ফেরি সঙ্কট ও তীব্র স্রোতে পদ্মায় ব্যাহত পারপার, অপেক্ষায় কয়েক শ’ যানবাহন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ফেরি সঙ্কট ও পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ রুটে পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। ঈদ শেষে কর্মস্থলগামী মানুষের ভিড় ও শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী রুটের বাড়তি চাপে দৌলতদিয়ায় নদী পারের অপেক্ষায় কয়েক কিলোমিটার সড়কে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়েছে। দৌলতদিয়ায় ঘাটে নদী পারাপারের অপেক্ষায় শনিবারও রয়েছে ৫ শতাধিক যানবাহন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে এই যানজট সমস্যা আরো বাড়ছে। শুক্রবারের মতো শনিবারেও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে পারপারের এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে ও রোদে ঘাটে ৪ থেকে ৫ঘণ্টা অপেক্ষা করে যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। আর এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে মাওয়া-কাঁঠালবাড়ী ঘাটের চাপও দৌলতদিয়ায় পরার কারণে। শনিবার বেলা ৩টার দিকে দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের প্রায় চার কিলোমিটার ও রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়কে বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার সিরিয়ালে থাকতে দেখা গেছে। ঈদের ছুটি শেষে রাজধানীর কর্মস্থলগামী মানুষের চাপ বেড়েছে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে।
শনিবার সকাল থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত নারী-পুরুষ বাস, ট্রাক ও অন্য ছোট ছোট গাড়িতে মানুষ দৌলতদিয়া ঘাটে এসে ভিড় করছে। কারণ আজ শনিবারই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ও সরকারি অফিসের ছুটি শেষ। এ ঝুকিপূর্ণ যাত্রায় নারী-শিশু ও বয়স্কদের কষ্ঠ ভোগ করতে হচ্ছে। তবু শনিবারের মধ্যেই ঢাকায় ফিরতে হবে সবাইকেই, তাই এই ঝুকি নিয়ে ঢাকায় ফেরা। আর এসব মানুষ করোনার ভয়কে তোয়াক্কা না করে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে একসাথে পাল্লা দিয়ে ফেরি ও লঞ্চে উঠছে। দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটে কর্মরত বিআইডাব্লিউটিয়ের ট্রাফিক পরিদর্শক আফতাব হোসেন বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চে যাত্রী পার করার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি। কিন্তু অধিকাংশ যাত্রী আমাদের কথা মানছে না। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, তাদের (যাত্রী) মনে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোনো ভয় নেই। এদিকে মাওয়া ঘাটের ফেরি চলাচল সীমিত থাকায় ওই রুটে সব বাস ও ট্রাক দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে নদী পার হবার জন্য গতকাল থেকে একযোগে আসায় দৌলতদিয়া ঘাটে এখন তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার জুড়ে বাসের সিরিয়াল থাকায় যাত্রীদের পথেই নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়েই যাত্রীরা পায়ে হেটে ফেরি ও লঞ্চে উঠছে।
অপরদিকে দৌলতদিয়া ঘাটে যানজট এড়াতে ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহি বাস পার হতে রাজবাড়ী পুলিশ প্রশাসন ঘাট থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে গোয়ালন্দ মোড়ে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া সড়কেই পণ্যবাহি ট্রাকগুলো আটকিয়ে দিয়েছে। দৌলতদিয়া প্রান্তের ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের প্রায় ৪ কিলোমিটার ও রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের ৫ কিলোমিটার এলাকায় বাস, পণ্যবাহী ট্রাক, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকারসহ শত শত যানবাহন নদী পারের অপেক্ষায় সিরিয়ালে রয়েছে। এ সময় সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন চালক ও যাত্রীরা। সময় মতো মালামাল পরিবহন করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন পণ্যবাহী ট্রাক চালকরা। ট্রাক চালকরা জানান, তারা অনেকে দুই থেকে তিন দিন সড়কে আটকে রয়েছেন। এতে তাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। খোলা রাস্তায় তাদের থাকতে হচ্ছে। যেখানে খাবার, গোসল ও টয়লেট সুবিধা নেই। বাধ্য হয়ে অনেক চালক ও হেলপার রাস্তার ওপর রান্না করছেন। আবার অনেকে ভ্যানে আসা ভ্রাম্যমাণ খাবার কিনে খাচ্ছেন। যাত্রীবাহী পরিবহনের পাশাপাশি প্রতিটি ফেরিতে কয়েকটি করে পণ্যবাহী ট্রাক পারাপারের সুযোগ দিলে সিরিয়াল কমে আসতো। বিআইডব্লিটিসির দৌলতদিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক আবু আব্দুল্লাহ রনি জানান, নদীতে তীব্র স্রোত এবং শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌ রুটের বাড়তি চাপে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে এই রুটে ১৬টি ফেরি চলাচল করছে। ছোট গাড়ি ও বাস অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে। যাত্রীবাহী পরিবহনের চাপ কমলে পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার করা হবে। এছাড়া নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় ফেরি পার হতে সময় লাগছে দ্বিগুণ। তাই দৌলতদিয়া ঘাটে এখন একটু যানজট রয়েছে।