করোনাকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে কে যাবেন?

0
সাজেদুল হক
দুনিয়ার তাবৎ বিজ্ঞানীদের ঘুম হারাম। ইতিহাসের এক বিপর্যয়কর মুহূর্তে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে মানবজাতি। কখন পাওয়া যাবে একটি ভ্যাকসিন? কখন পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে করোনা? রাশিয়া অবশ্য এরই মধ্যে করোনার ভ্যাকসিন উৎপাদন শুরু করেছে। ‘প্রথম ভ্যাকসিন’টির ঘোষণা যদিও কোনো বিজ্ঞানীর মুখ থেকে আসেনি। এক রাজনীতিবিদ বিশ্ববাসীকে এ খবর দেন। ভ্লাদিমির পুতিন। বিশ্ব রাজমঞ্চের অন্যতম প্রধান চরিত্র। কিন্তু তার টিকা বিশ্ববাসীকে আশ্বস্ত করতে পারেনি। এমনকি তার দেশের স্বাস্থ্যকর্মীদের অর্ধেকও সে টিকা নিতে রাজি হননি।
তবে পুতিনের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেননি আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সম্ভবত তার বক্তব্যটি সেভাবে খেয়াল করেনি। না হয়, সারা দুনিয়াতেই তো এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং চমকপ্রদ এক সংবাদ। করোনা নেই এমন ঘোষণা বিভিন্ন দেশে আমরা শুনেছি। একটি দেশে আইন করে ‘করোনা’ শব্দকে নিষিদ্ধ করার খবরও পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু বেশিদিন লাগবে না করোনা বাংলাদেশ থেকে চলে যাবে এবং ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হবে কি-না জানি না- এমন বক্তব্য সত্যিই অভিনব। বিজ্ঞানীদের তো বটেই, অন্যান্য দেশের ক্ষমতায় থাকা রাজনীতিবিদদেরও মনোসংযোগের সঙ্গে জাহিদ মালেকের বক্তব্য শোনা উচিত। কী বোকাই না ওইসব দেশের নেতারা! দিনরাত প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যাচ্ছেন ভ্যাকসিন পেতে। হাজার হাজার কোটি টাকার চুক্তি করছেন নানা দেশের কোম্পানির সঙ্গে। কোনো বিকল্পই হাতছাড়া করতে রাজি নন তারা। এর কারণ- যে বিশ্বাসযোগ্য টিকা আগে পাওয়া যায় সেটিই যেন দেশের জনগণকে দেয়া যায়। আমাদের অবশ্য এ ধরনের কোনো প্রচেষ্টার খবর এখনো পাওয়া যায়নি। এমনকি পাশের বাড়ির দেশেও বেশকিছু টিকার পরীক্ষা চলছে। আমাদের এখানে চীনা একটি টিকার পরীক্ষা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।
গত ৮ই মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের খবর জানানো হয়। বলা হয়, তিনজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দু’জন ইতালি ফেরত। বাকি একজন বিদেশ ফেরত আক্রান্ত একজনের পরিবারের সদস্য। তখন অবশ্য ব্রিফ করতো সরকারি প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর। পরবর্তীতে পানি অনেক দূর গড়িয়েছে। করোনায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌনে তিন লাখ অতিক্রম করেছে। অফিসিয়াল তালিকায় মৃত্যুর সংখ্যা ৩ হাজার ৬৫৭। আইইডিসিআরের থেকে ব্রিফিং এক পর্যায়ে হস্তান্তর হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। শুরুতে প্রশ্ন করার সুযোগ থাকলেও এক সময় মান্যবরেরা জানিয়ে দেন, কোনো প্রশ্ন চলবে না। তবুও আমজনতার একধরনের আগ্রহ ছিল। আড়াইটায় টিভি সেটের সামনে বসতেন তারা। খবর নিতেন আপডেটের। করোনা বিদায়ের আভাস পেয়েই কিনা কে জানে- ব্রিফিংও এখন বন্ধ হয়ে গেছে। বিকাল বেলা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে করোনার আপডেট জানিয়ে দেয়া হয়। এক সময় দিনে ১৮ হাজারের বেশি টেস্ট হলেও বর্তমানে তা কখনো কখনো ১০ হাজারেরও নিচে নেমে আসছে। এটাও হয়তো করোনার বিদায়ের এক ধরনের আভাস! সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানও কী এক সময় বন্ধ হয়ে যাবে? আর তখনই তাহলে করোনার বিদায় হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে অবশ্য দ্বিমত পোষণ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাতে আমাদের কিছু যায়-আসে না। উনারা তো কতকিছুই বলেন। বিশেষজ্ঞদের কথা শোনার এতো টাইম কোথায়? জাহিদ মালেক অবশ্য জনগণের সাহসের প্রশংসা করেছেন। যদিও সাহসী জনতার বেশিরভাগই স্বাস্থ্যবিধি মানতে আগ্রহী নয়। থুঁতনিতে মাস্ক পরে কেউ কেউ চেষ্টা করছেন করোনা ঠেকানোর। বড় অংশ মাস্কের ধারেকাছেও যাচ্ছেন না। সামাজিক দূরত্ব মানাটাও এখন হয়েছে কেতাবী শব্দ। বাস্তবে তেমন কোথাও এর অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে না। করোনা বিদায়ের সম্ভাবনার খবরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তেমন উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে না। এই সময়ে মানুষ খুশি হতে ভুলে গেল কি-না কে জানে! তবে নানারকম মন্তব্য করছেন তারা। এমনি-এমনি করোনা চলে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে তারা খুব বেশি বিস্মিত নয়। এদেশে এমনি-এমনি অনেক ঘটনাই ঘটে। বিদেশ থেকে বিমানবন্দরের মধ্যদিয়েই যে বাংলাদেশে করোনা এসেছে এ নিয়ে সংশয় নেই। অফিসিয়াল বয়ান অনুযায়ী তা এসেছে ইতালি থেকে। এখন প্রশ্ন হলো, করোনা কি বিমানবন্দর দিয়েই বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিবে! করোনাকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে যাবেনই বা কে?