রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল না হলে আমরণ অনশনসহ কঠোর কর্মসূচি

0

মো. জামাল হোসেন, খুলনা ॥ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল করা না হলে আমরণ অনশনসহ কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শ্রমিকরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে পাটকল শ্রমিক নেতারা এ ঘোষণা দেন। এদিকে, চাকরিচ্যুতির চিঠি দেখে আবুল কালাম নামে একজন পাটকল শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে শ্রমিকরা জানিয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল চালুর সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে খুলনা অঞ্চলের ৯টি পাটকলের শ্রমিকরা নিজ নিজ মিলের সামনে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকে আজ বুধবার দুপুর ২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন। এর আগে একই দাবিতে গত সোমবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
গতকাল দুপুরে প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে পাটকল শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরকার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে আমরণ অনশনসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। কোন অবস্থাতেই মিল বন্ধ করতে দেয়া হবে না। তারা বিজেএমসিকে পুনর্গঠন করে মিল চালু রাখার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান। বক্তৃতা করেন প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, সাবেক সভাপতি কাউসার আলী মৃধা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান, সেলিম আকন, আবুল কালাম জিয়া, নূরুল হক, বেল্লাল হোসেন, শুকুর আলী প্রমুখ। প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ’র সভাপতি সাহানা শারমিন জানান, দাবি আদায় না হওয়ায় কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল রা সিবিএ-ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক সরদার আব্দুল হামিদ বলেন, হঠাৎ করেই মিল বন্ধ হলে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। তখন পরিবার-পরিজন নিয়ে সকলকে পথে বসতে হবে। তিনি বলেন, মিল বন্ধের এই ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হবে। অন্যথায় কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়া হবে। খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত ক্রিসেন্ট, স্টার, প্লাটিনাম, ইস্টার্ন, দৌলতপুর, খালিশপুর, জেজেআই, আলিম ও কার্পেটিং জুট মিলে ৮ হাজার ১’শ স্থায়ী শ্রমিক ও প্রায় ১৫ হাজার অস্থায়ী শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন।
উল্লেখ্য, খুলনার পাটকলসহ রাষ্ট্রায়ত্ত সকল পাটকল সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে সরকার চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। গত সোমবার সার্কিট হাউজের সম্মেলন কে অনুষ্ঠিত প্রেস কনফারেন্সে এ ঘোষণা দেয়া হয়। এদিকে আবুল কালাম (৫৭) নামে প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলের এক শ্রমিক মারা গেছেন। মিলের শ্রমিকরা জানান, সকাল (মঙ্গলবার) সাড়ে নয়টায় ফেসবুকে চাকরিচ্যুতির চিঠি দেখতে পেয়ে তিনি লুটিয়ে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলের তাঁত বিভাগের শ্রমিক খেলায়েত হোসেন খান জানান, সকাল সাড়ে নয়টায় আবুল কালাম ফেসবুকে দেখতে পান চাকরি ছাটাই হলে প্রথম বছরে ৪০ ভাগ, পরের বছরে ৩০ ভাগ ও তার পরের বছরে আর ৩০ ভাগ টাকা পরিশোধ করা হবে। যেহেতু এর আগে অবসরে যাওয়া শ্রমিকরা এখনো টাকা পাননি, সে কারণে তিনি হতাশ হয়ে পড়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। তিনি বলেন, ‘আমাদের ছাটাই দেয়া হলে আমরা টাকাও পাবো না, মিলেও ঢুকতে দেওয়া হবে না। আমরা শুভঙ্করের ফাঁকিতে পড়ব।’ প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন বলেন, চাকরি হারানোর আশঙ্কায় মিলের বেসিন বিভাগের শ্রমিক আবুল কালাম সোমবার থেকেই পরিবার-পরিজনের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন। মঙ্গলবার সকালে তিনি মারা যান। শ্রমিকদের আন্দোলনের সাথে একত্মতা প্রকাশ করা রাজনৈতিক দল সিপিবি’র কেন্দ্রীয় নেতা এসএ রশিদ বলেন, মিল বন্ধের ঘোষণার পর থেকেই শ্রমিক আবুল কালাম টেনশন করছিলেন। এছাড়া তিনি নানাভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচির সাথে যুক্ত ছিলেন।