অপয়া থেকে সফল নায়িকা, ক্যান্সারও জয় করেছেন মনীষা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ মরণব্যাধি ক্যান্সারও হারাতে পারেনি যাকে, তাকে ক্যারিয়ারের শুরুতে পরপর ব্যর্থতা কীভাবে ঠেকিয়ে রাখবে?
ক্যারিয়ারের শুরুতেই টানা কয়েকটি ছবিতে ব্যর্থতার খোলস থেকে বেরিয়ে নিজেকে যোগ্য অভিনেত্রী হিসেবে প্রমাণ করেছেন তিনি। এভাবেও ফিরে আসা যায়, দেখিয়ে দিয়েছেন মনীষা কৈরালা।
সবাই যখন ‘অপয়া’ বলে ডাকতে শুরু করলো তখনই মনীষা ঘুরে দাঁড়ালেন দারুণভাবে ‘১৯৪২ এ লাভ স্টোরি’ ছবি দিয়ে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। কাজ করেছেন তিনি শ্রীদেবী, মীনাক্ষি, মাধুরীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। নায়িকা হয়ে সফল হয়েছেন নব্বই দশকে নতুন রাজত্বের জন্ম দেয়া তিন খান শাহরুখ-আমির ও সালমানের সঙ্গে।
গতকাল ১৬ আগস্ট ছিলো মনীষার জন্মদিন। এ বছরে ৫০ বছরে পা রাখলেন ক্যান্সার জয় করা এই অভিনেত্রী। জন্মদিনে কাছের মানুষ, বন্ধু ও ভক্ত-অনুরাগীদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন তিনি।
নেপালের কাঠমাণ্ডুতে দুঁদে রাজনীতিকদের পরিবারে মনীষা কৈরালার জন্ম সেই ১৯৭০ সালের ১৬ আগস্ট। তার বাবা প্রকাশ কৈরালা নেপালের সাবেক মন্ত্রী। দাদা বিশ্বেশ্বরপ্রসাদ কৈরালা ছিলেন নেপালের বাইশতম প্রধানমন্ত্রী।
শৈশব থেকেই মনীষার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিবিড়। তার ছোটবেলা কেটেছে বারাণসীতে, দাদা-দাদীর কাছে। পরে দিল্লি এবং মুম্বাইয়ে। তখন থেকেই ভারত ছিল মনীষার সেকেন্ড হোম। স্কুলে পড়ার সময় মনীষার স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। কিন্তু চিকিৎসক বা বংশের ধারা মেনে রাজনীতি, কোনোটাই হতে পারেননি তিনি। ভাগ্য
বিধাতা তাকে নির্ধারিত করে রেখেছিলো অভিনয়ের জন্যই। তাই অভিনয়ের সুবাস ছড়ালেন তিনি এই উপমহাদেশের সিনেমায়।
শুরুটা করেছিলেন শখের মডেল হিসেবে। সংক্ষিপ্ত সেই ক্যারিয়ারের হাত ধরে চলে আসেন অভিনয়ে। বারাণসীর বসন্তকন্যা মহাবিদ্যালয় থেকে দশম শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মনীষা। ক্লাস টেনের চূড়ান্ত পরীক্ষার পর মজার ছলেই নেপালি ভাষার ছবিতে প্রথম অভিনয়। ১৯৮৯ সালে মুক্তি পায় সেই ছবি ‘ফেরি ভেতৌলা’।
চারদিকে এতো প্রশংসা আর নামডাক ছড়িয়ে পড়লো যে অভিনয়ের প্রতি মোহ তৈরি হয়ে গেল। অভিনয়কেই ক্যারিয়ার হিসেবে নেবেন সেই সিদ্ধান্তে মনীষা চলে আসেন মুম্বাই। নানা গল্পের পথ পেরিয়ে ১৯৯১ সালে সুভাষ ঘাইয়ের পরিচালনায় ‘সওদাগর’ ছবি দিয়ে বলিউডে যাত্রা করেন মনীষা কৈরালা।
