ভারত-চীন সামরিক শক্তি কার কত?

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ লাদাখে ভারত ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র। সম্প্রতি সেখানে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষে ভারতের ২০ সেনা সদস্য নিহত হওয়ার পর উত্তেজনা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। চীনের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এমন অবস্থায় পারমাণবিক শক্তিধর এই দু’টি দেশের দিকে কড়া দৃষ্টি রাখছেন যুদ্ধবিশারদরা। যদি এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, তাহলে কে জিতবে- ভারত নাকি চীন? এ নিয়ে নানা হিসাব। নানা বিশ্লেষণ। কারণ, সামরিক ব্যয়ের দিক দিয়ে ভারতের চেয়ে অনেক এগিয়ে চীন। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের তথ্যমতে, তারা সামরিক ব্যয়ের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে।
চীনের বার্ষিক সামরিক ব্যয় ২৬১০০ কোটি ডলার। অন্যদিকে এদিক দিয়ে ভারতের অবস্থান তৃতীয়। অর্থাৎ চীনের চেয়ে একধাপ নিচে ভারত। ভারতের বার্ষিক সামরিক ব্যয় ৭১১০ কোটি ডলার। বিজনেস ইনসাইডারের হিসাব মতে, যুদ্ধবিমানের শক্তির দিক দিয়ে চীন তৃতীয় অবস্থানে। তাদের কাছে আছে ৩২১০টি যুদ্ধবিমান। এক্ষেত্রেও চীনের চেয়ে এক ধাপ নিচে ভারতের অবস্থান- চতুর্থ। ভারতের কাছে আছে ২১২৩টি যুদ্ধবিমান। এরই মধ্যে ভারতের ডিআরডিও তাদের ব্যাপক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র পৃথিবী-১ এর পরীক্ষা চালিয়েছে। এর পাল্লা ১৫০ কিলোমিটার। অন্যদিকে পৃথিবী-২ এর পাল্লা ২৫০ কিলোমিটার।
২০২০ সালে এসে বিশ্ব সবচেয়ে বৃহৎ সক্রিয় সামরিক বাহিনী রয়েছে চীনের। সেখানে সক্রিয় সেনা সদস্যের সংখ্যা ২১ লাখ ৮০ হাজার। স্ট্যাসিস্টা’র মতে, এর কাছাকাছি রয়েছে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া। এখানে আরো উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ভারতের চেয়ে চীনের হাতে আছে দ্বিগুণ ফাইটার এবং ইন্টারসেপ্টর। চীনের আছে ব্যবহার উপযোগী ৫০৭টি বিমানবন্দর। অন্যদিকে ভারতের আছে ৩৪৬টি। গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের মতে, চীনের হাতে আছে কমপক্ষে ৩২০০টি ট্যাংক। ভারতের আছে ৪২০০টি। কিন্তু চীনের হাতে সাঁজোয়া যান আছে বিস্ময়করভাবে ৩৩,০০০। কিন্তু এক্ষেত্রে ভারত অনেক দুর্বল। তাদের আছে কমপক্ষে ৮৬০০টি। সাম্প্রতিক তথ্যমতে, ভারতের তুলনায় চীনের কাছে ১০ গুণ বেশি রকেট উৎক্ষেপক আছে। চীনের হাতে এমন উৎক্ষেপকের সংখ্যা কমপক্ষে ২৬৫০। অন্যদিকে ভারতের আছে মাত্র ২৬৬টি। ভারতের তুলনায় চীনের হাতে প্রায় তিনগুণ নৌ সম্পদ আছে। চীনের এমন সম্পদের সংখ্যা ৭৭৭। পক্ষান্তরে ভারতের আছে ২৮৫টি। চীনের আছে ৭৪টি সাবমেরিন। ভারতের আছে ১৬টি। চীনের কাছে আছে ৩৬টি ডেস্ট্রয়ার। ভারতের আছে মাত্র ১১টি।
