ফের ২ হাজার ডলারের ওপরে স্বর্ণের আউন্স

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কোনোভাবেই এর লাগাম টানা সম্ভব হচ্ছে না। এ ধারাবাহিকতায় চলতি মাসের শুরুতে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ২ হাজার ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়ে যায়। মাঝের কয়েকদিন কিছুটা কমে এলেও সর্বশেষ কার্যদিবসে মূল্যবান ধাতুটির দাম ফের আউন্সপ্রতি ২ হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাহিদায় প্রবৃদ্ধি ও বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে স্বর্ণের দাম কমার দৃশ্যমান কোনো লক্ষণ নেই। ফলে আগামী দিনগুলোয় আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবান ধাতুটির দাম দীর্ঘমেয়াদে চাঙ্গা থাকতে পারে।
স্বর্ণের বাজারে ৫ আগস্ট নতুন ইতিহাস রচিত হয়। ওইদিন লেনদেনের শুরুতেই স্বর্ণের আউন্স ২ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরো চাঙ্গা হতে শুরু করে মূল্যবান ধাতুটির দাম। যুক্তরাষ্ট্রের স্পটমার্কেটে দিনের মধ্যভাগে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ওঠে ২ হাজার ৫২ ডলার ৩০ সেন্টে। তবে দিন শেষে মূল্যবান ধাতুটির স্পটমূল্য দাঁড়ায় আউন্সপ্রতি ২ হাজার ৩৫ ডলার ৯০ সেন্টে। ইতিহাসে এর আগে কখনই ২ হাজার ডলারের ওপরে ওঠেনি স্বর্ণের আউন্স।
পরবর্তী কয়েকদিন চাঙ্গা ছিল মূল্যবান ধাতুটির বাজার পরিস্থিতি। এ ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের স্পটমার্কেটে প্রতি আউন্স স্বর্ণ ২ হাজার ৬৫ ডলারের বেশি দামেও বিক্রি হয়েছে। মাসের মাঝামাঝি সময়ে এসে স্বর্ণের দাম কিছুটা কমে আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৯৩০ ডলারের কাছাকাছি নেমে এসেছিল। তবে সর্বশেষ কার্যদিবসে ফের চাঙ্গা হয়ে উঠেছে স্বর্ণ। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের (ডব্লিউজিসি) প্রাইস ইনডেক্স অনুযায়ী, এদিন যুক্তরাষ্ট্রের স্পটমার্কেটে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম উঠেছে ২ হাজার ৭ ডলার ৫০ সেন্টে। এর আগের দিনও আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৯৮২ ডলার ৮১ সেন্টে বেচাকেনা শেষ হয়েছিল স্বর্ণের।
এক-দেড় মাস আগেও বাজার বিশ্লেষকরা বলছিলেন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ২ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এমন দাবি নাকচ করে দিয়েছিল মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছিল, স্বর্ণের আইন্স ২ হাজার ডলারের মাইলফলক ছুঁয়ে যেতে এক বছরের মতো সময় লাগাতে পারে। তবে এ পূর্বাভাস ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কয়েক সপ্তাহেই ইতিহাসের সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠেছে স্বর্ণের দাম।
স্বর্ণের বাজার চাঙ্গা হয়ে ওঠার পেছনে নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারী সবচেয়ে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। করোনা মহামারী চলতি বছরের শুরু থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম প্রায় ৩০ শতাংশ বাড়িয়েছে। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চীন-মার্কিন রাজনৈতিক উত্তেজনা। এসব কারণে মূল্যবান ধাতুটির দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে মাইনলাইফ করপোরেশনের সিনিয়র রিসোর্স অ্যানালিস্ট গেভিন ওয়েনডেট বলেন, সাধারণত বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা কিংবা ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা—এ দুই কারণে স্বর্ণের বাজার চাঙ্গা হয়। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দুটো উপাদান বিদ্যমান। করোনা মহামারীতে চরম অনিশ্চিত অবস্থার মধ্য দিয়ে সময় পার করছে বিশ্ব অর্থনীতি। অন্যদিকে চীন-ভারত সীমান্তে রীতিমতো যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়েছিল। অস্থিরতা রয়েছে দুই কোরিয়ার সীমান্তেও। বেলারুশ, থাইল্যান্ড, লেবাননসহ দেশে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা আগের তুলনায় বেড়েছে। এসব কারণ আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও অর্থনীতিতে উদ্বেগ বাড়িয়েছে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধিতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।
রয়টার্সের পণ্যবাজারবিষিয়ক বিশ্লেষক ওয়াং তাও বলেন, সাধারণত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সংকটের সময় বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণে বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেন। করোনাকালেও একই পরিস্থিতি দেখা গেছে। তুলনামূলক নিরাপদ বিবেচনা করায় স্বর্ণে বিনিয়োগ হু হু করে বেড়েছে। এ প্রবণতা চাহিদা বাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়েছে। আগামী দিনগুলোয় বিশ্বজুড়ে করোনা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি না হলে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার করাঘাত দ্রুত প্রশমিত না হলে স্বর্ণের দাম কমে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
রয়টার্স, মার্কেটওয়াচ ও ব্লুমবার্গ অবলম্বনে