করোনা পরীক্ষায় ফি নির্ধারণ : দরিদ্র মানুষের বিষয়টি বিবেচনা করুন

0

করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই সংকটকালে কিছু কিছু খবর আমাদের আশাবাদী করে; যেমন দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগী শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার নেমে এসেছে ১.২৭ শতাংশে। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪০.৫৪ শতাংশ। আরো আশাবাদী হওয়ার মতো খবর হচ্ছে, দেশে করোনা সংক্রমণ বিস্তারে একজন থেকে অন্যজনের মধ্যে ছড়ানোর হার আরো কমে গেছে। রিপ্রডাকশন হার এখন মাত্র ১.০৫। তবে এই হার যাতে আর না বাড়ে এবং এটাকে ১-এর নিচে নামিয়ে আনা যায়, সে েেত্র কাজ করছে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় গঠিত বিভিন্ন পর্যায়ের কারিগরি কমিটি। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, রিপ্রডাকশন হার যদি ১-এর নিচে নামে, তাহলে ধরে নিতে হবে, এরপর ধীরে ধীরে সংক্রমণ নিচের দিকে নামতে থাকবে। আশা জাগানোর মতো আরেকটি খবর হচ্ছে, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর গবেষণা ও পরীামূলক ব্যবহারের জন্য অ্যান্টিবডি টেস্টের অনুমতি দিয়েছে। এরই মধ্যে র‌্যাপিড টেস্টিং অ্যান্টিবডি কিট ব্যবহারের নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর; এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলে এই কিট ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে। অ্যান্টিবডির পাশাপাশি অ্যান্টিজেন টেস্টেরও অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এসব ভালো খবরের পাশাপাশি যে খবরটি সাধারণ মানুষকে উদ্বিগ্ন করবে তা হচ্ছে, করোনা পরীায় টাকা নেবে সরকার। সরকারি হাসপাতাল ও বুথে গিয়ে নমুনা পরীা করালে ফি দিতে হবে ২০০ টাকা। আর বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে পরীা করলে ৫০০ টাকা ফি দিতে হবে। এ বিষয়ে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি হতে যাচ্ছে। কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে, করোনার কারণে সরকারের আয় কমে গেছে। একেকটি নমুনা পরীার পেছনে যে টাকা খরচ হয়, বাংলাদেশের মতো দেশে এটি দুই থেকে তিন মাস বিনা মূল্যে করা সম্ভব; কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে সম্ভব নয়। এ জন্য সরকার একটি ফি নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। দ্বিতীয় কারণ হলো, নমুনা পরীা করতে গিয়ে এর অপব্যবহার হচ্ছে বলে অনেকের ধারণা। সন্দেহ হলেই পরীা নিরুৎসাহ করার জন্যও সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। সরকারিভাবে টাকা নেওয়ার বিষয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখানে যদি টাকার বিষয়টি আসে, তাহলে দরিদ্র শ্রেণির মানুষ পরীা করাতে আসবে না। কেউ কেউ ধারণা করছেন, পরীায় নিরুৎসাহ করতেই সরকার টাকা নিতে চাইছে। পাশের দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল এবং আফ্রিকার দেশগুলো এখনো তাদের নাগরিকদের বিনা মূল্যেই করোনার নমুনা পরীা করে যাচ্ছে। আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী এই করোনা সংকটে বড় চাপে পড়ে গেছে। এ সময় করোনা পরীায় সরকারের ফি নির্ধারণ করে দেওয়া সংগত হবে না বলে আমরা মনে করি। করোনা পরীা সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।