ওদিকে সোমবার আনন্দবাজার পত্রিকা ‘আন্তর্জাতিক রিপোর্ট: নিয়ন্ত্রণরেখায় শক্তিতে ভারত-চীন কে কোথায় এগিয়ে’- শীর্ষক একটি রিপোর্টে দুই দেশের সামরিক শক্তির তুলনামূলক একটি চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। এতে বলা হয়েছে, বেলফারের দুই বিশেষজ্ঞ ফ্রাঙ্ক ও’ডোনেল এবং অ্যালেক্স বলফ্রাস বিস্তারিত আলোচনা করেছেন- প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা নিয়ে ভারত-চীন সংঘাতের ক্ষেত্রে কোন দেশ সামরিক শক্তিতে কোথায় কতটা এগিয়ে তা নিয়ে। দোকলাম সংকটকে পরিপ্রেক্ষিতে রেখেই এই তুলনামূলক আলোচনা করা হয়েছিল। একই রকমভাবে, ২০১৯ সালের অক্টোবরে সেন্টার ফর নিউ আমেরিকান সিকিউরিটি (সিএনএএস) নামে একটি গবেষণা সংস্থাও একই রকম তুলনামূলক আলোচনা করেছিল। বেলফার সেন্টার এবং সিএনএএস প্রকাশিত এই দুই বিশ্লেষণে দেখানো হয়েছে, সমর সম্ভার থেকে শুরু করে যুদ্ধ পারদর্শিতায় এই মুহূর্তে ভারত এবং চীনের তুলনামূলক অবস্থান। স্থলবাহিনী: বেলফারের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে- প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর চীনের মোকাবিলা করতে ভারত অন্তত ২ লাখ ২৫ হাজার সেনা মোতায়েন করতে সক্ষম। তার মধ্যে উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ডে সেনা সংখ্যা প্রায় ৩৪ হাজার। এর মধ্যে লাদাখে রয়েছে টি-৭২ ব্রিগেডের ১৫০টির মতো ট্যাঙ্ক এবং ৩০০০ বাহিনী। এ ছাড়াও রয়েছে অষ্টম মাউন্টেন ডিভিশন এবং তৃতীয় ইনফ্যান্ট্রির সেনারা। মধ্যাঞ্চলীয় কমান্ডের অধীনে রয়েছে ষষ্ঠ মাউন্টেন ডিভিশনের প্রায় ১৬ হাজার সেনা। পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধীনে চীনা সীমান্তে রয়েছে ভারতীয় সেনার ৯টি মাউন্টেন ডিভিশনের প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার সেনা। তার সঙ্গে রয়েছে অরুণাচলের ব্রহ্মস মিসাইল রেজিমেন্ট। উল্টো দিকে চীনের শিনচিয়াং মিলিটারি ডিসট্রিক্ট এবং তিব্বত মিলিটারি ডিসট্রিক্টে মোতায়েন রয়েছে প্রায় ৭০ হাজার সেনা। এর মধ্যে বড় অংশই বর্ডার ডিফেন্স রেজিমেন্ট বা সে দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। সেই সঙ্গে চীনের ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার গোলন্দাজ আর পদাতিক সেনা যোগ করলে তা ভারতের সেনা সমাবেশের প্রায় সমান। কিন্তু সিএনএএস রিপোর্ট পদাতিক বা গোলন্দাজ বাহিনীর সম্মুখ সমরের দক্ষতায় এগিয়ে রেখেছে ভারতীয় বাহিনীকে। তার কারণ হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, ভারতীয় বাহিনী নিয়মিত সন্ত্রাস দমন অভিযানের সঙ্গে যুক্ত। অন্যদিকে ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধ ওইরকম উচ্চতায়, প্রতিকূল পরিবেশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পারদর্শিতা এবং অভিজ্ঞতাকে অনেকটা বৃদ্ধি করেছে। অন্যদিকে ১৯৭৯ সালে ভিয়েতনামের সঙ্গে সংঘর্ষ ছাড়া চীনা বাহিনীকে বড় কোনো সংঘর্ষের মুখোমুখি হতে হয়নি। ওই লড়াইয়ে ভিয়েতনামের বাহিনীর কাছে রীতিমতো পর্যুদস্ত হয়েছিল চীনা বাহিনী। ফলে তুলনামূলক বিচারে ভারতকেই এগিয়ে রাখছে এই রিপোর্ট। এ ছাড়াও, সমপ্রতি ভারতীয় বাহিনীতে চিনুক, অ্যাপাশের মতো হেলিকপ্টার যুক্ত হওয়ায় সেনার ক্ষমতা অনেকটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে সি-১৩০ জে সুপার হারকিউলিস এবং সি-১৭ গ্লোবমাস্টারের মতো বিমান প্রত্যন্ত এলাকায় বাহিনীর রসদ জোগানো এবং লজিস্টিক সাপোর্ট পৌঁছতে খুবই কার্যকর।
