বেনাপোল দিয়ে ভারতে রফতানি বাণিজ্য বন্ধ

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে প্রায় তিন মাস ধরে রফতানি বাণিজ্য বন্ধ। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার মতো। দফায় দফায় বৈঠক করেও সচল করা সম্ভব হয়নি রফতানি বাণিজ্য। এতে উৎপাদিত পণ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্ম হারিয়ে বাড়ছে বেকারত্বের সংখ্যা।
ব্যবসায়ীর বলছেন, দেশীয় পণ্য রফতানির বড় বাজার প্রতিবেশী দেশ ভারত। রফতানি বন্ধ থাকায় তাদের লোকসানের পাল্লা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এ পথে যেহেতু আমদানি বাণিজ্য শুরু হয়েছে, তাই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আলোচনা হলে রফতানি বাণিজ্যও শুরু হবে। এদিকে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আলোচনা চলছে। আশা করা যাচ্ছে খুব দ্রুত রফতানি বাণিজ্য চালু হবে। জানা গেছে, দেশ থেকে স্থলপথে যে রফতানি বাণিজ্য হয়, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় প্রায় ৭০ শতাংশ হয়ে থাকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। প্রতি বছর এ বন্দর দিয়ে প্রায় আট হাজার কোটি টাকার ৯ হাজার মেট্রিক টন পণ্য ভারতে রফতানি হয়। রফতানি বাণিজ্য বৃদ্ধিতে যেমন মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, তেমনি সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও বাড়ে।
সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ভারত সরকারের লকডাউনের কারণে গত ২২ মার্চ থেকে এ পথে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। এতে বন্দরের দুই পাড়ে প্রবেশের অপেক্ষায় পণ্য নিয়ে আটকা পড়ে কয়েক হাজার পন্যবাহী ট্রাক। ভারতে লকডাউন শিথিল হওয়ার পর দফায় দফায় বৈঠকের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ রোধের নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে গত ৭ জুন ভারতীয় পণ্যের আমদানি শুরু হয়। তবে বাংলাদেশি পণ্যের রফতানি এখনও বন্ধ রয়েছে। রফতানি চালুর বিষয়ে ব্যবসায়ীরা স্থানীয়ভাবে কয়েক দফা চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে ভারতীয়রা এই মুহূর্তে রফতানি পণ্য নিতে চাইছেন না। পণ্য পরিবহনকারী ট্রাক চালকেরা বলছেন, রফতানি বাণিজ্য সচল হবে এমন আসা নিয়ে তারা বন্দরে তিন মাস ধরে অপেক্ষা করছেন। কিন্তু ভারত পণ্য নিচ্ছে না। এতে তাদের থাকা খাওয়া সহ নানান ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আমদানি পণ্য ছাড়করণ প্রতিষ্ঠান সি অ্যান্ড এফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ‘রফতানি বাণিজ্য সচল হবে এমন প্রত্যাশায় বন্দরে তিন মাস ধরে অপেক্ষা করছেন ট্রাক চালকরা। স্থানীয়ভাবে রফতানি বাণিজ্য সচলের বিষয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। কিন্তু ভারতীয়দের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। কখন কীভাবে পণ্য তারা নেবে, এর কোনও আশ্বাসও দিচ্ছে না।’ বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন বলেন, ‘তিন মাস যাবত এ বন্দরে রফতানি বাণিজ্য বন্ধ। এতে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে। স্থানীয়ভাবে একাধিকবার বৈঠক করে রফতানি বাণিজ্য সচলের চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সফলতা আসেনি। আমদানি বাণিজ্য যেহেতু শুরু হয়েছে, রাষ্ট্রীয়ভাবে আলোচনা করলে রফতানি বাণিজ্যও চালু হবে।’
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন, ‘এ বছর ১০ হাজার কোটি টাকার রফতানি বাণিজ্য হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনায় তা থমকে দিয়েছে। রফতানি বাণিজ্য সচলের জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। করোনার মধ্যে বাণিজ্য সচল নিয়ে তারা একটি এসওপি পাঠিয়েছে। সেগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।’ বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার জানান, ‘রফতানি বাণিজ্য সচলের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আলোচনা চলছে। কিছুদিনের মধ্যেই আমদানির পাশাপাশি রফতানি বাণিজ্যও চালু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’ উল্লেখ্য, বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় দেড়শ থেকে ২’শ ট্রাক পণ্য ভারতে রফতানি হয়। রফতানি পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাত দ্রব্য, তৈরি পোশাক, কেমিক্যাল, বসুন্ধরা টিস্যু, চালের কুড়া, মেহেগনী ফল, মাছ ও অক্সিজেনসহ প্রায় ৩০ ধরনের পণ্য রয়েছে।