ফেসবুকে কাব্যরচনা, হলিউডে ছবির ঘোষণা : শীর্ষ ঋণখেলাপি আজিজকে খুঁজে পাচ্ছে না দুদক!

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ অর্থ আত্মসাৎ এবং পাচারের অভিযোগ আসার পর থেকে সবার ‘অগোচরে’ দিন পার করার পর আবারো নতুন করে আলোচনায় শীর্ষ ঋণখেলাপি, জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আবদুল আজিজ। সম্প্রতি ফেসবুকে নিজের ভেরিফাইড আইডিতে হলিউডে ছবি বানানোর ঘোষণা দিলে কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে তা নিয়ে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। বছরের শুরুতে অর্থমন্ত্রী কর্তৃক প্রকাশিত শীর্ষ খেলাপি প্রতিষ্ঠানসমূহের তিনটিই আবদুল আজিজ এবং তার পরিবারের সদস্যদের।আজিজ এবং তার ভাইয়ের কাছে কেবল জনতা ব্যাংকের পাওনাই প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা!ব্যাংকের পক্ষ থেকে আজিজসহ তার পরিবারের ঋণগ্রহীতা সব সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করা হলেও তার কোনো সন্ধান তাদের কাছে নেই বলে জানায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
দুদকের মামলায় তার ভাই এমএ কাদের এক বছর জেল খেটে শর্তসাপেক্ষে জামিনে মুক্তি পেলেও শর্ত অনুযায়ী ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করছেন না। আর আজিজের খোঁজ পাচ্ছেন না কেউই! ‘দেড় বছর ধরে আজিজকে খুঁজছে দুদক’ শিরোনামে সম্প্রতি সংবাদও প্রকাশ পেয়েছে। অথচ ফেসবুকে নিয়মিত কাব্যরচনার পাশাপাশি সম্প্রতি চটকদার খবর দিয়ে অনেকটা যেনো স্বেচ্ছায় নিজেকে নতুন করে আলোচনায় আনতে চেয়েছেন তিনি। ‘প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ’, কবিগুরুর এই লেখাকে অনুকরণ করে ২ আগস্ট আজিজ ফেসবুকে একটি স্বরচিত কবিতা পোস্ট করেন যার শুরুটা এমন- ‘আজ এই শ্রাবণ মাসে- তোমার চোখে তাকিয়ে হয়েছে আমার সর্বনাশ’।
২৪শে জুলাই নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মদিন উপলক্ষে তিনি ‘মহৎ মানুষ’ নামে আরেকটি স্বরচিত কবিতা পোস্ট করেন যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা চলছে। নেটিজনরা জিজ্ঞাসা করছেন, অসহায়ের অধিকার আদায়ে নিজের সারাটা জীবন উৎসর্গ করা ম্যান্ডেলাকে নিয়ে কবিতা পোস্ট করে, (ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ এর মাধ্যমে) অসহায়ের সম্পদ হরণকারী আজিজ আসলে কি প্রমাণ করতে চান? তিনি কি নিজেকে মাদিবার (দেশবাসী আদর ও শ্রদ্ধা করে ম্যান্ডেলাকে মাদিবা নামে ডাকত) মতো নিজেকে মহৎ দাবি করতে চান? নাকি এটা সাধারণ মানুষকে নিয়ে তার নিছক তামাশা?
এখানেই শেষ নয়। ৮ই জুন আজিজ ‘চাহিবা মাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে’ নামের আরেকটি কবিতা পোস্ট করেন যার শুরু: ‘চাহিবা মাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে লিখা থাকে টাকার উপরে।’ আজিজের এই পোস্ট নিয়েও হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা।
সম্প্রতি ৩রা আগস্ট যে পোস্ট দিয়ে তিনি নতুন করে আলোচনায় এসেছেন তা ঘিরেও চলছে সমালোচনা। তার ভাষায়: ‘হলিউডের সাথে যৌথ প্রযোজনায় ৩টা সিনেমা নির্মাণ করছি । নির্মাণ শেষে হলিউডের ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির মাধ্যমে সিনেমা গুলো ওয়ার্ল্ডওয়াইড রিলিজ পাবে। আমেরিকা যাচ্ছি, তবে আমি একা না; বাংলাদেশ থেকে আরো অনেক শিল্পী ও কলাকুশলীদের নিয়ে যাচ্ছি।…
আর যদি ‘MR-9 – মাসুদ রানা’ ব্যবসা সফল হয়, বাংলাদেশের এবিএম সুমন সহ আরো অনেকেই হলিউডে প্রতিষ্ঠিত হবে। একবার প্রতিষ্ঠিত হ’য়ে গেলে, পরবর্তীতে তাঁরা সিনেমা প্রতি মিলিয়ন ডলার (নয় কোটি টাকা প্রায়) পারিশ্রমিক পাবে।’ হলিউডের সাথে যৌথ প্রযোজনায় ৩টি সিনেমা নির্মাণের কথা বললেও হলিউড সম্পর্কে আজিজের ন্যূনতম ধারণা রয়েছে কিনা এ বিষয়ে সন্দিহান সিনেমাবোদ্ধারা। তারা বলছেন, হলিউডে প্রতিষ্ঠিত হলে কেউ ‘নয় কোটি টাকা পারিশ্রমিক পাবে’ এরকম কথা হাস্যকর। হলিউডে বা পৃথিবীর কোন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেই প্রতিষ্ঠিত শিল্পীর জন্য কোন নির্ধারিত পারিশ্রমিক নেই। এদিকে দুদক এবং জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পাওনা আদায়ের জন্য তাকে খুঁজে না পেলেও এই পোস্টে তিনি নিজেই লিখে (আমেরিকা যাচ্ছি, তবে আমি একা না; বাংলাদেশ থেকে আরো অনেক শিল্পী ও কলাকুশলীদের নিয়ে যাচ্ছি) জানিয়েছেন যে, তিনি বহাল তবিয়তে দেশেই অবস্থান করছেন!