মনিরামপুরে সাবেক চরমপন্থি কমান্ডার রফিকুলকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা

0

এস এম মজনুর রহমান, মনিরামপুর (যশোর) ॥ যশোরের মনিরামপুরে চরমপন্থি অধ্যুষিত এলাকা হরিদাসকাটিতে দীর্ঘদিন পর আবারও অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিনদুপুরে সন্ত্রাসীদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন চরমপন্থি সংগঠন পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক আঞ্চলিক কমান্ডার রফিকুল ইসলাম (৫০)। হরিদাসকাটির কুচলিয়া-দিগঙ্গা স্কুলের সামনে এলোপাতাড়ি কোপানোর পর গুলি চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করলেও এর সাথে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি। নিহত রফিকুল ইসলাম হরিদাসকাটি ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামের মৃত আমারত আলীর ছেলে।
মনিরামপুর থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) শিকদার মতিয়ার রহমান জানান, তিন কন্যা সন্তানের জনক রফিকুল ইসলাম পেশায় বর্তমানে ইজিবাইক চালক ছিলেন। গতকাল সকাল ১০ টার দিকে মধুপুর বাজার থেকে যাত্রী নিয়ে সুন্দলী বাজারে যান তিনি। সেখান থেকে ফেরার পথে দুপুর দেড়টার দিকে কুচলিয়া-দিগঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা পথরোধ করে। এরপর তারা রফিকুলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপানোর পর বুকে দুই রাউন্ড গুলি করে। পালিয়ে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা গলাকেটে নিশ্চিত করে তার মৃত্যু। খবর পেয়ে দুপুরেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সহকারি পুলিশ সুপার (মনিরামপুর সার্কেল) সোয়েব আহমেদ খান, থানা পুলিশের ওসি (সার্বিক) রফিকুল ইসলাম, ওসি (তদন্ত) শিকদার মতিয়ার রহমান ও ডিবি পুলিশের একটি টিম। হরিদাসকাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির লিটন ও এলাকাবাসী জানান, রফিকুল ইসলাম ইতিপূর্বে চরমপন্থি সংগঠন পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক কমান্ডার ছিলেন। বছর দুয়েক আগে তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন। বর্তমান তিনি ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। ওসি শিকদার মতিয়ার রহমান জানান, রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে হরিদাসকাটি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকাশ হত্যা, অলিয়ার হত্যাসহ কয়েকটি মামলা রয়েছে। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রফিকুল ইসলাম বর্তমানে স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেও গোপনে তিনি চরমপন্থিদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেন। তিনি নতুন করে বাহিনী গঠন করার তৎপরতায় লিপ্ত ছিলেন। এ নিয়ে সম্প্রতি চরমপন্থিদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। আওয়ামী লীগ নেতা লিটন জানান, গত সোমবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে সন্ত্রাসীরা মধুপুর বাজারের পাশে এক ব্যবসায়ীর বাড়ির সামনে বোমা হামলা চালায়। অবশ্য এ ঘটনায় রফিকুলসহ তার লোকজন প্রতিবাদ করেন। ধারণা করা হচ্ছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে রফিকুলকে হত্যা করেছে। হত্যাকান্ডের পর হরিদাসকাটিতে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে পুলিশ আটক করতে পারেনি। ওসি (সার্বিক) রফিকুল ইসলাম জানান, হত্যার ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। উল্লেখ্য, ২০০১ সালে হরিদাসকাটির কুচলিয়া-দিগঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে চরমপন্থিদের ব্রাশফায়ারে নিহত হয় বুলবুল, সেদু, ধনঞ্জয় ও দেবু।