করোনার দুঃসময়েও কিশোর অপরাধীরা বেপরোয়া

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনার এই দুঃসময়েও বেড়েছে কিশোর অপরাধীদের দাপট। পাড়া-মহল্লায় আধিপত্য বিস্তার, চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিং, মাদক ব্যবসা, এমনকি নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিরোধকে কেন্দ্র করে খুন-খারাবি থেকেও পিছপা হচ্ছে না তারা। সম্প্রতি রাজধানী তেজগাঁও ও মোহাম্মদপুর থানা এলাকা থেকে কিশোর অপরাধের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ৪৬ কিশোরকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল লতিফ বলেন, মেয়েদের উত্যক্ত করা, মাদক সেবন বা বিক্রির অপরাধে তাদের আটক করা হয়েছিল। সবাই বয়সে কিশোর। ১৪ মে ভাসানটেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক শিশুকে ধর্ষণ করে ১৪ বছরের এক কিশোর। পুলিশ তাকে আটক করে। থানায় এসে ওই কিশোরের অভিভাবক জানতে পারেন ছেলের অপরাধ।
কিশোরের বাবা রাসেল শিকদার বলেন, আমি নিরুপায়। ঠিকমতো পড়াশোনা করে না। শুধু বাইরে ঘুরে বেড়ায়। মারধর করলেও কথা শোনে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের একজন অভিভাবক বলেন, রবিন (ছদ্মনাম) অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয় জানি। কিন্তু তারা যে অপারধ করছে তাতো জানি না। জানা গেছে, ঢাকাতেই গত কয়েক বছরে দুই শতাধিক কিশোর গ্রুপের সন্ধান পাওয়া গেছে। নতুন করে বিভিন্ন জেলা শহরের কিশোররা নানা অপরাধে জড়াচ্ছে। ১০ থেক ১২ বছরের এসব কিশোররা বেশিরভাগই স্কুল পড়ুয়া। তারা অলিগলিতে চায়ের দোকান বা বিশেষ কিছু স্থানে অবস্থান নেয়। মোটরসাইকেল চুরি, ইয়াবা সেবন, ছিনতাই, মদ বিক্রি, মানুষকে জিম্মি রেখে মুক্তিপণ আদায়সহ ভয়ঙ্কর সব অপরাধ করে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকার মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, হাজারীবাগ, বংশাল, তাঁতীবাজার, আগারগাঁও, উত্তরাসহ রাজধানীর ৫০ থানার বিভিন্ন এলাকায় এই কালচার গড়ে উঠেছে। প্রায়ই সিনিয়র-জুনিয়রের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে খুন-খারাবিতেও তারা লিপ্ত হচ্ছে। র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আগে পরিবারকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবারই তাদের সুস্থভাবে গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। কেবল অপরাধ করলেই আমরা তাদের আইনে আওতায় নিয়ে আসছি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘গ্যাং’ কালচারে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা কিশোররা সমাজের কারও না কারও মদদপুষ্ট। তাদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি পুনর্বাসনেও জোর দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম। তিনি বলেন, কিশোরদের নিয়ন্ত্রণ বা সংশোধনের জন্য অভিভাবকদের সচেতন ও সক্রিয় হওয়া জরুরি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয়ের অধ্যাপক ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. জিয়া রহমান বলেন, কিশোর বয়সে যদি ‘ক্ষমতা’ বিষয়টি তাদের মাথায় দেওয়া যায়, তবে তারা সহিংসতাকেই হাতিয়ার মনে করে। এটি রোধ করা না গেলে রাষ্ট্র বা সমাজকে চরম মূল্য দিতে হবে।