চৌগাছায় রাজাকারের বাবার নামে বাজারের নামকরণের প্রতিবাদে মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষুব্দ

0

চৌগাছা (যশোর) সংবাদদাতা॥ যশোরের চৌগাছায় সদর ইউনিয়নের কড়ইতলা বাজারে রাজাকারের পিতা ও স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে পরিচিত আহমদ আলীর (আহম্মদ নগর) নাম লেখা একটি সাইন বোর্ডে “বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন” লেখা কেন জানতে চইলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। বুধবার বিভিন্ন সংবাদপত্রে রাজাকারের পিতা ও পিস কমিটির সদস্যের নামে বাজারের নামকরনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী। যা বিভিন্ন সংবাদ পত্রে প্রকাশিত হয়। বুধবার সকালে বীর মুক্তিযোদ্ধারা সরেজমিনে বাজারটি পরিদর্শন করেন। সেখানে তারা সাইনবোর্ডের লেখা দেখে ক্ষুদ্ধ হন।
এ ব্যাপারে চৌগাছা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার নুর হোসেন বলেন, আহমদ আলী ছিলেন স্বাধীনতা বিরোধী একজন মুসলিম লীগের লোক। ৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন পিস কমিটির সদস্য। তার ছেলে এম মুজাহিদ আলী ওরফে চুন্টে ছিল একজন ট্রেনিংপ্রাপ্ত অস্ত্রধারী রাজাকার। উপজেলার রাজাকারের তালিকায় ৮ নাম্বারে তার নাম রয়েছে। খুলনায় বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণকারি রাজাকার মুজাহিদ স্বাধীনতার পরে (সম্ভবত ১৯৭২ সাল) জেল খেটেছেন। তার পিতা এবং তার পরিবার স্বাধীনতা বিরোধী। তারপরও কিভাবে সেই স্বাধীনতা বিরোধীর নামে একটি বাজারের নামকরণ হয়। আর সে সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে “বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন” কেন জানতে চইলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, মুজাহিদ আলী একজন প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত অস্ত্রধারি রাজাকার। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রস্তুতকৃত তালিকায় ৮ নাম্বারে এই রাজাকারের নাম রয়েছে। তার পিতা ও পরিবার স্বাধীনতা বিরোধী। তার নামে বাজারের নামকরন মেনে নেবেন না মুক্তিযোদ্ধারা। মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) লিডার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ১৯৭১ সালের ১৯ নভেম্বর চৌগাছা বাজার স্বাধীন করে (বর্তমান তহসিল অফিস) কালিতলায় বিকাল ৩টার সময় আমিই প্রথম আমার সঙ্গী যোদ্ধাদের নিয়ে স্বাধীন পতাকা উত্তোলন করি। আমার আধা ঘন্টা পরে যশোরের সাবেক জেলা প্রশাসক আব্দুল মালেক মুজিব বাহীনির আজিজকে নিয়ে চৌগাছা ডাকবাংলোতে পাকিস্থানী পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। মুজাহিদ সম্বন্ধে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে আমার (কাসফ্রেন্ড) স্কুল বন্ধু। মুজাহিদ ছিল ট্রেনিংপ্রাপ্ত অস্ত্রধারী রাজাকার। তার পিতা আহমদ আলী ছিলেন মুসলিম লীগের লোক। সে সময় মুসলিম লীগের লোক প্রায় সকলেই ছিল পিস কমিটির সদস্য। সেই রাজাকার মুজাহিদের বাপ, স্বাধীনতা বিরোধী একজন ব্যক্তির নামে কিভাবে একটি বাজারের নাম করন হয়?
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বলেন, মুজাহিদ আমাদের তালিকা ভুক্ত একজন সশস্ত্র রাজাকার। তার পরিবারের কোন লোক মুক্তিযুদ্ধের সাথে স¤পৃক্ত নয়। আর আহমদ আলী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ছিলনা বরং তিনি পাকিস্তানিদের সাথে ছিলেন। পিস কমিটির সদস্যের নাম ঠিকানা আমাদের কাছে না থাকলেও স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে তার গভীর আতাত ছিল। আজ পর্যন্ত তাদের পরিবারের কোন লোক স্বাধীনতার স্বপরে শক্তি সাথে জড়িত নয়। স্থানীরা ওই বাজারকে মুক্তিযোদ্ধা নগর বলে দাবী করেছেন আমরা (মুক্তিযোদ্ধারা) তাদের সাথে একাত্বতা ঘোষনা করছি। এই সত্য সংবাদ যে সকল গনমাধ্যমকর্মীরা প্রকাশ করেছেন আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। স্বাধীনতার পরে চৌগাছায় কোন মুক্তিযোদ্ধার নামে সড়ক, বাজার বা কোন প্রতিষ্ঠান হয়নি। আর কি ভাবে একজন রাজাকারের পিতা যে কিনা নিজেই স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন তার নামে বাজারের নামকরন হবে। সেই সাইনবোর্ডে আবার বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন লেখা তার মানে কি ?। তিনি বলেন, এই জন্যে কি আমরা যুদ্ধ করে ছিলাম ?, এই দিন দেখার জন্যে কি ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছেন ?, এ বিষয়ে উপজেলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম হাবিবুর রহমান ও আব্দুস সালাম চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলি এনামুল হকের সাথে কথা বলে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলি এনামুল হক বলেন, আমি নতুন এসেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত যা জানতে পেরেছি তাতে অফিসিয়ালি এমন কোনো দলিল আমি পাইনি। সরকারি নির্দেশনা ছাড়া কোন কিছুর নাম করণ করার এখতিয়ার কারো নেই। উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আপনার কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, উনারা এসেছিলেন। আমি তাঁদেরকে বলেছি এরকম কোন সরকারি দলিল এখনও আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি। তবে কিভাবে উপজেলা প্রশাসনের কথা সাইন বোর্ডে লেখা হলো সেটি তদন্ত করে দেখছি। আজ সরজমিনে তদন্তে যাবেন বলেও বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং গনমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলি এনামুল হক।