মাঠে ভালোই ‘রাঁধতে’ জানেন জার্নাব্রি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বার্সেলোনার বিপক্ষে ৮-২ গোলে জেতা কোয়ার্টার ফাইনালে একবার ‘রান্না’ করেছিলেন। সার্জ জার্নাব্রি লিওঁর বিপক্ষে সেমিফাইনালে রাঁধলেন দু’দুবার। রবিবার পিএসজির বিপক্ষে ফাইনালেও হয়তো নতুন কোনও রেসিপি নিয়ে রান্না করবেন বায়ার্ন মিউনিখের জার্মান মিডফিল্ডার। চ্যাম্পিয়নস লিগটাই স্বপ্নের মতো যাচ্ছে বায়ার্ন মিউনিখ উইঙ্গারের কাছে। নয় ম্যাচ খেলে ৯ গোল করলেন, মানে নয়বার ‘রান্না’ হলো আরকি!
অনেকেই হয়তো অবাক হচ্ছেন। মাঠের মধ্যে জার্নাব্রির রান্না-বান্নাটা আবার কীরকম? আসলে রান্না তো তিনি করেন না, রান্নার ভঙ্গি করেন। গোল উদযাপন করেন রান্না করার ভঙ্গিতে। বাঙালির রান্নাঘরে ডাল ভালোভাবে ফোটানোর জন্য যেভাবে ঘুটনি দিয়ে ঘোটা দেওয়া হয়, সেরকম একটা ভঙ্গি ফুটিয়ে তোলেন হাতের মুদ্রায়। গোলের উদযাপন অনেকেই অনেকভাবে করেন। তবে মানতেই হবে ২৫ বছর বয়সী বায়ার্ন মিউনিখ উইঙ্গারের উদযাপন একেবারেই ভিন্ন ধাঁচের। এমন উদযাপনের সেরকম কোনও অর্থ বা মাহাত্ম্য নেই। জার্নাব্রি নিজেই বলেছেন তার প্রিয় এক ক্রীড়াতারকাকে অনুসরণ করেই এমনটা করেন গোল উদযাপনে। প্রিয় এই তারকা যুক্তরাষ্ট্রের বাস্কেটবল খেলোয়াড় জেমস হার্ডেন। খেলেন এনবিএ লিগের দল হিউস্টন রকেটসে। বাস্কেটবলের অসাধারণ এই অফেন্সিভ খেলোয়াড় দলের প্রয়োজনে কঠিন অবস্থানে থেকেও স্কোর করে দুই হাতে এরকম রান্নার ভঙ্গি করেন। বাস্কেটবলপ্রেমী জার্নাব্রি জেমস হার্ডেনের দেখাদেখি গোল করার পর তাই ‘রান্না করতে’ শুরু করলেন। এই গোল উদযাপন ভঙ্গিটি এখন ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ফুটবল বিশ্বে।
খুব বেশিদিন হয়নি জার্নাব্রির এমন উদযাপনে দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে । গত বছর এপ্রিলে বুন্দেসলিগায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করে বায়ার্ন। দলের চতুর্থ গোলটি করার পরই জার্নাব্রি রান্না করার ভঙ্গি করলেন। উদযাপনে সঙ্গী হয়ে সতীর্থ ডেভিড আলাবা রান্না করা ব্যঞ্জন মুখেও তুললেন, আসলে অভিনয় করলেন! বায়ার্ন মিউনিখ টেলিভিশনের কাছে জার্নাব্রি পরে উদযাপন ভঙ্গির রহস্য ফাঁস করে দেন, ‘এনবিএ তারকা জেমস হার্ডেনের খেলা আমার খুব ভালো লাগে। তিনি যেভাবে স্কোর করে রান্না করার ভঙ্গিতে তা উদাযাপন করেন ওটা আরও ভালো লাগে। আমি তাকেই নকল করি। তিনি খুবই আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়। বাস্কেটবলের মতো ফুটবলে অতো পয়েন্ট করার তো সুযোগ নেই, একটা গোল পেলেই তাই ওভাবে উদযাপন করি আমি। তার মতোই আক্রমণাত্মক খেলোয়াড় আমি, চাই অনেক গোল করতে।’