ভারত বনাম চীন বিমান বহর: প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা ধরে চীনা বিমান বাহিনী ভারতের বিমান বহরের থেকে সংখ্যা এবং গুণগত দু’দিক থেকেই পিছিয়ে বলে দাবি গবেষকদের। চীন-ভারত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা অংশটি চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় সেনা কমান্ডের আওতাধীন। সেখানকার রীতি অনুযায়ী, ওই পশ্চিমাঞ্চলীয় কমান্ডের অন্তর্ভুক্ত বিমান বাহিনীও। ওই কমান্ডের অধীনে ১৫৭টি যুদ্ধবিমান, বোমা ফেলতে বা আক্রমণ করতে সক্ষম চালকহীন বিমান, ড্রোন রয়েছে। কিন্তু তার একটা বড় অংশই রাশিয়ার জন্য সংরক্ষিত। অর্থাৎ রুশ ফ্রন্ট থেকে কোনও আক্রমণ হলে তা রোখার জন্য বিশেষ ভাবে রাখা রয়েছে ওই বিমান বহরের একটি বড় অংশ। কিন্তু ভারত বিমান বাহিনীর উত্তরাঞ্চলীয়, মধ্য এবং পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অন্তত ২৭০টি যুদ্ধবিমান এবং ৬৮টি গ্রাউন্ড অ্যাটাক এয়ারক্রাফ্‌ট বিমানবাহিনী ব্যবহার করতে পারে চীনের নিয়ন্ত্রণরেখায়। গুণগত দিক থেকেও ভারতের চতুর্থ প্রজন্মের ফাইটারের সংখ্যা চীনের তুলনায় এই অংশে বেশি। চীনের জে-১০ এবং জে-১১ ফাইটার বিমানগুলোর সমকক্ষ ভারতের মিরাজ-২০০০। কিন্তু ভারতের সুখোই-৩০ এমকেআই, চীনা চতুর্থ প্রজন্মের বিমানের থেকে আরও বেশি আধুনিক এবং কার্যকর। লজিস্টিক বা অবস্থানগতভাবেও চীনের থেকে এই অংশে ভারত এগিয়ে, দাবি বেলফার রিপোর্টের। চীনের বিমানঘাঁটিগুলোর প্রত্যেকটিই তিব্বত এবং জিংজিয়াং প্রদেশে অত্যন্ত উঁচু উপত্যকায়, যেখানে বাতাসের ঘনত্ব কম। সেখানে চীনা বিমান বহর সাধারণ মাত্রার থেকে অর্ধেক অস্ত্র সম্ভার এবং জ্বালানি বহন করতে পারবে। এ ধরনের আটটি বিমানঘাঁটি রয়েছে চীনের। যার মধ্যে বেশিটাই অসামরিক। এই রিপোর্টে আরও ব্যাখ্যা করা হয়েছে, চীনের হাতে মোট ১৫টি ট্যাঙ্কার বিমান রয়েছে, যা দিয়ে আকাশে বিমানে জ্বালানি ভরা সম্ভব। প্রয়োজনের তুলনায় এটা অনেক কম। অন্যদিকে গত তিন দশকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারতের বিমানঘাঁটি এবং সামরিক বিমানবন্দরের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। অবস্থানগতভাবে সেই বিমানঘাঁটিগুলো অনেক সুবিধাজনক জায়গায় অবস্থিত। নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর লাদাখ এবং অরুণাচলে এমন অনেক বিমান ঘাঁটি রয়েছে (অ্যাডভান্স ল্যান্ডিং গ্রাউন্ড), যা অবস্থানগতভাবে ভারতীয় বিমান বহরকে সুবিধাজনক অবস্থানে রাখবে।