কিন্তু এরপর ‘ফার্স্ট লাভ লেটার’, ‘আনমোল’ এবং ‘ধনবান’ ছবিতে একটানা ব্যর্থতা। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ান তিনি ‘১৯৪২ এ লাভ স্টোরি’ ছবি দিয়ে। আর ‘বম্বে’, ‘অগ্নিসাক্ষী’, ‘ইয়ারানা’, ‘দারার’, ‘ইন্ডিয়ান’, ‘খামোশি দ্য মিউজিক্যাল’ ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম সারির নায়িকা হয়ে ওঠেন মনীষা।
‘খামোশি’ ছবিতে মনীষার অভিনয় বলিউডের আইকনিক কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম বলে মানা হয়। বক্স অফিসে ব্যর্থ হলেও এই ছবি মনীষার মুকুটে নতুন পালক যোগ করে।
মনীষার ক্যারিয়ারে আরও উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হলো ‘গুপ্ত: দ্য হিডেন ট্রুথ’, ‘দিল সে’, ‘কাচ্চে ধগে’, ‘মান’, ‘যুগপুরুষ’ এবং ‘আকেলে হাম আকেলে তুম’। বলিউডের পাশাপাশি দক্ষিণী ভাষার ছবিতেও দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন তিনি।
ক্যারিয়ারে অনেক নায়কের সঙ্গে সফল হলেও আমির খানের সঙ্গে মনীষার রসায়ন বক্স অফিসে তুমুল সাড়া ফেলেছিলো। দুজনের প্রেম নিয়েও অনেক মুখরোচক গল্প শোনা গিয়েছিলো তাদের জুটির সোনালি দিনগুলোতে। তবে নানা পাটেকারের সঙ্গে মনীষার প্রেম বলিউডে অনেক ডালপালাই ছড়িয়েছিলো। শোনা গিয়েছিলো তাদের বিয়ের খবরও। যদিও শেষ পর্যন্ত তার সত্যতা পাওয়া যায়নি।
২০০০ সাল নাগাদ ক্যারিয়ারে ভাটার টান আসতে মনীষা চলে আসেন টেলিভিশনে। ২০০৪ সালে তিনি চলে যান নিউইয়র্ক। ফিল্ম মেকিংয়ের উপর ডিপ্লোমা করেন নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ইন্ডাস্ট্রিতে ফিরে এসে আবার অভিনয় শুরু করেন। কিন্তু মনীষার নতুন ইনিংস সাফল্য পায়নি। নায়িকা বা সহ অভিনেত্রী, সব ভূমিকায় দর্শকের মন জয় করতে ব্যর্থ হন তিনি। এই পর্যায়ে তার ক্যারিয়ারে উল্লেখ করার মতো কাজ হল ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘খেলা’ ছবিতে অভিনয়।
২০১০ সালের ১৯ জুন মনীষা বিয়ে করে নেপালি শিল্পপতি সম্রাট দাহালকে। তাদের আলাপ হয়েছিল ফেসবুকে। সনাতনী নেপালি রীতিতে বিয়ে করেন দু’জন। মধুচন্দ্রিমা হয় ফ্লোরিডায়। কিন্তু দু’বছরের মাথায় ভেঙে যায় তাদের সংসার। সেই বছরই আরও ভয়াবহ এক দুঃসংবাদ শুনেন মনীষার ভক্তরা। জানা যায় এই অভিনেত্রী ওভারিয়ান ক্যানসারে আক্রান্ত।
প্রথমে মুম্বাই, তারপর তার চিকিৎসা হয় আমেরিকায়। সফল অস্ত্রোপচার, একটানা কেমোথেরাপির পর মনীষাকে ২০১৭ সালে ক্যানসারমুক্ত বলে ঘোষণা দেন চিকিৎসকরা। আবারও ফিরেছেন অভিনয়ে। ক্যানসারকে হারিয়ে ফিরে এসে মনীষার প্রথম ছবি ‘চেহরে : এ মডার্ন ডে ক্লাসিক’। সম্প্রতি প্রশংসিত হয়েছে ‘ডিয়ার মায়া’ এবং ‘সাঞ্জু’ ছবিতে মনীষার অভিনয়।
অভিনয়ের পাশাপাশি ক্যানসারের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতেও কাজ করছেন তিনি। তাকে দেখা যায় নানারকম সমাজসেবামূলক কাজেও।