দুই প্রধানের প্রতিশ্রুতিতে জাতি আশান্বিত

0

বাংলাদেশে এমুহূর্তে প্রধান আলোচ্য বিষয় সাবেক সেনা অফিসার সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ প্রধানের যৌথ সংবাদ সন্মেলন এবং আস্থা অটুট রাখার অঙ্গিকার ঘোষণা। এটা আসলে খুবই স্বাভাবিক, কারণ কোনো ঘটনায় সেনা প্রধান ও পুলিশ প্রধানের যৌথ সংবাদ সন্মেলনের ঘটনা সত্যি সত্যিই বিরল। স্মরণকালে এমন ঘটনা আর ঘটেছে বলে জানা যায়নি। আলোচনার শীর্ষে থাকা এ সংবাদ সন্মেলন নিয়ে শুরুতে কিছু কথা হলেও সময়ের ব্যবধানে তা প্রশংসায় ভাসছে। পুলিশ অফিসারের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসারের নিহত হবার ঘটনা যে পর্যায়ে পৌঁছেছিলো তাতে এই নজিরবিহীন সংবাদ সন্মেলনের বিকল্প কিছু ছিলো না। সঠিক সময়ে বিষয়টি দেশের নিরাপত্তা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পৃথক দুই বাহিনী প্রধান গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন তার জন্য তাঁরা ধন্যবাদের দাবিদার। শান্তিকামী দেশপ্রেমিক মানুষের মুখপাত্র হিসেবে আমরা তাঁদের ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও। মূলত তিনি পরিস্থিতির গতিপথ বুঝে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলেন। সার্বিক সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল তার প্রমাণ সিনহা হত্যা নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতির গতকাল ও আজকের চিত্রের ব্যবধান। ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে থেমে গেছে হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে উদ্বেগ উৎকন্ঠা নিন্দা প্রকাশ ও সেনাবাহিনী – পুলিশের ব্যবধান নিয়ে লেখালেখি। যা হত্যাকাণ্ড তদন্তে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। আমরা সেনা অফিসার সিনহা হত্যার তীব্র নিন্দা জানাই এবং হত্যার সাথে জড়িত সকলের আইনের আওতায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রত্যাশা করি।
একথা সবাই জানেন যে, গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার চাঁদ রাতে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভে অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার মেজর সিনহাকে পুলিশের এসআই লিয়াকত গাড়ি থেকে নামিয়ে বুকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর টেকনাফেন বহুলালোচিত ওসি প্রবীর কুমার এসে সিনহাকে মাদক ব্যবসায়ী সাধারণ সন্ত্রাসী বানাতে লাশের পাশে মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার দেখায়। বিষয়টি প্রত্যদর্শীর মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে তা মিডিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ খবরে পরিণত হয়।মুহূর্তে খবরটি সেনা ও পুলিশ বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবহিত হয়ে নিজে খোঁজ খবর নেন এবং সিনহার মায়েরসাথে ফোনে কথা বলে ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি দেন। একইসাথে তিনি সেনা ও পুলিশ প্রধানের সাথে কথা বলে যৌথ উদ্যোগ নিতে বলেন। ইতোমধ্যে সারাদেশে ােভের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। হত্যায় অভিযুক্ত ওসি প্রবীর ও দারোগা লিয়াকতের নানাবিধ কুকর্মের খবর গণ ও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওসির বিরুদ্ধে দুই শতাধিক ক্রসফায়ারের অভিযোগ পুলিশের ভাবমূর্তি ুন্ন করে। বিভিন্ন মাধ্যমে সেনা ও পুলিশকে পরস্পরের প্রতিপরে মতো তুলে ধরার চেষ্টা হয়। বিষয়টি বুঝতে পেরে পুলিশের প থেকে বলা হয় সিনহা হত্যার দায় প্রতিষ্ঠানের নয়, ব্যক্তির। তদন্তে দোষী যেই হোক তার বিচার হবে। তদন্ত কমিটিও গঠন হয়। কিন্তু ােভের মাত্রা কমছিল না। এ অবস্থায় সেনা ও পুলিশ প্রধান বুধবার ঘটনাস্হলে গিয়ে পরিদর্শন শেষে যৌথভাবে “নজিরবিহীন” সংবাদ সন্মেলন করেন। তাঁরা একটি বিষয় নিশ্চিত করেন সিনহা হত্যা কোনো বিভাগীয় বিষয় নয়। এটা আর দশটি হত্যার মতো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এ হত্যায় যে বা যারাই জড়িত ছিল তারা রা পাবে না, বিচার হবেই। সেনা ও পুলিশ প্রধান দাবি করেন এ ঘটনা কে কেন্দ্র করে দুই বাহিনীর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হবে না। পরস্পরের আস্থা অটুট থাকবে। তাঁদের এই যৌথ ভূমিকায় সিনহার পরিবারই নয, গোটা জাতি আশান্বিত হয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা আশাকরি প্রধানমন্ত্রী ও দুই প্রধানের প্রতিশ্রুতির পর মেজর (অব)সিনহা হত্যার বিচার হবে এবং খুনিরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে। আমরা সকলকে আস্থা রাখার আহ্বান রাখি।