নেই দলটিতে। তবে বিএনপির অঙ্গ সংগঠনগুলোর তৃণমূলে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ড চলছে দেশজুড়েই। বিএনপির কার্যক্রম ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছে। বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল হয় ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পর পর কাউন্সিল করার কথা। কিন্তু প্রায় দেড় বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপিতে বলা হয়েছে, দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাময়িকভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। এ সময়ে দেশব্যাপী সব স্তরের ইউনিটের নেতৃবৃন্দকে সংশ্লিষ্ট কমিটির সব পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সদস্যের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ ও ভার্চুয়াল বৈঠকের মাধ্যমে সাংগঠনিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে গতকাল সন্ধ্যায় রিজভী আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এরপর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সাংগঠনিক কার্যক্রম প্রকাশ্যে পরিচালনা করা যাবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জানা যায়, বিএনপির সাংগঠনিক জেলা ৮১টি। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি। বাকিগুলো আংশিক। করোনা শুরু হওয়ার আগে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করা হবে। করোনাকালে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। বিএনপি এখন শুধু ভার্চুয়ালে স্বাভাবিক কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। করোনায় দুস্থদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। এখন বন্যায়ও বিএনপির কেন্দ্রীয়ভাবে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ত্রাণ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কোথাও কোথাও ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল সহসাই হচ্ছে না। তাই এখন দলের স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে নির্বাহী কমিটির সদস্য পর্যন্ত ৪০টির মতো ফাঁকা পদ পূরণ করার চিন্তাভাবনা চলছে। শিগগিরই স্থায়ী কমিটিতে অন্তত দুটি পদ পূরণ করা হবে বলে জানা গেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভার্চুয়ালে আমাদের সাংগঠনিক কর্মকা- চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা পুরোদমে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করব। তবে আমরা করোনা ও বন্যায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। কেন্দ্রীয়ভাবে কমিটি করে আমরা মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করছি। শুধু কমিটি গঠন, সভা-সমাবেশ ছাড়া সব ধরনের কর্মকা-ই আমাদের চলছে। বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম বলেন, প্রকাশ্যে সাংগঠনিক কর্মকা- পরিচালনায় আমরা কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত পেলে আমরা কার্যক্রম শুরু করব। তবে আমাদের অন্যান্য কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। যুবদল সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় কমিটি আংশিক হলেও ৮২টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৮০টিতেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি আছে। দুটি জেলা টাঙ্গাইল ও পঞ্চগড়ে এখনো আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই চলছে। তবে যুবদলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ সারা দেশে ১১টি বিভাগীয় টিম গঠন করে দিয়েছেন। তারা প্রতিটি বিভাগের জেলা ও মহানগর পর্যায়ের ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, থানা ও পৌরসভার কমিটি গঠন করছেন। এক্ষেত্রে জেলা নেতাদের সমন্বয়ে এসব কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনাকালীন এই সময়েও যুবদলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি এসেছে। সারা দেশে গঠিত টিম কাজ করে যাচ্ছে। আশা করি, অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তৃণমূলের সব কমিটি গঠন সম্ভব হবে। এরপর কেন্দ্রে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। স্বেচ্ছাসেবক দল সূত্রে জানা গেছে, ৮১টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৭৫টিতে নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪৫টিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি, বাকিগুলো আংশিক কমিটি। করোনা সময়ে সাংগঠনিক কর্মকান্ড স্থগিত ছিল। এক পর্যায়ে সংগঠনটি ভার্চুয়ালে কার্যক্রম শুরু করে। এর মধ্যে সম্প্রতি সংগঠনের সভাপতি শফিউল বারী বাবু মারা যান। ফলে সব কার্যক্রমেই ভাটা পড়ে। এ প্রসঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূইয়া জুয়েল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সভাপতি শফিউল বারী বাবু মারা যাওয়ার পর আমরা এখনো সেই শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তবে সাংগঠনিক কার্যক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া। আশা করি, শিগগিরই আমরা এই শোক কাটিয়ে উঠতে পারব। এরপর সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করব। পর্যায়ক্রমে সাংগঠনিক টিম গঠন করে তৃণমূলের অসম্পর্ণ সব কমিটি করা হবে বলে আমরা আশা করছি। ছাত্রদল সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে ১১৭টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। এর মধ্যে ৪৩টি জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি, বাকিগুলো আংশিক কমিটি। সারা দেশে এখন ১০টি সাংগঠনিক টিম কাজ করছে। তারা পৌর, থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও কলেজ পর্যায়ের কমিটি নিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনাকালেও ছাত্রদল সাংগঠনিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। সারা দেশেই এখন টিম কাজ করছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে সব কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তার নির্দেশেই সময়মতো ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হবে।