উৎপাদন নামতে পারে ৮ কোটি টনের নিচে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ কয়েক বছর ধরেই ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে জাপানের ইস্পাত উৎপাদন শিল্প। এর জের ধরে এরই মধ্যে একধাপ পিছিয়ে ভারতের কাছে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশের তকমা হারিয়েছে জাপান। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে আরো সংকুচিত হয়ে আসতে পারে জাপানের ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পটি। অর্থবছর শেষে দেশটিতে ইস্পাতের সম্মিলিত উৎপাদন আট কোটি টনের নিচে নেমে যেতে পারে—এমনটাই মনে করছে জাপান আয়রন অ্যান্ড স্টিল ফেডারেশন। মূলত নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে কারখানাগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় অর্থবছর শেষে জাপানে ইস্পাত উৎপাদন কমার পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। খবর রয়টার্স ও নিক্কেই এশিয়ান রিভিউ।
জাপান আয়রন অ্যান্ড স্টিল ফেডারেশনের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসে (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) জাপানে সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৫০ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। দেশটিতে ১ এপ্রিল থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হয়। চলে পরের বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত। অর্থবছরের প্রথমার্ধে মন্দা ভাবের জের ধরে ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে দেশটিতে শিল্প ধাতুটির সম্মিলিত উৎপাদন আট কোটি টনের নিচে নেমে যেতে পারে।
সম্প্রতি জাপান আয়রন অ্যান্ড স্টিল ফেডারেশনের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন এইজি হাসিমোতো। তিনি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নিপ্পন স্টিল করপোরেশনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব সামলেছেন। এইজি হাসিমোতো বলেন, জাপানের ইস্পাত শিল্প শত বছরের পুরনো। সুনামের সঙ্গে এতদিন টিকে রয়েছে শিল্পটি। তবে কয়েক বছর ধরে ইমেজ সংকটসহ নানামুখী চ্যালেঞ্জের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে এ শিল্প। এর মধ্যেই নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নতুন চ্যালেঞ্জের জন্ম দিয়েছে। কারখানা কার্যক্রম সংকুচিত হয়ে পড়ায় অর্থবছর শেষে জাপানে ইস্পাত উৎপাদন কমে যেতে পারে।
২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিক সামনে রেখে এক দশকের বেশি সময় ধরে জাপানে বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প চলমান ছিল। এ সময় দেশটিতে ইস্পাতের চাহিদাও বেড়েছে। ফলে জাপানি কোম্পানিগুলো বাড়তি ইস্পাত উৎপাদনে নজর দিয়েছিল। নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে চলতি বছর অলিম্পিক না হলেও এরই মধ্যে স্টেডিয়াম, অলিম্পিক ভিলেজসহ বড় নির্মাণ প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হয়েছে। ফলে দেশটিতে ইস্পাতের চাহিদা অনেকটাই কমে গেছে। এর জের ধরে জাপানি কোম্পানিগুলো ইস্পাতের রফতানি বাজার ধরার চেষ্টা করছিল। তবে বিশ্বজুড়ে মহামারীর কারণে শিল্প ধাতুটির চাহিদা আগের তুলনায় সংকুচিত হয়ে এসেছে। তাই চাইলেও রফতানি বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে জাপানি ইস্পাত কারখানাগুলো উৎপাদন কমানোর বিকল্প দেখছে না।
এইজি হাসিমোতো বলেন, উৎপাদন উদ্বৃত্ত জাপানের ইস্পাত শিল্পকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিতে পারে। এ উপলব্ধি থেকেই সম্ভাব্য আর্থিক লোকসান এড়াতে উৎপাদনে লাগাম টানার চেষ্টা করছে অনেক প্রতিষ্ঠান। এ পরিস্থিতি শিল্প ধাতুটির সম্মিলিত উৎপাদন কমার পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তখন সময় বুঝে উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে জাপানের ইস্পাত উৎপাদনকারীরা।
এদিকে ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লিউএসএ) বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে ভারতের কাছে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশের তকমা হারায় জাপান। ওই বছর দেশটিতে সব মিলিয়ে ১০ কোটি ৪৩ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছিল। গত বছর দেশটিতে শিল্প ধাতুটির সম্মিলিত উৎপাদন কমে দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৯৩ লাখ টনে। সেই হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে জাপানে অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন কমেছে ৫০ লাখ টন। চলতি বছর শেষে দেশটিতে আরো কমে আসতে পারে শিল্প ধাতুটির বার্ষিক উৎপাদন।
বার্ষিক উৎপাদন ১০ কোটি টনের নিচে নামলেও গত বছর চীন ও ভারতের পর জাপান বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। ডব্লিউএসএর বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এ সময় শিল্প ধাতুটির বৈশ্বিক উৎপাদনের ৫ দশমিক ৩ শতাংশ জোগান দিয়েছে জাপানের কারখানাগুলো। অথচ এক দশক আগেও বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদনে জাপানের হিস্যা ছিল ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
উৎপাদন হ্রাসের চ্যালেঞ্জ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে অভ্যন্তরীণ খাতে ইস্পাতের ব্যবহার বাড়াতে হবে বলে মনে করছে জাপান আয়রন অ্যান্ড স্টিল ফেডারেশন। একই সঙ্গে নতুন নতুন রফতানি বাজার খুঁঁজে বের করা ও ইস্পাতের রফতানি বাড়ানোর বিকল্প দেখছে না প্রতিষ্ঠানটি। যদিও এক্ষেত্রে জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়াবে চীন ও ভারত।