আর কতো দুর্নীতি হলে দুদক নড়বে?

0

আর কতো দুর্নীতি হলে দুদক দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই করবে? এই প্রশ্নটি আমাদের নয়, এটা এখন সাধারণ জনগণের প্রশ্ন। দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্নটি সাধারণ মানুষের “মুখপাত্র” বা জনগণের “পত্রিকা” বলে ‘খ্যাত’ ফেসবুকে ঘুরেফিরে এলেও গত দুদিন তা ব্যাপক রূপ নিয়েছে। কেউ সরাসরি, কেউ ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে এই প্রশ্নটা তুলছে। তবে অনেকেই ভয়ংকর সব দুর্নীতির বিস্তারের দায় দুদকের চেয়ে সরকারের ঘাড়েই বেশি চাপাচ্ছে। তারা বলছেন, সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় দুদক নির্বাক থাকছে। তাদের অভিযোগ, দুর্নীতির হোতারা সরকারের ভেতরের লোক হওয়ায় দুদক নখদন্তহীন থাকছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে দুদক স্বাধীন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তার মতা অনেক। সরকারের ভেতরে হাত দেবার মতাও তাদের আছে। কিন্তু তারা তা প্রয়োগ করছে না। কেন করছে না এবং কবে করবে সেটাই সবার প্রশ্ন।
দুদক ও সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের স্থবিরতা নিয়ে প্রশ্নটাকে উচ্চকিত করেছে মুলত “রিজেন্ট হাসপাতাল” নামে রাজধানীর একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি লাইসেন্সবিহীন একটি হাসপাতাল। যা বন্ধ হয়ে যাবার কথা ছয় বছর আগে। কিন্তু হাসপাতালটি বন্ধ হয়নি। উপরন্তু প্রতিষ্ঠানটি এবার অবিশ্বাস্যভাবে করোনা টেস্ট সেন্টার বা কোভিড হাসপাতালের অনুমতি পেয়েছে। অবাক বিষ্ময়ের খবর হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি কোনো পরীা-নিরীা ছাড়াই মানুষকে করোনা পজিটিভ ও নেগেটিভের সার্টিফিকেট দিয়ে সরকারের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। শুধু সরকার নয়, প্রণোদনা লোভীদের কাছ থেকেও টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। র‌্যাবের অভিযানে ধরা পড়ার পর জানা গেছে টেস্ট প্রতি তারা ৩ হাজার থেকে ১৫/১৬ হাজার টাকা করে নিয়েছে। তারা আরও জেনেছে কোভিড বা করোনা চিকিৎসায় অনুমোদন পাওয়া এই রিজেন্ট হাসপাতালটি আসলে হাসপাতালই না। এর আইসিইউ দেখে তারা রীতিমতো হতবাক হয়েছেন। আইসিইউ’র দরজা লাগানোই যায় না। খবর অনুযায়ী এই ভুয়া প্রতিষ্ঠানটির কয়েকটি শাখাও রয়েছে। প্রশাসন ইতোমধ্যে তা সীল গালা করেছে, তবে মালিকদের ধরতে পারেনি। র‌্যাব অবশ্য বলছে যে কোনো মূহুর্তে তারা আটক করতে সম হবে। আমরাও আশাবাদী। তবে সাধারণ সচেতন মানুষ বোধ করি বেশি আস্থা রাখতে পারছেন না। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা রকম বিদ্রুপের সাথে রিজেন্টের মালিকের একাধিক ছবি দিচ্ছেন। সেই ছবির সাথে সরকারের প্রভাবশালী এক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠতার ছবি দিচ্ছেন। ওই মন্ত্রী দলেরও প্রভাবশালী নেতা। অনেকে লিখেছেন সাম্প্রতিককালে ক্যাসিনো ও পাপিয় কাণ্ডের সময় এ ধরণের ছবি প্রচার হয়। এর কারণেই নাকি কয়েকদিন গরম গরম তদন্তের পর থেমে গেছে সব। এবার যেনো তেমন না হয়।
যাহোক আমাদের আজকের প্রসঙ্গ মুলত দুর্নীতি দমন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে জনগণের ােভের বিষয়। জনগণের প্রশ্ন হচ্ছে, করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিভাগের অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগের শেষ নেই। মাস্ক কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে আজকের রিজেন্ট কেলেঙ্কারি পর্যন্ত কমপে বিশ রকম অপকর্মের ঘটনা প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু দুদককে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। দুর্নীতি দমন যাদের একমাত্র দায়িত্ব তারা জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকবে এটা কেমন কথা। তাহলে কি দুদকের কাছে এসব দুর্নীতি নয়? তারা কী আরো বড়ো রাঘববোয়াল ধরার অপো করছে? যদি তা হয় তাহলে প্রশ্ন,আমাদের রিজেন্ট কেলেঙ্কারির চেয়েও বড়ো দুর্নীতি করোনাকালে কি ঘটবে? আমরা মনে করি, সাধারণ মানুষ দুর্নীতি করে না, তারা দুর্নীতির শিকার হয়ে জীবন হারায়। তারা তাই দুর্নীতির বিচার চায়। বিচার চায় প্রতিটি স্বচ্ছ মানুষ। তারা এখনো দুদকের ওপর আস্থা রাখে। তাই আমরা মনে করি, দুদকের আসল চেহারা প্রদর্শনের এটাই সময়। আমরা আশা করবো, তারা স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতি নির্মূলে এখনই সক্রিয় হবে।