সাইকেলে চালিয়ে হবিগঞ্জে ব্যারিস্টার সুমনের ফুটবল অ্যাকাডেমিতে খাজুরার রায়হান

0

খাজুরা (যশোর) সংবাদদাতা ॥ যশোরের খাজুরার ক্ষুদে ফুটবলার রায়হান প্রায় ৪০০ কিলোমিটার পথ সাইকেল চালিয়ে হবিগঞ্জে পৌঁছেনে। সেখানে তিনি আলোচিত ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের ফুটবল অ্যাকাডেমিতে যোগ দিয়েছেন। সএ বিষয়ে ব্যারিস্টার সুমন তার নিজস্ব ফেসবুক পেজে লাইভে এসে সুমনের পরিচয় প্রকাশ করেছেন। খাজুরার ভদ্রডাঙ্গা গ্রামের আব্দুর সাত্তারের ছেলে রায়হান। তার বয়স ১৫ বছর। সে সিলুমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পাশ করে বাঘারপাড়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। রায়হানের বাবা শ্রমিক। বর্তমানে বাঘারপাড়া-কালীগঞ্জ মহাসড়ক সংস্কারে কাজ করছেন। ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর। দেশের সবার কাছে তিনি ‘ব্যারিস্টার সুমন’ নামে পরিচিত। তিনি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার পীরবাজার এলাকার বাসিন্দা।
এলাকাবাসী জানান, এর আগেও রায়হান যশোর, নড়াইল, মাগুরা ও সাতক্ষীরাসহ বেশ কয়েকটি জেলায় সাইকেল চালিয়ে খেলা করতে গিয়েছিল। সে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায় বেশি মনোযোগী। তবে ফুটবল তার সবচেয়ে পছন্দের খেলা। প্রতিদিন স্কুল শেষে বাড়ি ফিরে সাইকেল চালিয়ে যশোর শহর সংলগ্ন হামিদপুরে শামসুল হুদা ফুটবল অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ করতে যায়। উপজেলা ভিত্তিক স্কুলের ফুটবল খেলায় অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করে দলকে বেশ ক’বার বিভাগীয় পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। টাকার দরকার হলেই রায়হান শ্রমিকের কাজ করে। কিছুদিন আগে বাঘারপাড়া-কালীগঞ্জ মহাসড়ক সংস্কার কাজে পানির ট্রাকে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছে। হবিগঞ্জ যাওয়ার দুদিন আগে স্থানীয় এক সবজি ক্ষেতে শ্রমিকের কাজ করেছে। এই টাকা নিয়েই সে ব্যারিস্টার সুমনের কাবের উদ্দেশ্যে বের হয়। রায়হান বলেন, ফেসবুকে ব্যারিস্টার সুমনের ফুটবল অ্যাকাডেমিতে খেলার একটি পোস্ট দেখতে পাই। সেখান থেকে স্বপ্ন জাগে তার অ্যাকাডেমিতে খেলার। বাড়িতে বললে হবিগঞ্জে আসতে দেবে না। তাই কাউকে না বলেই চলে এসেছি। স্বপ্ন আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। আমি একজন সৎ দক্ষ ফুটবল খেলোয়াড় হতে চাই। সাইকেলে চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে রায়হান বলেন, আর্থিক সমস্যার জন্য সাইকেল চালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি। হবিগঞ্জ আসতে চার দিন সময় লেগেছে। রাত-দিন সমান করে সাইকেল চালিয়েছি। বাড়িতে থাকাকালীন শ্রমিকের কাজ করে জমানো ৬০০ টাকা, একটি টর্চ লাইট, পাওয়ার ব্যাংক, অ্যানড্রোয়েড ফোনসহ একটি ব্যাগ নিয়ে এসেছি। সুমন স্যার খুবই ভালো একজন মানুষ। তার জন্য সবাই দোয়া করবেন। আমার মত অনেক ফুটবল খেলোয়াড় এখানে খেলতে এসেছে। তদের সকল দায়িত্ব তিনি নিয়েছেন।বাঘারপাড়ার সিলুমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রেজাউল ইসলাম জানান, পড়াশোনার পাশাপাশি ফুটবল খেলায় বেশি মনোযোগী রায়হান। অত্যন্ত ভালো ছেলে। স্কুলের খেলায় বিভাগীয় পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে গেছে। শুনেছি রায়হান বর্তমান ব্যারিস্টার সুমনের কাবে খেলছে। এখন রায়হান পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে দেশের ফুটবল অঙ্গনে সম্পদ হয়ে উঠতে পারে এই দোয়া করি। জানতে চাইলে ব্যারিস্টার সুমন ফুটবল অ্যাকাডেমির পরিচালক সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, রায়হান যশোর থেকে সাইকেল চালিয়ে আমার অ্যাকাডেমিতে খেলতে আসায় আমি অনেক কৃতজ্ঞ। বিষয়টি নিয়ে হতবাক হয়েছি। আমি রায়হানের খাওয়া ও আবাসনের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের এখন প্রশিক্ষণ চলছে। রায়হান অনেকের তুলনায় ভালো খেলছে। আশা করি সে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।