মণিরামপুরে মসজিদে তালা আ.লীগ নেতার!

0

স্টাফ রিপোর্টার, মনিরামপুর (যশোর) ॥ যশোরের মনিরামপুরে এক আওয়ামী লীগ নেতার হাতে মসজিদের মুয়াজ্জিন লাঞ্ছিত হয়েছেন। জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হবি তাকে লাঞ্ছিত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও মুয়াজ্জিনকে লাঞ্ছিতের পর মসজিদে তালা মেরে দেয়া হয়। আর এ ঘটনা ঘটেছে শুক্রবার বিকেলে হেলাঞ্চী পশ্চিমপাড়া বায়তুন নূর জামে মসজিদে। ফলে নামাজ আদায় করতে না পেরে এলাকার মুসল্লিদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে রাত একটার দিকে পুলিশ গিয়ে মসজিদের তালা খুলে দেয়।
খেদাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই খায়রুল আলম এবং এলাকাবাসী জানান, উপজেলার খেদাপাড়া ইউনিয়নের হেলাঞ্চী গ্রামের পশ্চিমপাড়া বায়তুননূর জামে মসিজদটি গত বছর নির্মাণ করা হয়। ওই গ্রামের মকবুল হোসেন এবং লুৎফর রহমান নামে দুই ব্যক্তি চার শতক করে মোট আট শতক জমি দান করেন মসজিদের অনুকুলে। আট শতকের উপর নির্মিত এ মসজিদে শুরু থেকেই মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করে আসছেন জমিদাতা মকবুল হোসেন। আর ইমামের দায়িত্বে রয়েছেন মাওলানা কামরুজ্জামান। মসজিদ কমিটির সভাপতি রয়েছেন মকবুল হোসেনের ছেলে ব্যবসায়ী আজিবর রহমান। কিন্তু ইতিমধ্যে মুসল্লির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মসজিদে আরো জমির প্রয়োজন হয়। একপর্যায়ে জমিদাতা মুয়াজ্জিন মকবুল হোসেন এবং লুৎফর রহমানের কাছে মুসল্লিরা দাবি জানান, আরো দুই শতক জমি দান করার জন্য। কিন্তু মকবুল হোসেন এবং লুৎফর রহমানের পরিবার দুই শতক জমিদানে সম্মত হয়ে মসজিদের উন্নয়নে এক লাখ টাকা দাবি করেন কমিটির কাছে। এ নিয়ে শুক্রবার জুম্মার নামাজের আগে মসজিদে মুসল্লিদের মধ্যে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু জমিদানের জন্য টাকা দাবি করায় মুসল্লিদের মধ্যে পক্ষে-বিপক্ষে বাকবিতন্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক (বিগত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী) আব্দুল আলীম জিন্নাহর বড়ভাই স্কুল শিক্ষক হযরত আলী, আব্দুল মজিদসহ কয়েকজন মুসল্লি জুম্মার নামাজ আদায় না করে বেরিয়ে আসেন। হযরত আলী জানান, অপমানিত হওয়ায় তিনিসহ ৫/৬ জন বেরিয়ে এসে অন্য মসজিদে নামাজ আদায় করেন।
এদিকে এলাকায় গুজব রটে মসজিদ থেকে হযরত আলী ও তার পিতাকে বের করে দেয়া হয়েছে। এমন খবর পেয়ে হযরতের ছোটভাই স্থানীয় ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক হাবিবুর রহমান হবি বিকেলে আসরের নামাজের আগে মসজিদের সামনে অবস্থান করেন। ইমাম মাওলানা কামরুজ্জামান জানান, তিনি আসরের নামাজ পড়াতে গিয়ে দেখতে পান, মুয়াজ্জিন মকবুল হোসেনকে হাবিবুর রহমান হবি গালাগালিসহ লঞ্ছিতের পর মসজিদে তালা মেরে দেন। এর পর সেখান থেকে তিনি এবং মুয়াজ্জিন চলে আসেন। মসজিদ কমিটির সভাপতি আজিবর রহমান জানান, তার পিতা এবং ইমামকে লাঞ্ছিতের পর মসজিদে ঢুকতে না দিয়ে হাবি তালা মেরে দেন। ফলে এলাকার মুসল্লিরা ওই মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারেননি। শুক্রবার তালা মেরে দেওয়ার কারণে আসর, মাগরিব এবং এশার ওয়াক্তের নামাজ মসজিদে পড়নো সম্ভব হয়নি। ওসি (সার্বিক) রফিকুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে ওই রাতেই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য খেদাপাড়া ফাঁড়িকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই খায়রুল আলম জানান, তিনি রাত একটার দিকে গিয়ে তালা খোলার ব্যবস্থা করেন এবং মসজিদের দু পক্ষকে সোমবার ফাঁড়িতে ডাকা হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হবি জানান, তালা মারার পর তিনি আবার রাতেই খুলে দেন। অন্যদিকে শুক্রবার বিকেলে মসজিদে তালা মারার পর সন্ধ্যার দিকে হেলাঞ্চী বাজার থেকে পুলিশ পাঁচ বোতল ফেনসিডিলসহ হাবিবুর রহমানের ছোটভাই তবিরর রহমানকে আটক করে। এ ঘটনায় এসআই আশরাফুল আলম বাদি হয়ে তবিবর রহমানের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেন।