খুলনায় করোনার মধ‌্যেই নিয়োগ পরীক্ষা

0

খুলনা সংবাদদাতা॥ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জারি করা বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে খুলনায় ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। ৫৪টি পদে লোক নিয়োগ দিতে শনিবার (২১ জুন) দিনভর খুলনা মহানগরীর তিনটি কেন্দ্রে লিখিত এবং দুটি স্থানে ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। রাতেই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মৌখিক পরীক্ষা শেষে ফল প্রকাশ করা হয়।
এদিকে, করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খুলনার সচেতন নাগরিক, চাকরিপ্রত্যাশী ও তাদের অভিভাবকরা। তারা বলেন, যখন মহানগরীসহ খুলনা জেলায় প্রতিদিন করোনা সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে, তখন এ ধরনের পরীক্ষা বা জমায়েত সাধারণ মানুষকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া চাকরিপ্রার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, খুলনা জেলার ৫৪টি ইউনিয়নের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলে সহস্রাধিক প্রার্থী আবেদন করেন। গত ৪ জুন নিয়োগ কমিটির সভায় ২০ জুন লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী শনিবার সকাল ১০টায় খুলনা জিলা স্কুল, সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও খুলনা কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে লিখিত পরীক্ষা, বিকেল ৪টায় নগরীর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল দপ্তরে ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। বিকেল সাড়ে ৪টায় খুলনা জেলা প্রশাসকের দপ্তরে মৌখিক পরীক্ষার সময় দেওয়া হলেও পরে তা সন্ধ্যা ৭টায় নির্ধারণ করা হয়। রাতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৫ জন, নারী কোটায় ৮ জন, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা কোটায় ৫ জন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় একজন, শারীরিক প্রতিবন্ধী কোটায় একজন ও মেধা কোটায় ৩০ জনকে মনোনীত করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রার্থী বলেন, ‘সরকারি চাকরি সোনার হরিণ, তাই বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়েই পরীক্ষা দিতে এসেছি।’ পরীক্ষাকেন্দ্র এলাকায় অভিভাবকরা বিড়ম্বনায় পড়েন। থাকা-খাওয়াসহ নানা বিষয়ে সমস্যায় পড়েন তারা। করোনা সংক্রমণ এড়াতে জেলায় গণপরিবহন চলাচল সীমিত থাকায় পরীক্ষার্থীরা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতেও বিড়ম্বনায় পড়েন। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) খুলনা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের নির্দেশে লকডাউন চলছে। তার মধ্যে এ ধরনের পরীক্ষা নেওয়া ঠিক হয়নি। এতে যারা শহরে এলেন তারা ঝুঁকির মধ্যে পড়লেন। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বাভাবিক সময়ে করা উচিত ছিল। এটি দুঃখজনক।’
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘এখন দুর্যোগ চলছে। এ অবস্থায় এ ধরনের পরীক্ষা গ্রহণ খুব জরুরি বলে মনে হয় না। সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি ভাবা উচিত ছিল। যেখানে স্বাস্থ্য দপ্তর বার বার লকডাউন ও আরো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছে, সেখানে খোদ জেলা প্রশাসনের রাত অবদি নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণ ভালো বার্তা দেবে না।’ খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, ‘খুলনার পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছে। আমরা আরো কঠোর লকডাউনের কথা বলছি। সেখানে এমন পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়টি আমাদের জানা নেই। বিষয়টি করোনা প্রতিরোধ কমিটিকেও জানানো হয়নি।’ খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ‘সকল প্রকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। সরকারও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছু করার নির্দেশনা দিয়েছে।’ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ১১ জুন থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত খুলনা মহানগরী ও সব উপজেলায় দোকানপাট, শপিংমল, যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচলের ওপর বিধি-নিষেধ জারি করা হয়। গত ১০ জুন খুলনার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন এক গণবিজ্ঞপ্তিতে ওই আদেশ জারি করেন।