যশোরে আরও ৩১ জন করোনায় আক্রান্ত নমুনা দিতে এসে হয়রান হচ্ছে মানুষ

0

বিএম আসাদ ॥ গতকাল যশোরে চিকিৎসক, শিক্ষকসহ আরও ৩১ জন কোভিড-১৯ সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৭শ’ ৭৮ জন। এদিকে, করোনাভাইরাস নমুনা দিতে এসে রোগীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে গিয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, করোনা সন্দেহে নমুনা পরীক্ষা দিতে এসে তারা রীতিমতো হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সকাল ৯টার দিকে তারা হাসপাতালের ‘ফু কর্নারে’ করোনার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এরপর বেলা ১১টা পর্যন্ত ফরম পূরণ করছেন। দুপুর সাড়ে ১২টা হতে নমুনা সংগ্রহ করার কথা থাকলেও বেলা ১টার পর নমুনা নেয়া হচ্ছে রোগীর কাছ থেকে। বৃদ্ধ বয়স থেকে সব বয়সী লোকজন আসছেন নমুনা দিতে। কিন্তু দ্রুত নমুনা দিয়ে বাসাবাড়িতে ফেরা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত রোগীর কোভিড-১৯ ফরম পূরণ করতে হচ্ছে। আর নমুনা নেয়ার সময় দেয়া হচ্ছে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে। কিন্তু সাড়ে ১২টা হতে নমুনা নেয়া হচ্ছে না। নমুনা নেয়া হচ্ছে আরও পরে। গতকাল দুপুর ১টার পর থেকে রোগীদের নমুনা নেয়া হয়েছে। এ দীর্ঘ সময় থেকে নমুনা পরীক্ষা করতে এসে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে নমুনা নেয়ার কারণে সুযোগ বুঝে অনেকে শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ফলে, ঝুঁকির্পূণ হয়ে পড়ছেন অসুস্থ ব্যক্তিরা। গতকাল যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল থেকে ৬৮টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। হাসপাতালের আরএমও ডা. মো. আরিফ আহমেদ জানিয়েছেন, কিছুই করার নেই। জনবল সংকট। চিকিৎসক, সেবিকা, কর্মচারীরা এক এক করে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। গতকাল পর্যন্ত হাসপাতালের ৫ জন চিকিৎসক, ২১ জন সেবিকা, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির ৮ জন কর্মচারী মিলে ৩৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। ফরম পূরণেও রয়েছে জটিলতা।
এদিকে, গতকাল ৩১ জন কোভিড-১৯ সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত যশোর বিমান বন্দরের চিকিৎসক ডা. এসএম মোর্তজা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। করোনাকালে সিভিল সার্জন অফিসে যে ২১ জন নবীন চিকিৎসক যোগদান করেছিলেন ডা. এসএম মোর্তজা তাদের একজন। যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের ফু কর্নারে প্রতিদিন করোনা সন্দেহে নমুনা সংগ্রহকারী মেডিকেল টেকনিশিয়ান (এমটি ল্যাব) গোলাম মোস্তফা (৫০)ও গতকাল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি হাসপাতালে শত শত কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোগীর নমুনা সংগ্রহ করেন। এরপর অসুস্থ হলে ৪ বার পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। কিন্তু বারবার তার পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসে। সর্বশেষ গত ৯ জুলাই তিনি ৫ম বারের মতো নমুনা দেন। ওই নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে গতকাল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। অনুরূপভাবে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)-এর ফিল্ড অফিসার মো. সেলিম রহমান (৪৩) করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি মাগুরায় কর্মরত রয়েছেন। তার বাসা শহরের ঘোপ জেল রোড মোড়ে। যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল থেকে ৯ জুলাই তিনি নমুনা দেন। যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের রক্ষী শাহাজান হোসেন (৪৬), বারান্দীপাড়ার শিক্ষিকা ফাতেমা খাতুন (২৮), গৃহবধূ সালমা (২৮), কেশবপুরের আলতাপোল গ্রামের ডা. সোহানের পিতা রেজাউল করিম (৫৫), কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিনারায়ণপুরে চালক মিজানুর রহমান (৩৫), উপশহরের গৃহবধূ নাসরিন (৫৪), ওষুধ কোম্পানি একমিতে কর্মরত ঝুমঝুমপুরের ইখতিয়ার রহমান (৪০), কলেজছাত্র লিটন (৩০), রাহাত (২৪), গৃহবধূ জোসনা (৩৯), সোহাগ আলী (৩৮)সহ যশোর শহর ও সদর উপজেলায় ১৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। অভয়নগরে ১০ জন আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের ভেতর গুয়াখোলার এনামুল হক (৪৪), মো. আনিছ (৩৯), ফজিলা খাতুন (৪৯)। এছাড়া নজরুল ইসলাম (৫৭) আবুল (৫১), মিজানুর রহমান বাবলু (৫৪), ৫ বছরের শিশু তাসনিম নিহা, আশিক কুমার রাহা (৩৯), বাবুল (৩৮), কেশবপুর উপজলোর আব্দুল জব্বার (৬১), চৌগাছা উপজেলার মারুফুর রশিদ (২৬) ও আজিজুর রহমান (২৬), শাহারিয়ার (৩৮), সুফিয়া খাতুন (৫০), নাইম (২৪), শাহিন (২৪)সহ অনেকে নিজেদের পরিচয় দেননি।