চীন-ভারতের সংঘাতের প্রভাব নিয়ে যা ভাবছেন কূটনীতিক-বিশ্লেষকরা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ভারতের লাদাখে চীনা ও ভারতীয় সেনাদের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের ঘটনা বাংলাদেশের ওপর প্রচ্ছন্ন প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা-রাজনীতিবিদ-বিশ্লেষকরা। তবে, কেউ কেউ এও মনে করছেন—বাংলাদেশের যে কূটনৈতিক কৌশল, তাতে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। কূটনীতিকরা বলছেন, চীন ও ভারতের সঙ্গে সমান্তরাল সম্পর্ক রাখা সবসময়ই জটিল। অর্থনীতি, রাজনীতি, কূটনীতি—সব দিক দিয়ে। তারা বলছেন, চীন ও ভারতের এই সংঘাত যুদ্ধে রূপ নিলে বাংলাদেশের জন্য পরিস্থিতি যে বেশ জটিল হয়ে পড়বে।
জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব জনাব ওয়ালিউর রহমান বলেন, ‘লাদাখ ইস্যু দক্ষিণ এশিয়ার কূটনীতিতে প্রভাব ফেলবে। ভারতের সঙ্গে আমাদের পরীক্ষিত সুসম্পর্ক রয়েছে। চীনের সঙ্গেও রয়েছে। দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনার সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশে ততটা পড়বে না, যতটা দুই দেশের সীমান্তবর্তী দেশের ওপর পড়বে। তবে, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের একটি বলিষ্ঠ কূটনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে, সে দৃষ্টিকোণ থেকে দুটি দেশই বাংলাদেশকে পরিকল্পনায় রাখবে, এটিই স্বাভাবিক। তাই একটি প্রচ্ছন্ন প্রভাবের বিষয় রয়েছে।’ সাবেক রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব নাসিম ফেরদৌস বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্কে প্রাধান্য দেয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের কূটনীতি বিশেষ এক অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এশীয় অঞ্চলেও ঠিক একই রকম। ভারতের কথা যদি বলি, এক দশক আগেও গুরুত্ব পেতো না, এমন সব ক্ষেত্রেও এখন দুই দেশের সহযোগিতা বিস্তৃত হয়েছে। এ সম্পর্ক অন্যান্য অঞ্চলের দেশের জন্যও একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। আবার চীনও গত কয়েক বছরে আমাদের উন্নয়নে প্রকল্পে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। চীন ও ভারতের মধ্যকার উত্তেজনায় কৌশলগত পররাষ্ট্রনীতির প্রয়োগ এখন আমাদের জন্য জরুরি। যদিও এর উত্তেজনার সরাসরি প্রভাব আমাদের ওপর পড়ার কথা নয়। কিন্তু কূটনৈতিকভাবে একটি চাপে থাকবে বাংলাদেশ।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহা. রুহুল আমীন বলেন, ‘এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টিতে বাংলাদেশ ভালো একটি ভূমিকা রাখতে পারে। সংঘাত নিরসনের জন্য বাংলাদেশের দর্শন থাকতে হবে, প্রয়োগও করতে হবে। কারণ আঞ্চলিক রাজনীতিতে বাংলাদেশ বর্তমানে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ দুই দেশের সমস্যা নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারে। তাহলে দুই দেশই বাংলাদেশকে নিরপেক্ষ বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে আরও ভালোভাবে গ্রহণ করবে।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘‘বাংলাদেশের কূটনীতির মূলমন্ত্র হলো ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে শত্রুতা নয়।’এছাড়া জোট নিরপেক্ষতা, জাতিসংঘের সনদ ও নীতিমালা মেনে চলা, মুসলিম দেশের সাথে সম্পর্ক জোরদার করা বাংলাদেশের কূটনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আমরা লাখাদ সংঘাতের কারণে দুই দেশের সম্পর্কে কোনো রকম প্রভাব পড়বে বলে মনে করছি না।’’ তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা আমাদের কূটনৈতিক মূলমন্ত্র হিসেবেই কাজ করবো।