গবেষকদের দাবি, কৌশলগত দিক থেকেও এগিয়ে ভারতীয় বিমানবহর। তারা চীনা বিমানবহরের মহড়ার একটি সামপ্রতিক ভিডিও বিশ্লেষণ করে দাবি করেছেন, চীনা পাইলটরা অনেক বেশি নির্ভরশীল গ্রাউন্ড কমান্ডের উপর। অর্থাৎ বিমানঘাঁটি থেকে দেওয়া নির্দেশের উপরেই তারা বেশি নির্ভর করেন। কিন্তু প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা, যাকে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন যুদ্ধক্ষেত্রগুলোর একটি বলে বর্ণনা করা হয় উচ্চতা-ভৌগলিক অবস্থান-প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে, সেখানে বাস্তবের যুদ্ধে পাইলট সব সময় বিমানঘাঁটির সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে চলতে পারবেন না এটাই স্বাভাবিক। ভারতীয় বিমানবহরের পাইলটরা মাটি থেকে আসা নির্দেশের উপর ততটা নির্ভরশীল নন, তা বালাকোট পরবর্তী আকাশযুদ্ধের মহড়া থেকে অনেকটাই স্পষ্ট। অর্থাৎ, পাইলটদের প্রতিকূল পরিবেশে অপারেশন চালানোর ক্ষেত্রে ভারতীয় বৈমানিকদের এগিয়ে রেখেছে এই রিপোর্ট। ওই রিপোর্টে ভারতীয় বিমান বাহিনীর এক শীর্ষ আধিকারিককে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে- ফাইবার গ্লাস শিট এবং দ্রুত জমাট বাঁধতে পারে এমন রিইনফোর্স কংক্রিটের সাহায্যে যে কোনো ক্ষতিগ্রস্ত রানওয়েকে ৬ ঘণ্টার মধ্যে ফের কর্মক্ষম করে তোলার প্রযুক্তি রয়েছে ভারতের হাতে। ফলে ভারতীয় বিমানবহরকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা কঠিন।
নৌবাহিনী: প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার লড়াইয়ে সরাসরি যুক্ত না হলেও, চীনের সঙ্গে সম্মুখ সমর হলে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে ভারতীয় নৌবহরও। ১৩৭টি যুদ্ধজাহাজ এবং ২৯১টি বিমান রয়েছে ভারতীয় নৌবহরের অধীনে। রয়েছে পরমাণু জ্বালানিতে চলা সাবমেরিনও। সিএনএএস’র দাবি, সমপ্রতি ভারত মহাসাগরে শক্তি বৃদ্ধি করছে চীনা নৌবহর। তবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একাধিক চুক্তির ফলে ভারতীয় নৌবহর ভারত মহাসাগরে যে কোনো যুদ্ধ জাহাজের গতিবিধির উপর নজর রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উপগ্রহ চিত্র হাতে পায়। ফলে ভারত মহাসাগরে ভারতীয় নৌবহরেরও ভাল উপস্থিতি রয়েছে। সেই সঙ্গে দক্ষিণ চীন সাগরে ভারতীয় বাহিনীর উপস্থিতি অনেকাংশেই চীনের সমুদ্র বাণিজ্যে ব্যাঘাত তৈরি করতে পারে। কয়েক দিন আগে ফোর্বস পত্রিকায় প্রকাশিত একটি নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারত-চীন উত্তাপ বৃদ্ধির মধ্যেই ভারতীয় নৌবহর নীরবে স্ট্র্যাটেজিক লোকেশনে শক্তি বৃদ্ধি করছে। আয়তনে চীনা নৌবহর ভারতের তুলনায় অনেক বড় হলেও, আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জকে কেন্দ্র করে ভারতীয় নৌবহর সঙ্কীর্ণ মালাক্কা প্রণালীতে নজরদারি বাড়িয়েছে। মালাক্কা প্রণালী কৌশলগত দিক থেকে চীনা নৌবহরের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা। অন্যদিকে চীনা নৌবহরের বড় অংশই ব্যস্ত দক্ষিণ চীন সাগরে, যেখানে চীনের বন্ধু রাষ্ট্রের থেকে শত্রুর সংখ্যা বেশি। ভারত-চীন দুই দেশই পরমাণু শক্তিধর: বেলফার সেন্টারের রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতীয় ভূ-খণ্ডের বিভিন্ন প্রান্তে চীনের অন্তত ১০৪টি পরমাণু বোমাবাহী ক্ষেপণাস্ত্র বা মিসাইল আছড়ে পড়তে পারে। চীনের হাতে দূরপাল্লা থেকে শুরু করে মাঝারি এবং স্বল্প পাল্লার ভূমি থেকে ভূমি, সাগর থেকে ভূমি, বা আকাশ থেকে ভূমি- নানা ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।
