দুই সমাপনী পরীক্ষা এবার না নেওয়ার প্রস্তাব

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির এবারের সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করতে প্রস্তাব যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। সরকারপ্রধানের অনুমোদন পেলে এবার প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীা নেওয়া হবে না। প্রাথমিক ও গণশিা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আকরাম-আল-হোসেন মঙ্গলবার বলেন, মুখ্য সচিবের সঙ্গে তিনজন সচিবের (প্রাথমিক ও গণশিা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিা বিভাগ) একটি সভা হয়েছে, সেখানে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। “ওই সভার প্রেেিত আমাদের এ বিষয়ে প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে, আমরা সারসংপে তৈরি করেছি। শিা মন্ত্রণালয়ও সারসংপে তৈরি করছে। আগামী রবি-সোমবারের মধ্যে তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে।”
এবার যাতে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী এবং জেএসসি ও জেডিসি পরীা নিতে না হয় সেজন্য এই সারসংপে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে জানিয়ে সচিব আকরাম বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে এবার আর এই পরীা হবে না।” মাধ্যমিক ও উচ্চ শিা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, অনেকগুলো বিকল্প সামনে রেখে তারা কাজ করছেন। কিন্তু সবকিছু নির্ভর করবে কখন শিা প্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হবে, তার ওপর।
“বিশেষজ্ঞরা বিকল্প অনেকগুলো অপশন দিয়েছেন, তার মধ্যে এটা হচ্ছে, শিা প্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব না হলে এবারের জেএসসি-জেডিসি পরীা নেওয়া হবে না। তবে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।” শিা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, দুই সমাপনী পরীা না হলেও স্কুল খোলা গেলে পঞ্চম ও অষ্টমের বার্ষিক পরীা নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ওই পরীার ফলাফলের ভিত্তিতেই এ দুই শ্রেণিতে বৃত্তি দেওয়া হবে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের শিা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। আগামী ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত সব শিা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা আছে, তবে এরপরও স্বাভাবিক কাসে ফেরার পরিবেশ হবে কি না, সে নিশ্চয়তা নেই। কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় প্রাথমিক শিা একাডেমির (নেপ) বিশেষজ্ঞরা ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিকের শ্রেণি কার্যক্রম শেষ করার ল্য নিয়ে শিাক্রম ও পাঠ্যসূচি তৈরির কাজ করছেন।
সেপ্টেম্বর থেকে কাস শুরু হলে কী হবে এবং অক্টোবর থেকে কাস শুরু করা গেলে কী হবে সেভাবে পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন তারা। দেশের বিভিন্ন পাবলিক পরীার মান উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ পরীা উন্নয়ন ইউনিট (বেডু) জেএসসি-জেডিসি পরীা নিয়ে ছয়টি বিকল্প প্রস্তাব সরকারকে দিয়েছে।
ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে বেডু জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ ৮৪টি দেশ পাবলিক বা এ ধরনের পরীা বাতিল বা স্থগিত করা হয়েছে। বেডুর প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আগামী সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু রাখা গেলে এই তিন মাসের শ্রেণি কার্যক্রমের ভিত্তিতে শিাক্রম ও পাঠ্যসূচি শেষ করা যায়। সেজন্য শিাক্রম ও পাঠ্যসূচি সঙ্কোচন করে পরীা নেওয়া যেতে পারে। পাঠ্যসূচি সঙ্কোচন করে ডিসেম্বরে প্রতিটি বিষয়ে এক ঘণ্টার ৫০ নম্বরের করে পরীা নেওয়া বা সব পরীা নিতে হলে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে তা নেওয়ার প্রস্তাব করেছে বেডু। যদি নভেম্বর থেকে এক মাসের জন্য পরিস্থিতি অনুকূলে থাকে তাহলে সঙ্কুচিত শিাক্রম ও পাঠ্যসূচির আলোকে নিজ নিজ বিদ্যালয়ে পরীা নেওয়া যায়। বিদ্যালয়কেন্দ্রিক এই পরীার শুধু অষ্টম শ্রেণির ফল শিা বোর্ডগুলোতে পাঠাতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আসন বিন্যাস করে ভিন্ন সেটে প্রতিদিন দুই পালায় নিজ নিজ বিদ্যালয়ে পরীা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে ওই প্রস্তাবে। বেডুর প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চলতি বছর বিদ্যালয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চালু করা না গেলে কোনো ধরনের পরীা ছাড়াই শিার্থীরা পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে। সেজন্য একটি শিাবর্ষকে বাতিল না করে শিাক্রমের অবশিষ্ট অংশকে পরবর্তী শ্রেণিতে সমন্বয় করা যেতে পারে। শিা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, শিা প্রতিষ্ঠান খোলার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে এইচএসসি পরীা নেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। শিা প্রতিষ্ঠান কবে থেকে খোলা যায় তার উপর ভিত্তি করে এইচএসসি পরীার নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।