কয়রার ৪ ইউনিয়ন এখনও ভাসছে লোনা পানিতে

0

কয়রা সংবাদদাতা॥ সুপার সাইক্লোন আম্ফানের আঘাতের পর একমাস পেরিয়ে গেলেও খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার চারটি ইউনিয়নের মানুষ এখনও লবণ পানিতে ভাসছেন। গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে দেওয়া বাঁধ টিকে আছে কোনো রকমে। চলমান বর্ষা মৌসুমে আবারও জোয়ারের পানিতে বাঁধটি ধসে যাওয়ার আশংকা স্থানীয়দের। তাই দাবি উঠেছে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের। ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধগুলো নতুনভাবে নির্মাণ করা না হলে লোনা পানিতে চারটি ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক মানুষ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
সূত্র মতে, আম্ফানের আঘাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১৩-১৪/১ ও ১৩-১৪/২ পোল্ডার) আওতাধীন উপজেলার ঘাটাখালি, হরিণখোলা, দশালিয়া, লোকা, রত্না, গাজীপাড়া, হাজতখালি, গোলখালি, আংটিহারা, মেদেরচর, জোড়শিং বেড়িবাঁধ ধসে যায়। পাউবো সূত্র জানায়, কয়রা উপজেলায় ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধ রয়েছে। এরমধ্যে ১৪/১ নম্বর পোল্ডারে ২৭.৩৭ কিলোমিটার ও ১৩/১৪/২ নম্বর পোল্ডারে ৯১.৯৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। গত ২০ মে সুপার সাইক্লোন আম্ফানের তাণ্ডবে ৩৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যায়। এরমধ্যে ১৪/১ নম্বর ও ১৩/১৪/২ পোল্ডারের ২৫টি স্থান ভেঙ্গে ৫.২৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া ১২.৭ কিলোমিটার বাঁধ ধসে যায়। অপরদিকে, ৬৩টি স্থানে আংশিকভাবে ভেঙ্গে ২১.১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে কয়রা উপজেলার সাত ইউনিয়নের মধ্যে কয়রা সদর ইউনিয়ন, উত্তর বেদকাশি, দক্ষিণ বেদকাশি ও মহারাজপুর ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের দেড় লক্ষাধিক মানুষ লবণ পানিতে প্লাবিত হয়। বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে মানুষের বসতবাড়ি, ফসলি জমি, গাছ পালা, গবাদি পশু ও হাঁস মুরগির ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এদিকে, স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এলাকার বিপুলসংখ্যক মানুষ দুই দফা চেষ্টা করার পর কয়রা সদর ইউনিয়নের ঘাটাখালি, দুই নম্বর কয়রা, মহারাজপুরের লোকা, দশালিয়া, উত্তর বেদকাশির, রত্না, গাজীপাড়ার একাংশ, দক্ষিণ বেদকাশির আংটিহারা, গোলখালি, জোড়শিং ও মেদের চরে রিংবাঁধ তৈরি করে লোনা পানি ওঠা-নামা বন্ধ করতে সক্ষম হয়। তবে, এলাকাবাসীর আশংকা দুর্বল রিংবাঁধগুলো মাটি দিয়ে চওড়া ও উঁচু করতে না পারলে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের বড় জোয়ারের পানির চাপে আবারো রিংবাঁধ ভেঙে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
স্থানীয় ঘাটাখালি গ্রামের বাসিন্দা শেখ আফতাব উদ্দিন জানান, সদ্য নির্মিত রিং বাঁধে পর্যাপ্ত মাটি ফেলা দরকার, তা নাহলে জোয়ারের পানিতে যে কোন মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দুই নম্বর কয়রা গ্রামের শাহাবাজ হোসেন বলেন, ‘রিংবাঁধ রক্ষা করতে হলে প্রতিদিন পাঁচ/ছয়শ’ শ্রমিক লাগিয়ে মাটির কাজ করা দরকার। কয়রা সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘দুই নম্বর কয়রা ও ঘাটাখালি রিং বাঁধ রক্ষায় শ্রমিকদের চাল-এর বিনিময়ে কাজ করানো অব্যাহত রয়েছে।’ পাউবোর আমাদী উপ-বিভাগীয় অফিসের সেকশন অফিসার মো. সেলিম মিয়া বলেন, ‘মূল বেড়িবাঁধ নির্মাণ করবে সেনাবাহিনী। আর টেকসই রিংবাঁধ নির্মাণ করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এজন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। অনুমোদন সাপেক্ষে কাজ করা যাবে।’ তবে এখন পাউবোর পক্ষ থেকে রিংবাঁধে বস্তা, দড়ি, পেরেক, বাঁশ প্রভৃতি সরবরাহ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।