যশোরে আক্রান্তে রেকর্ড : একদিনে শনাক্ত ৪৫, আইসোলেশনে মৃত ১

0

বিএম আসাদ ॥ করোনা ভাইরাসের প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে যশোরে। ভাইরাসের বিস্তার কিছুতেই কমছে না। গতকাল আরও ৪৫ জন কোভিড-১৯ সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন। এদিকে, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খালেক গাজী (৩৫) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। গতকাল দুুর সাড়ে ১২টার দিকে ডা. মবিন তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন। এদিন ভোর সাড়ে ৫টায় তাকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিল। মৃত খালেক গাজীর বাড়ি যশোর সদর উপজেলার চাউলিয়া গ্রামে। পিতা মৃত নিছার গাজী। হাসপাতালের চিকিৎসক ডা, মবিন জানিয়েছেন, ৫ দিন তিনি ভিষণ জ্বরে ভুগছিলেন। ঠান্ডা, কাঁশিও ছিল। সময়মতো হাসপাতালে ভর্তি না করে বাড়িতে রাখার কারণে তার অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে এবং আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। যে কারণে যথাযথ চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ পাননি খালেক গাজী। মৃতের শ্যালক শহরের বারান্দীপাড়ার বাদল হোসেন জানিয়েছেন, কয়েকদিন ধরে তিনি (খালেক গাজী) জ্বরে ভুগছিলেন। অন্য সমস্যাও ছিল বলে জানিয়েছেন বাদল হোসেন। মৃত্যুর পর তার করোনা সন্দেহে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। একই দিন সকালে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে স্বপনা (৪০) নামে এক গৃহবধূ পালিয়ে গেছেন। স্বপনা শহরের রেলগেট এলাকার হাবিবুর রহমানের স্ত্রী। গত ২৩ জুন তাকে করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। হাসপাতালের খাতায় তাকে পলাতকে রাগী হিসেবে দেখানো হয়েছে। এ নিয়ে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ১২ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে করোনার উপসর্গ নিয়ে। পালিয়ে গেছেন ৪৫ জন রোগী। করোনায় আক্রান্তের পরিসংখ্যান জানিয়ে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, যশোরে করোনাভাইরাসের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। গতকাল ১শ’ ৪৫টি নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট এসেছে। এর ভেতর নতুন করে ৪৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। খুলনা হতে ৮টি নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। তাতে ১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হতে রিপোর্ট আসে ১শ’ ৩৭টি। এতে আক্রািন্ত হয়েছেন ৪৪ জন। আক্রান্তদের ভেতর যশোর সদরে সবচেয়ে বেশি। এ উপজেলায় ২০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের বেশিরভাগ শহরের বাসিন্দা। অভয়নগরে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ জন। শার্শা ্উপজেলায় ৫ জন। বাঘারপাড়ায় ৪ জন, কেশবপুর ও চৌগাছায় ২ জন করে ৪ জন, মনিরামপুরে ১ জন ও ঝিকরগাছায় ৩ জন। করোনা সন্দেহে নতুন করে গতকাল ১শ’ ৪টি নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। ৪৫ জনের ভেতর আক্রান্তরা হচ্ছেন- ঘাটাইল সেনানিবাসের কর্মকর্তা যশোর শহরের বিমান অফিস মোড়ের বাসিন্দা লে. রায়হান, বাঘারপাড়া স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক ডা. ফয়সাল মাহমুদ (২৩), ঝিকরগাছা থানার এসআই শহরের পুরাতন কসবা কাজীপাড়ার হেলালুজ্জামান (৪৫), যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স বারান্দীপাড়ার শিপ্রাদাস (৪৫), ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কর্মকর্তা বারান্দীপাড়ার নাসির উদ্দীন (৫০), অভয়নগরের রাজঘাট এলাকার ব্যবসায়ী সুজন পাল (৪৭), মনিরামপুরের দেবিদাসপুরের ব্যবসায়ী উৎপল মজুমদার (৩৭) চৌগাছার কালীতলার রংমিস্ত্রী অরজিত রায় (৭০), তার স্ত্রী উমা রাণী (৬৫), শার্শার জিরেগাছা গ্রামের জিল্লুর রহমান (৩২), বাঘারপাড়া উপজেলার দোহাকোলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বাস্থ্য সহকারী শহিদুল ইসলাম (৪২), কলেজছাত্র ঝিকরগাছা উপজেলার চন্দ্রপুরের সবুজ হোিেসন (২৪), সদর উপজেলার পুলেরহাটের মুদি ব্যবসায়ী হোসেন আলী (৬৫), চুড়ামনকাটি গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান (৬২), মনিরামপুরের পারখাজুরা গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক (৩০), শহরের বারান্দীপাড়ার প্রণয় (১৯), উপশহর এলাকার বৃদ্ধ লুৎফর রহমান (৮০), যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের ওয়ার্ডবয়, হাসপাতাল স্টাফ কোয়ার্টারের বাসিন্দা উত্তম কুমার (২৫), যশোর সদর উপজেলার ছাতিয়ানতলার ওহাব আলী (৮০), কলেজছাত্র কেশবপুরের ভোগতি গ্রামের হাবিবুর রহমান (২৭), এনজিও কর্মী ঝিকরগাছার পুরন্দপুরের আশিকুল হক (২৫), কলেজছাত্র অভয়নগরের শংকরপাশার নোমান ফারাজী (২৬), নওয়াপাড়ার গৃহবধূ কাকলী (৩৫), গুয়াখোলা গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান মোল্লা (৬৪), কাপাসিহাটি গ্রামের গৃহবধূ সালমা আক্তার (৫১), গুয়াখোলা গ্রামের এনজিও কর্মী রুমা খাতুন (৩০), চলিশিয়া গ্রামের গৃহবধূ নূরজাহান (৬২), গুয়াখোলা গ্রামের ব্যবসায়ী রেজাউল করিম (৬০), বেঙ্গল রোড এলাকার গৃহবধূ মনোয়ার বেগম (৩৮), কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের স্বাস্থ্য সহকারী লাকি আক্তার (৩২), বেনাপোল ইমিগ্রেশনের কনস্টেবল মো. সেলিম (৪১), শার্শা উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসে চাকরিরত লাউতাড়া গ্রামের হেলাল হোসেন (২৪), নারায়নপুরের ব্যবসায়ী জাকির হোসেন (৫০), বাঘারপাড়ার বাওয়াড়ী গ্রামেতর ইসতার মৃধা (২৪), মাহমুদপুরের কৃষক রুহুল আমিন (৫৫), যশোর শহরের ঘোপ জেল রোডের আব্দুল হান্নান (৩৮), বেজপাড়ার গৃহবধূ মাধুরি (৫৫), পশ্চিম বারান্দীপাড়ার ব্যবসায়ী আলাউদ্দীন (৬৫(, শহরের ঘোপ নওয়াপাড়ার ব্যাংকার মো. শরিফুল ইসলাম (৩৭), যশোর কাস্টমস হাউজের কাস্টমস আইন ইন্সপেক্টর নাজমুল হক (৪০), বেনাপোলের ব্যবসায়ী মাহাবুব হোসেন (৩৮), যশোর সদরের ব্যবসায়ী মো. আলম (৪২) ও শার্শার ছোটআঁচড়া গ্রামের আবুল খায়ের (৫৫)।