জার্নাব্রি যে অতি আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়, সেই পরিচয়টা ফুটবলের পৃথিবীতে আর গোপন নেই। ১৪ আগস্ট, ২০২০- চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে বার্সেলোনার লজ্জার ইতিহাস গড়ার পেছনে তার অনেক ‘অবদান’। মেসিদের সেদিন তিষ্ঠোতে দেননি। বায়ার্ন ইঞ্জিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশই ছিলেন তিনি। আবার অলিম্পিক লিওঁর বিপক্ষে সেমিফাইনাল জয়ে বায়ার্নের আসল লোকটাও এই আইভরিয়ান-জার্মান। বায়ার্ন জিতেছে ৩-০ গোলে, ১৮ ও ৩৩ মিনিটে প্রথম দুটি গোল করেই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিয়েছেন। এ ম্যাচের আগে সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, বায়ার্ন লিওঁকে খুব সম্মান করেই মাঠে নামবে। কারণ তারা আগের দুই ম্যাচে ‘ফেবারিট’ দলকে বিদায় করে সেমিফাইনালে এসেছে। দ্বিতীয় রাউন্ডে জুভেন্টাসকে বিদায় করার পর কোয়ার্টার ফাইনালে অবিসংবাদিত ফেবারিট ম্যানচেস্টার সিটিকে হারিয়েছে ৩-১ গোলে। ‘সবাই বলছে ওদের বিপক্ষে আমরা ফেবারিট। উদ্বেগটা এখানেই। আমাদের শুরু থেকেই সতর্ক হয়ে খেলতে হবে’-বলেছিলেন জার্নাব্রি। এই প্রতিশ্রুতি রাখতে ম্যাচের শুরু থেকেই বায়ার্নের হয়ে সবচেয়ে সতর্ক থেকে খেলেছেন। আক্রমণের তীব্রতম মশালটাও জ্বালিয়েছেন তিনি। লিওঁর প্রাথমিক হুমকি উপেক্ষা করে দুবার বল পাঠিয়েছেন ওদের জালে। জেমস হার্ডেনের মতো স্কোর হয়তো করতে পারবেন না, তবে বোঝাই যাচ্ছে বাস্কেটবলের স্কোরিংয়ের মতো আক্রমণাত্মক মেজাজে এগিয়ে চলেছে জার্নাব্রির ফুটবল ক্যারিয়ার। বায়ার্ন এই মেজাজটাকে খুব পছন্দ করছে। এটি বেশি করে মনে ধরছে আসলে জার্মান জাতীয় দলের। ২০১৪ বিশ্বকাপজয়ী জার্মানি গত বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডেই উঠতে পারেনি। সেই জ্বালাটা হয়তো অনেক বড় সাফল্যে জুড়োনোর সুযোগ হবে ২০২২ বিশ্বকাপে। যদি জার্নাব্রি নিজের মধ্যে ধরে রাখতে পারেন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ‘রান্না’ করে খাওয়ার মেজাজ! বাবা আইভরিয়ান, মা জার্মান। ১৯৯৫ সালের জুলাইয়ে জন্ম জার্মানির স্টুটগার্টে। সেই সুবাদে নিজেকে জার্মান ভাবেন, তাই গায়ে তুলেছেন জার্মানির সোনালি-সাদা জার্সি। নিজেকে আইভরিয়ান ভাবলেও তার ক্ষতি ছিল না। বাবার পরিচয়ে আইভরিকোস্টের জার্সি গায়ে উঠতেই পারতো। ভাগ্যিস সেটা করেননি! তাই তার হাতে আরও অনেক মজাদার খাবার পরিবেশনার অপেক্ষায় থাকতে পারছে জার্মানি।