হাসপাতাল ছাড়ল ময়দা গোলা পানি খাওয়া সেই যমজ দুই শিশু

0

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা॥ হাসি মুখে হাসপাতাল ছাড়ল যমজ শিশু সাফিয়া ও মারিয়া। মা-বাবার মুখেও ছিল হাসি। কিছুদিন আগেও দুই শিশুর মুখে দুধ তুলে দেয়ার জন্য কেঁদেছেন মা। পুষ্টিহীনতায় থাকা দুই শিশুর পুষ্টির ঘাটতিও ইতোমধ্যে অনেকটা পূরণ হয়েছে। বুধবার সকালে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয় আট মাস বয়সী দুই শিশুকে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে দুই শিশুকে নিয়ে হাসপাতাল ছাড়েন মা-বাবা। এরপর সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি ইউনিয়নের ফয়জুল্লাহপুর গ্রামের বাড়িতে যান তারা।
জন্মের পর তিন মাস তাদের ভাগ্যে কেনা দুধ জুটলেও অভাবের তাড়নায় পরে আর জোটেনি। পাঁচ মাস ধরে ময়দা গোলা পানি খেয়েছে যমজ শিশু। পুষ্টিকর খাবার না পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে যমজ শিশু সাফিয়া ও মারিয়া। এরপর ২৮ জুলাই তাদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন মা-বাবা। মানবিক এ ঘটনাটি নিয়ে জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশের পর জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামাল, পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানসহ অনেক হৃদয়বান মানুষ তাদের পাশে দাঁড়ান। নগদ টাকা ও সার্বিক সহযোগিতা করেন তাদের। হাসপাতাল থেকে ওষুধপত্র ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করেন চিকিৎসক অসীম কুমার সরকার।
যমজ শিশুর মা স্বপ্না বেগম বলেন, ময়দা, আটা ও চালের গুঁড়া পানিতে মিশিয়ে খাইয়েছি গত পাঁচ মাস। কেউ সহযোগিতা করেনি। তারপর শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করি। এরপর সংবাদ হওয়ায় সবকিছু স্বপ্নের মত বদলে যায়। এখন আর দুধের অভাব নেই। ৫০ হাজার টাকার বেশি সহযোগিতা পেয়েছি। দুধ কিনে দিয়েছেন অনেকে। নতুন জামা দিয়েছেন। চিকিৎসক সহযোগিতা করেছেন। সবাইকে ধন্যবাদ। শিশু দুটির বাবা মোটর ভ্যানচালক আনিসুর রহমান বলেন, আমি একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে মোটর ভ্যানটি কিনেছিলাম। খুব কষ্টে দিন পার হয় আমাদের। সংবাদের পর আমার এনজিওর সেই ঋণ ২২ হাজার টাকা ও একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের ১৫ হাজার টাকার ঋণ পরিশোধ করে দিয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এখন আমার ঋণ নেই, কিস্তির চিন্তা নেই। ভ্যান চালিয়ে ভালোভাবে সংসার চালাতে পারব। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ অসীম কুমার সরকার বলেন, মূলত অপুষ্টিজনিত কারণে সাফিয়া ও মারিয়া অসুস্থ হয়ে পড়ে। তবে এখনও পুষ্টিকর খাবার পাওয়ায় শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। যেহেতু দীর্ঘ পাঁচ মাস পুষ্টিকর খাবার পায়নি সেহেতু পুরোপুরি সুস্থ হতে কিছুদিন সময় লাগবে। তবে আগের তুলনায় অবস্থা এখন অনেক ভালো।