প্রতিশ্রুতি অর্ধেকে, বেড়েছে সুদ-আসল পরিশোধের হার

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি দারুণভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দাতা সংস্থাগুলোর আর্থিক সহযোগিতার (ঋণ ও অনুদান) প্রতিশ্রুতিতেও। বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থের জোগান দিতে দেশের সরকার বিদেশি সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ঋণ ও অনুদান নিয়ে থাকে। অথচ গত অর্থবছরের (২০১৮-১৯) তুলনায় চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে আর্থিক প্রতিশ্রুতির পরিমাণ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। অনুদানের ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আরও বেশি।
তুলনামূলকভাবে অনুদানের প্রতিশ্রুতি প্রায় চারভাগের একভাগে নেমে এসেছে। অন্যদিকে দেশের অর্থনীতি করোনায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের বিদেশি ঋণের আসল ও সুদবাবদ প্রায় ১৮ কোটি মার্কিন ডলার বাড়তি পরিশোধ করতে হয়েছে সরকারকে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে পাওয়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাস (মে পর্যন্ত) এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
বিষয়গুলো সম্পর্কে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনার কারণে বিদেশি আর্থিক প্রতিশ্রুতি কিছুটা কমেছে। অনুদানের অবস্থা খারাপ হলেও চলতি অর্থবছরের বাকি এক মাসে সেটা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা যাবে। আর বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল তুলনামূলক বাড়তি পরিশোধের বিষয়টিকে তারা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। তারা মনে করছেন, সুদ ও আসল বাড়তি পরিশোধ মানে দেশে উন্নয়ন বেশি হচ্ছে। ইআরডি সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত সময়ে বিদেশি আর্থিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ৪৩৫ কোটি ৭৯ লাখ ৪ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে অনুদান ৩৩ কোটি ৮২ লাখ ৮ হাজার ডলার এবং ঋণ ৪০১ কোটি ৯৬ লাখ ৬ হাজার ডলার। যেখানে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মে পর্যন্ত সময়ে বৈদেশিক প্রতিশ্রুতি ছিল ৮১১ কোটি ৩৩ লাখ ৪ হাজার ডলার। এর মধ্যে অনুদান ছিল ১২৫ কোটি ৫৭ লাখ ডলার এবং ঋণ ছিল ৬৮৫ কোটি ৭৬ লাখ ৪ হাজার ডলার। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে প্রতিশ্রুতি কমেছে ৩৭৫ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। এ বিষয়ে ইআরডির ফাবা ও আইসিটি উইংয়ের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) ড. পিয়ার মোহাম্মদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এত কম হওয়ার কারণ হয়তো, মে মাস পর্যন্ত আরও চুক্তি সই হয়েছে, সেগুলো আমরা পাইনি– এরকম হতে পারে। আর করোনার কারণে কিছু সমস্যা তো হচ্ছেই।’
গত অর্থবছরের ১২৫ কোটি ৫৭ লাখ ডলারের জায়গায় চলতি অর্থবছরে অনুদান প্রতিশ্রুতি মিলেছে ৩৩ কোটি ৮২ লাখ ৮ হাজার ডলার। অর্থাৎ অনুদান কমেছে ৯১ কোটি ৭৫ লাখ ডলারে। অনুদান চারভাগের প্রায় একভাগে নেমে আসার বিষয়ে পিয়ার মোহাম্মদ বলেন, ‘এটা আরও বাড়বে। প্রতিদিনই কমিটমেন্ট হচ্ছে। এক মাসে পুরোপুরি না হলেও অনেকটাই কাভার হয়তো হবে। এ ক্ষেত্রেও করোনার কারণে কিছু সমস্যা হচ্ছে। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে যাওয়া, এ ধরনের অন্য কোনো কারণ নাই। বরং এখন অনুদান দেয়ার আগ্রহ বেশি পাওয়া যাচ্ছে।’ সুদ ও আসলে বিদেশি ঋণ পরিশোধের বিষয়ে ইআরডি সূত্র বলছে, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে সরকার সুদ ও আসল মিলিয়ে পরিশোধ করেছে ১৬১ কোটি ৭৯ লাখ ৭ হাজার ডলার। এর মধ্যে আসল দিয়েছে ১১৮ কোটি ২৮ লাখ ৮ হাজার ডলার এবং সুদ দিয়েছে ৪৩ কোটি ৫০ লাখ ৯ হাজার ডলার। গত অর্থবছরের এই সময়ে সরকার সুদ ও আসলে পরিশোধ করেছিল ১৪৩ কোটি ৩২ লাখ ১ হাজার ডলার। এর মধ্যে আসল দিয়েছিল ১০৭ কোটি ৩৩ লাখ ১ হাজার ডলার এবং সুদ দিয়েছিল ৩৫ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে ১৪ কোটি ৪৭ লাখ ৬ হাজার ডলার বাড়তি সুদ ও আসলে পরিশোধ করতে হয়েছে। এর মধ্যে বাড়তি ১০ কোটি ৯৫ লাখ ৭ হাজার ডলার আসল এবং প্রায় ৭ কোটি ৫১ লাখ ডলার সুদ দিতে হয়েছে।
এ বিষয়ে পিয়ার মোহাম্মদ বলেন, ‘এটা তো নির্ভর করছে আমাদের ডিল (চুক্তি) কতটুকু হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এবার হয়তো কিছু নতুন প্রকল্পের পেমেন্ট করা লেগেছে। এটা তো দিনদিন বাড়তেই থাকবে। কারণ আমাদের অ্যাক্টিভিটি (কার্যক্রম) তো বাড়ছে। নতুন নতুন প্রকল্পে নেয়া হচ্ছে। প্রকল্প বেশি নিলে ঋণও বেশি নিতে হচ্ছে। ঋণ বেশি নিলে স্বাভাবিকভাবে পরিশোধও বাড়তে থাকবে। এটা তো ভালো চিহ্ন। কারণ আমাদের অ্যাক্টিভিটি বেশি হলে নেবও বেশি, দেবও বেশি। তার মানে উন্নয়ন বেশি হচ্ছে।’ইআরডি সূত্র আরও বলছে, গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের এই সময়ে কিছুটা বাড়তি অর্থছাড় করেছে বিদেশি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে ৫২৩ কোটি ৭৩ লাখ ২ হাজার ডলার ছাড় করেছে। এর মধ্যে ৫০১ কোটি ৪ হাজার ডলার ঋণ এবং ২২ কোটি ৭২ লাখ ৮ হাজার ডলার অনুদান। যেখানে গত অর্থবছরের ১১ মাসে ৫২১ কোটি ৩৪ লাখ ডলার ছাড় করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৪৯৭ কোটি ৪৫ লাখ ডলার ঋণ এবং ২৩ কোটি ৮৯ লাখ ডলার অনুদান। বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতেমা ইয়াসমিনকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।