অন্যদিকে ভারতের হাতেও রয়েছে বিভিন্ন পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। কিন্তু গবেষকদের দাবি, সেগুলোর বেশির ভাগটাই পাকিস্তানমুখী এবং অবস্থানগতভাবে পাকিস্তানের কাছাকাছি। বেলফারের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ১০টি অগ্নি-৩ মিসাইল চীনের মূল ভূ-খণ্ডের যে কোনো অংশে আঘাত হানতে পারে। আরো ৮টি অগ্নি-২ ক্ষেপণাস্ত্র মধ্য চীন পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। অর্থাৎ ক্ষেপণাস্ত্র সম্ভারের ক্ষেত্রে চীনকে এগিয়ে রেখেছেন ওই দুই গবেষক। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের পরমাণু বোমা বহনে সক্ষম দুই স্কোয়াড্রন জাগুয়ার আইএস ফাইটার এবং মিরাজ ২০০০ এইচ যুদ্ধবিমান তিব্বত পর্যন্ত সফল অপারেশন চালাতে সক্ষম হলেও, চীনের মূল ভূ-খণ্ডে ঢুকে অপারেশন চালাতে পারবে না। তবে সেই সঙ্গে গবেষকরা এটাও উল্লেখ করেছেন যে, ভারতীয় বাহিনী তাদের ক্ষেপণাস্ত্র সম্ভার আরো বিভিন্ন জায়গায় রেখেছে, যা প্রকাশ্যে আসেনি। সেখান থেকে চীনকে আকস্মিক আঘাত হানার ক্ষমতা রয়েছে ভারতের। দু’দেশের সমর সম্ভারের এই তুলনামূলক বিচারে, বেলফার এবং সিএনএএস রিপোর্ট- দুই জায়গাতেই উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের জিডিপি’র হিসাবে চীনের সামরিক বাহিনীর জন্য বরাদ্দ ভারতের থেকে বেশি। সেনা সংখ্যায় চীন পৃথিবীর এক নম্বরে, ভারত তৃতীয় বা চতুর্থ স্থানে। কিন্তু চীনের সামরিক অভিমুখ বা ফোকাস মূলত আমেরিকা এবং তার বন্ধু দেশগুলোকে ঘিরে। তার বাইরে এশিয়ার এই সুপার পাওয়ার জাপান, ফিলিপাইন, তাইওয়ান বা রাশিয়ার মোকাবিলায় যতটা সামরিক শক্তি বা সমর সম্ভার তৈরি রেখেছে, ততটা তৈরি নয় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারত সীমান্তে। তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অনেক বিশেষজ্ঞই আর একটা বিষয়ের দিকে আলোকপাত করছেন। তা হলো- এতদিন চীন ভারতের দিকে যতটা নজর রাখছিল, বর্তমানে তা বাড়াচ্ছে। হাডসন ইনস্টিটিউটের একটি সামপ্রতিক সমীক্ষায় ইঙ্গিত, মধ্য এশিয়াতে মার্কিন উপস্থিতি চীনের আশঙ্কার বড় কারণ। আর সেই সঙ্গে ভারত-মার্কিন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক যত বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহযোগিতামূলক হচ্ছে, ততই ভারত সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে উঠছে বেইজিং। কারণ দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের শক্তিবৃদ্ধিতে প্রধান বাধা ভারত। আর তাই ধীরে ধীরে চীনের রণকৌশলে গুরুত্ব বাড়ছে ভারতীয় সীমান্তের। চীনের সেই আশঙ্কার প্রতিফলনই দেখা যাচ্ছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চীনের মনোভাবে। প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে নেপালের সঙ্গে চীনের বন্ধুত্বেও। চীন সম্পর্ক বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ভুটানের সঙ্গেও।